বাসস
  ১১ আগস্ট ২০২৩, ১১:২০
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৩, ১১:৩০

মেহেরপুরের উপযোগী আবহাওয়ায় গাড়ল পালন করে স্বাবলম্বী চাঁদ আলী

॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ১১ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস): ভেড়ার বৈশিষ্ট্যের একটি জাত গাড়ল। জেলার আবহাওয়া গাড়ল পালন উপযোগী, তাই অনেকেই গাড়ল পালন করে বেশ লাভের মুখ দেখছেন।
সদর উপজেলার রাঁধাকান্তপুর গ্রামের পথে-পথে গাড়ল চলে। দেখা হলো চাঁদ আলী নামের এক গাড়ল পালনকারীর সঙ্গে। তিনি আট বছর ধরে গাড়লের খামার গড়ে তুলেছেন। তার মতো ওই গ্রামে অনেকেই গাড়ল পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ায়, এখন নতুন করে আরো অনেকে গাড়ল পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গাড়ল পালনকারীদের মতে এই প্রাণি পালন করা খুবই লাভজনক। এতে খরচ কম হয়, লাভ হয় বেশি।  মেহেরপুরের আবহাওয়ায় গাড়ল পালনে অপার সম্ভবনা রয়েছে। স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় এর মাংসের চাহিদা ব্যাপক।  
সদর উপজেলার রাঁধাকান্তপুর গ্রামের চাঁদ আলী গাড়ল পালন করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। বছর দশেক আগে দুর্ঘটনায় চাঁদ আলী‘র হাত ভেঙ্গে যায়। স্ত্রী, ১ ছেলে  ১ মেয়ে নিয়ে অভাব অনটনের মধ্যে দিন যাপন করতে থাকেন। ভাঙ্গা হাত নিয়ে শ্রমবিক্রি করতে পারতেন না। আত্বীয়-স্বজনের পরামর্শে গাড়ল পালন করার চিন্তা করেন। সেই চিন্তা থেকেই ৮ বছর আগে ১৪ টি গাড়ল কেনেন। তারপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর এবং  বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে চরিয়ে যা খায় তাতেই গাড়লের খাদ্য চাহিদা পূরণ হয়।  গাড়ল পালনে বাড়তি কোন খাবারের প্রয়োজন পড়ে না। মাঝে-মাঝে বিচালি (খড়) ছোট ছোট করে কেটে লবন দিয়ে দিলেই খেয়ে নেয়। প্রতি বছর তিনি ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার গাড়ল বিক্রি করেন। এছাড়া পরিবারের মাংসের চাহিদা মিটিয়ে কোরবানী দেন প্রতিবছর। প্রতিটি গাড়ল ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। বর্তমানে তার ৪০টির বেশি গাড়ল আছে। গাড়ল পালন করে একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।  মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ৫ লাখ টাকা খরচ করে জামাতাকে বিদেশে পাঠিয়েছে।
চাঁদ আলী বলেন- অভাব অনটনের সংসারে শ্রম বিক্রি করে দিন পার করতাম। হাত ভেঙ্গে যাওয়ার পর কাজ করতে না পেরে দু’বেলা খাবার জোগাড় হতো না। সবার সহযোগিতা আর পরামর্শে গাড়ল পালন করি। প্রতি বছর ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার গাড়ল বিক্রি করি। গাড়ল প্রতিবছর দুইবার বাচ্চা প্রসব করে।
জেলার ঝাউবাড়িয়া, শোলমারি, পিরোজপুর, দারিয়াপুর, গাংনীসহ বিভিন্ন গ্রামে গাড়ল পালন হচ্ছে। অনেক পরিবার গাড়ল পালনে সুখের মুখ দেখছে। মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ গ্রামের গাড়ল পালনকারী মন্টু জানান- চারবছর ধরে তিনি গাড়ল পালন করছেন। গাড়ল পালনে তার পরিবারে সুখের ছায়া নেমে এসেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে ভারতের নাগপুর অঞ্চলের ছোট নাগপুরি জাতের ভেড়ার সঙ্গে আমাদের দেশি ভেড়ার ক্রসব্রিড। এই ক্রসব্রিডের নাম গাড়ল। গাড়ল এবং ভেড়ার সমন্বয়ে জন্ম নেওয়া বাচ্চাকে ক্রসব্রিড বলা হয়েছে। গাড়ল ভেড়ার থেকে বড় হয় এবং এর লেজ লম্বা হয়।
জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার মো. সাইদুর রহমান জানান- মাংসের পুষ্টিগুন ও চাহিদা থাকায় জেলায় দিন-দিন গাড়ল/ভেড়া পালন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে জেলায় ২ হাজার ৮৯০টি গাড়ল/ভেড়া আছে। প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে গাড়ল পালনে পরামর্শ এবং চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।