শিরোনাম
॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ১৮ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস): জেলার দৌলতখান উপজেলায় সাম্প্রতিক সময়ে পরীক্ষামূলকভাবে ঝিনুকে মুক্তা চাষ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
উপজেলার মেদুয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড এলাকায় জাহিদ হোসেন (২৭) ও মো. জিহাদ (২৫) নামের দুই শিক্ষিত যুবক প্রাকৃতিক উপায়ে ব্যাতিক্রম এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২৪ শতাংশ জমির একটি পুকুর লিজ নিয়ে বিগত বছরের ডিসেম্বর মাসের দিকে মাছের পাশাপাশি মুক্তার চাষ আরম্ভ করেন তারা। তাদের এই পুকুরে মুক্তার চাষ দেখতে ভীড় করে বিভিন্ন এলাকার মানুষ। অনেকেই এখন আগ্রহ দেখাচ্ছে এই কার্যক্রম গ্রহণে।
এখন পর্যন্ত মোট ৩৫টি খাঁচায় ১ হাজার ঝিনুকে মুক্তার অবস্থান বেশ ভালো রয়েছে। আর দুই-তিন মাসের মধ্যে চুড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তা আহরণ করা হবে। উদ্যেক্তারা আশা করছেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা লাভ হবে। সব মিলিয়ে মুক্তা চাষে অপার সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে দক্ষিণের জেলা ভোলায়। এই কার্যক্রমকে আরো প্রসারিত করতে চায় স্থানীয় মৎস্য বিভাগ। প্রয়োজনে মুক্তা চাষে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অফিস।
তরুণ উদ্যেক্তা জিহাদ ও জাহিদ জানান, তারা সম্পর্কে দুই জন চাচাতো ভাই। প্রথমে ইউটিউবে মুক্তা চাষের ভিডিও দেখে এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেন। পর্যায়ক্রমে পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরো ধারণা নিয়ে গত বছর থেকে কার্যক্রম শুরু করেন। পুকুর প্রস্তুত করে ১ হাজার জীবন্ত ঝিনুকে প্রতিস্থাপন করা হয় দুই হাজার নিউক্লিায়াস বা ইমেজ মুক্তা। পরে তা ৩৫টি খাচায় পানির নির্দিষ্ট গভীরতায় রেখে দেয়া হয়। এতে তাদের খরচ হয়েছে তাদের ৬৫ হাজার টাকার মত।
তারা জানান, প্রায় ৩ মাস সময় পর ঝিনুকের মধ্যে লেয়ারের সৃষ্টি হয়। যা পরবর্তীতে চকচকে মুক্তায় পরিণত হয়। এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে ১০ মাস থেকে ১২ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। প্রতি ১৫ দিন পর-পর ঝিনুকের খাবারের জন্য পুকুরের পানিতে ইউরিয়া, পটাশ, ড্যাব ও খৈল ছিটিয়ে দিতে হয়। এই কাজে শ্রম বেশি না থাকায় বাড়তি শ্রমিক রাখতে হয়নি তাদের। পরিচর্যার মধ্যে নিবীড় পর্যবেক্ষণটাই বেশি জরুরী বলে জানান তারা।
মুক্তা চাষি মো. জিহাদ জানান, একটা সময় মনে করা হত মুক্তা শুধু গোলাকৃত হয়। কিন্তু এখন বিভিন্ন ডিজাইনের ও রংয়ের মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব। আমরা বিভিন্ন ডিজাইন ঝিনুকের মধ্যে স্থাপন করি। প্রতিটি ঝিনুক থেকে বিভিন্ন আকারের দুইটি করে মুক্তা পাওয়া যাবে। যার প্রত্যেকটির পাইকারী দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। তারা প্রথম পর্যায়ে অনেকটা পরীক্ষামূলকভাবে এই কার্যক্রম শুরু করেন। সফল হলে আরো বৃহৎ পরিসরে মুক্তার চাষ করবেন।
তিনি জানান, তাদের এই পুকুরে বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছেরও চাষ করা হচ্ছে। ১৫ হাজার টাকার মাছ ছেড়েছেন। আশা করছেন প্রায় ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন। ইতোমধ্যে তার কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে সদর উপজেলার শীবপুর ইউনিয়নের রতনপুর বাজারে ঝিলন নামের এক যুবক মুক্তার চাষ শুরু করেছেন ঝিনুকে। আরো অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন মুক্তা চাষে।
স্থানীয় জাবেদ রহমান ও আবুল হাসনাত বলেন, ঝিনুকের মধ্যে মুক্তার চাষ করা যায় এটা তারা ভাবতে পারেনি। কিন্তু এখানে এমন কার্যক্রম শুরু হওয়ায় তারাসহ অনেকেই দেখতে আসছেন। তাই তারা আগামীতে মুক্তার চাষে আগ্রহের কথা বলেন।
দৌলতখান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম খান জানান, ঝিনুকে মুক্তার চাষ দুই যুবকের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমরা তাদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তাদের যদি কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, উপজেলা পরিষদ তা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্ল্যাহ বাসস’কে বলেন, পুকুরে মাছের পাশাপাশি মুক্তা চাষ অবশ্যই ভালো উদ্যেগ। ভোলায় এই প্রথম দৌলতখান উপজেলায় এটি চালু হয়েছে। এতে করে অনেক বেশি লাভের সুযোগ থাকছে। এই কার্যক্রমকে আরো প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। যারা মুক্তার চাষ করছেন বা আগ্রহী রয়েছেন তাদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।