শিরোনাম
টাঙ্গাইল, ১১ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস): মহান মুক্তিযুদ্ধে জেলার ঐতিহাসিক জাহাজমারা দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন।
১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মারণাস্ত্র, গোলাবারুদ, জ্বালানি ও রসদ নিয়ে সাতটি যুদ্ধজাহাজ নারায়ণগঞ্জ থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু সেগুলোকে আটকে দেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কাদেরিয়া বাহিনীর সাহসী কোম্পানি কমান্ডার হাবিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের সময় টাঙ্গাইলের যমুনা-ধলেশ্বরী নদীপথের মাটিকাটা এলাকায় দায়িত্বরত ছিলেন এই বীর সেনানী।
দূরদর্শী এই সাহসী যোদ্ধা অল্প কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে প্রাণপণ লড়াই করে পাকিস্তানি বাহিনীর দুটি অস্ত্রবোঝাই জাহাজ “এস ইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল সি-৩” এবং “এস টি রাজন” ধ্বংস করে দেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এই সাফল্যে উত্তরবঙ্গকে ঘিরে পাকিস্তানিদের পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যায়। জাহাজগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তৎকালীন ২১ কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ হাতে পেয়েছিলেন।
এই যুদ্ধজাহাজ ও অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের জন্য মরিয়া ওঠে পাকিস্তানি বাহিনী। দিশেহারা পাকিস্তানি কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল¬াহ খান নিয়াজি ও ব্রিগেডিয়ার কাদের খানের নেতৃত্বে ৪৭ ব্রিগেড, ৫১ কমান্ডো ব্রিগেড ও বিমান বাহিনীর দুটি এফ-৮৬ জেট বিমান মুক্তিবাহিনীকে চারদিক দিয়ে আক্রমণ করে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানের সাহসী নেতৃত্ব পাকিস্তানি বাহিনীকে আবারও পিছু হটতে বাধ্য করে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে কমান্ডার হাবিবুর রহমানের বলিষ্ঠ সাহসিকতা ও নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘‘বীরবিক্রম’’ ও ‘‘জাহাজমারা হাবিব’’ উপাধিতে ভূষিত করে।
সেই যুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও লেখক জুলফিকার হায়দার বলেন, “জাহাজমারার ঘটনাটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মরণীয় অধ্যায়। ওই দিনের ঘটনায় আমাদের বিজয় ত্বরান্বিত হয়েছে।” জাহাজমারার ঐতিহাসিক যুদ্ধের কথা নতুন প্রজন্মকে জানাতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের সিরাজকান্দিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে অযতœ-অবহেলায় থাকা স্মৃতিস্তম্ভটি দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে আজ মলিন হতে বসেছে। দ্রুত স্মৃতিস্তম্ভটি সংস্কারের দাবি জাহাজমারা হাবিবের স্বজন ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের।
আজ শুক্রবার দিবসটি স্মরণে জাহাজমারা হাবিব পরিবারের পক্ষ থেকে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।