বাসস
  ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১৬:৫২
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৩, ২০:৫৩

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর প্রথম বিক্ষোভকারীদের সমাবেশ আগামীকাল

ঢাকা, ১৪ আগস্ট ২০২৩ (বাসস) : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যার পর বাঙালি জাতি যখন  শোকাচ্ছন্ন, স্তব্ধ ও বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলো, তখন প্রথম কিশোরগঞ্জের একদল অকুতোভয় তরুণ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন । ঐদিনই সকাল সাড়ে নয়টায় তারা কিশোরগঞ্জের স্টেশন রোডে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে রেডিওতে বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর প্রচারের পরপরই তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের সংগঠক সিপিবি সভাপতি প্রয়াত অ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম, বর্তমান জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক, সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান মুক্তু, হালিম দাদ খান, অ্যাডভোকেট অশোক সরকার, রফিকউদ্দিন পনির, গোলাম হায়দার চৌধুরী, গোপাল দাস, আলী আজগর স্বপন, আওয়ামী লীগ নেতা পীযুষ কান্তি সরকার, ডা. এনামুল হক ইদ্রিস, প্রয়াত সেকান্দর আলী, অলোক ভৌমিক, আকবর হোসেন খান, নূরুল হোসেন সবুজ, অরুণ কুমার রাউত, আব্দুল আহাদ, নির্মল চক্রবর্তী, সাইদুর রহমান মানিক, সৈয়দ লিয়াকত আলী বুলবুলসহ ২০জন তরুণ সকাল বেলা জেলা ছাত্র ইউনিয়ন কার্যালয়ে মিলিত হন। তরুণরা দিকনির্দেশনার জন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করেন। পরিস্থিতির আকস্মিকতায় নেতারা সেসময় তরুণদের নিরুৎসাহিত করে নিশ্চুপ থাকতে বলেন।
বিক্ষোভকারীদের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন বাসসকে বলেন, নেতৃবৃন্দের কথা উপেক্ষা করে  সেদিন তরুণ, ছাত্র ও মুক্তিযোদ্ধারা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে সকাল পৌনে ৯টার দিকে “ডালিমের ঘোষণা, মানি না, মানি না”, “বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিণাম, বাংলা হবে ভিয়েতনাম” এবং “মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ ধ্বংস হোক, নিপাত যাক ” শ্লোগান  দিয়ে শহরে ক্ষিপ্রতার সাথে ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।  মিছিলশেষে তারা পরবর্তী কর্মসূচি পরিকল্পনার জন্য কিশোরগঞ্জ ছাত্র ইউনিয়ন কার্যালয়ে এসে মিলিত হন।  এসময় পুলিশের গাড়ি এসে ধাওয়া করলে, তরুণরা ছত্রভঙ্গ হয়ে শহর ত্যাগ করে নিজেদের রক্ষা করেন।  এরপর দীর্ঘদিন তারা আত্মগোপনে ছিলেন।
সেসময়কার ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামান বাসসকে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করার খবর পেয়ে জাতি বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলো। সবার তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। ঐ পরিস্থিতিতে কিশোরগঞ্জের স্টেশন রোডে মুক্তিযোদ্ধাসহ ২০ জন তরুণ তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে।
‘আমরা একাত্তর’র প্রধান সমন্বয়ক হিলাল ফয়েজী জানান, আগামীকাল জাতীয় শোক দিবস। সামাজিক সংগঠন ‘আমরা একাত্তর’ সেই দিনটিকে স্মরণ করে কাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় কিশোরগঞ্জের স্টেশন রোডে রংমহল সিনেমা হলের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করেছে। এই সমাবেশে সেদিনের প্রতিবাদীদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন তারা, মরহুমদের পরিবারের সদস্যরা,  বীর মুক্তিযোদ্ধা, ‘আমরা একাত্তর’র কেন্দ্রীয় ও কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন। সমাবেশ শেষে স্থানীয় শেরাটন হোটেল (রংমহল সিনেমাহলের উল্টোদিকে) মিলনায়তনে এক আলোচনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে জাতির পিতার হত্যাকান্ডের প্রথম প্রতিবাদীদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হবে। সেদিনের সেই ২০ জনের ১১ জন এই সমাবেশে উপস্থিত হয়ে সম্মাননা গ্রহণ করবেন। আর ৯ জনের পরিবারের সদস্যরা তাদের পক্ষে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করবেন। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান শেষে ‘আমরা একাত্তর’ নেতৃবৃন্দ যশোদল বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বাস্তবতায় সেই বিক্ষোভ মিছিলের কোনো ছবি তোলার সুযোগ ছিলো না। কিন্তু পরবর্তীতে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত কিশোরগঞ্জ জেলার ইতিহাস এবং বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হালিম দাদ খান রচিত “বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ” বইতে এ বিষয়ে উল্লেখ আছে। এছাড়াও দেশের বহুল প্রচলিত বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে এবিষয়ে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
ড. মুহম্মদ হাননান রচিত বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস (১৯৭২-২০০০) বইতে এর উল্লেখ রয়েছে। তিনি বাসসকে জানান, এই বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট অশোক সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে ‘আমরা একাত্তর’ এবছর মাসব্যাপি নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর আগে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ১ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং ৫ আগস্ট টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানায়।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বিশ্বব্যাপি আন্দোলন গড়ে তুলতে কাজ করছে ‘আমরা একাত্তর’। পাশাপাশি বাঙালির গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সম্পর্কে তরুণদের উজ্জীবিত করতে কাজ করছে এই সংগঠন।