শিরোনাম
মো. মামুন ইসলাম
রংপুর, ১০ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস): আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসাবে রংপুর বিভাগে এ পর্যন্ত হস্তান্তরিত নতুন বাড়িগুলো স্পষ্টতই ৫০ হাজার ৯৬২ পুনর্বাসিত পরিবারকে তাদের জীবন পুনর্গঠনে এগিয়ে যেতে দারুণভাবে উজ্জীবিত করেছে। নতুন বাড়িগুলো আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পুনর্বাসিত পরিবারগুলির জন্য আত্ম-মর্যাদাবোধ সৃষ্টি ও ভাগ্য গড়ার নতুন আশা সঞ্চারের পাশাপাশি, আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনে নিজ বাড়িতে সুখে-শান্তিতে বসবাস করে সমৃদ্ধি অর্জনের পথও প্রশস্ত করেছে ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে উপহার হিসেবে আরও ৪ হাজার ৩২টি বাড়ি হস্তান্তরের মাধ্যমে রংপুর বিভাগে দেওয়া মোট বাড়ির সংখ্যা বেড়ে ৫০ হাজার ৯৬২ হয়েছে। উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে কাউকে পিছিয়ে না রেখে সবার আবাস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় জমির মালিকানার দলিলসহ নতুন বাড়ি দেওয়া শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। পুনর্বাসিত ব্যক্তিরা আয়ের জন্য বৃক্ষরোপণ, বসতবাড়ির বাগান, শাকসবজি ও ফলের চাষ, হাঁস-মুরগি, পশুপালন ও মৎস্য চাষ শুরু করেছে এবং তারা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে।
বাসস-এর সাথে আলাপকালে পুনর্বাসিত মানুষ সীমাহীন আনন্দ প্রকাশ করেছেন এবং বাড়ি উপহার দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে আবেগঘন অনুভূতিতে ধন্যবাদ জানান। বুধবার নতুন আবাস পেয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার হরিজন পল্লী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে হরিজন নারী শুমি ও রুমা আবেগ-আপ্লুত হয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। সুমি বলেন, ‘লোকেরা আমাদেরকে ঘৃণার চোখে একটু অন্যভাবে দেখতো। আমি আমার পরিবারের সাথে ভাসমান জীবন যাপন করতাম কারণ আমার থাকার জন্য কোন বাড়ি ছিল না। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে উপহার হিসাবে জমিসহ একটি নতুন বাড়ি পেয়েছি, এখন আমি খুব খুশি।’
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নিয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গাগোড়া গ্রামের বিধবা নাজিরা বেওয়া জানান, বহু বছর অন্যের জমিতে দুর্দশার মধ্যে দিন কাটানোর পর তিনি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন। নাজিরা বলেন,‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে একটি নতুন ঘর দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন, যা আমার জীবনে সুখ ফিরিয়ে এনেছে এবং আমার নিজের বাড়িতে মর্যাদার সাথে জীবনযাপন করার জন্য আত্মবিশ্বাস ও শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছে।’
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কাজীপাড়া এলাকার বিধবা আকলিমা বেগম জানান, তিন মেয়ে রেখে স্বামী মারা যাওয়ায়, গত দুই দশক ধে তাদের অন্যের জমিতে বসবাস করতে হতো । উপজেলার কাজীপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে উপহার হিসেবে নতুন বাড়ি পাওয়ার পর বড় মেয়ের আগে বিয়ে হওয়ায় নতুন বাড়িতে এখন দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি সারা জীবন সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা এবং দরিদ্রদের মুখে হাসি ফোটাতে তাঁর ধারাবাহিক সাফল্যের জন্য দোয়া করব।’
রংপুর সদর উপজেলার সাদ্দ্যাপুস্কোরিনী এলাকার বিধবা নুর বানু জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে জমির মালিকানা দলিলসহ একটি বাড়ি পেয়ে শান্তিতে বসবাসের স্বপ্ন পূরণে তিনি অর্থবহ জীবন খুঁজে পেয়েছেন।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার নরসিংহ গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আব্দুল কাদের মিয়ার ছেলে শাহ আলম, সাইদুল ইসলাম এবং মামুন মিয়াও সম্পূর্ণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী তিন ভাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে উপহার হিসেবে নতুন বাড়ি পেয়েছেন। সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দরিদ্র মা আমাদের জন্ম দিয়েছেন এবং আরেকজন দয়ালু মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ঘর উপহার হিসেবে দিয়ে জীবনকে অর্থবহ করেছেন। আমাদেরকে মর্যাদার সাথে জীবনযাপন করার জন্য নতুন শক্তি ও সম্মান দিয়েছেন।’
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার পশ্চিম বোড়াগাড়ী গ্রামের পুনর্বাসিত তরুণ দম্পতি মাহমুদা আক্তার ও শেখ ফরিদ কয়েক বছর আগে মুজিববর্ষে তাদের একটি বাড়ি উপহার দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মাহমুদা স্মিতহাস্যে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে উপহার হিসেবে বাড়িটি পাওয়ার পর এখন আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। বাড়িটি আমাদের হতাশার অবসান ঘটিয়েছে।’
বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের অন্যতম আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় কাজের মান নিশ্চিত করে জলবায়ু সহনশীল ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। রহমান বলেন, ‘একটি স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে স্থানীয় সরকার বিভাগসমূহ পুনর্বাসিত পরিবারগুলিকে উপার্জনক্ষম কর্মকান্ডের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তুলতে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করছে।’