বাসস
  ২১ আগস্ট ২০২৩, ২২:০৯

জিয়া ১৫ আগস্ট ও তারেক ২১ আগস্ট ট্র্যাজেডির মূল হোতা : চট্টগ্রামে জনসভায় আওয়ামী লীগ

চট্টগ্রাম, ২১ আগস্ট ২০২৩ (বাসস) : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ট্যাজেডি একই সূত্রে গাঁথা। ১৫ আগস্টের মূল হোতা ও পরিকল্পনাকারী স্বৈরাশাসক জিয়া এবং ২১ আগস্টের পরিকল্পনাকারী ও মূল হোতা জিয়াউর রহমানের কুসন্তান তারেক জিয়া। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামাত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ পরিকল্পনায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টায় পরিকল্পিত বোমা হামলার ১৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামে আয়োজিত দু’টি বিশাল জনসমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জেলা পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ১৫ আগস্টের অসমাপ্ত এসাইনমেন্ট বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনাকে হত্যা করাও ছিল। কিন্তু তা আল্লাহর রহমতে সম্ভব হয়নি। এই অসমাপ্ত এসাইনমেন্ট বাস্তবায়ন করতে তারেক জিয়া শেখ হাসিনাকে হত্যা করার মূল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। এটা বিচারে আইনগতভাবে প্রমাণিত একটি সত্য। বিএনপি হত্যাকারীর দল এবং একাত্তরের পরাজিত অশুভ শক্তির প্রতিভূ। এই অশুভ শক্তিকে প্রতিরোধ করতেই আজ সমগ্র বাংলাদেশে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বিদ্যমান। তাই যারা আরেকটি ১৫ আগস্ট সৃষ্টি করতে চায়, তাদেরকে ৭১-এর রণাঙ্গণের মতই পরাজিত করার মানসিকতা নিয়ে রাজপথে আওয়ামী লীগ লড়াই করেছে, করছে এবং করবেই।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু উদারতা দেখিয়েছিলেন বলে কিছু পাপবিদ্ধ যুদ্ধাপরাধী ছাড় পেয়েছিল। তিনি মনে করেছিলেন, এরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবেন। কিন্তু তা হয়নি। কুকুরের লেজ বাঁকাই থাকে। সাপের বিষ নামানো না হলে আবার ছোবল দেবে। তাই তাদের থেকে সাবধান এবং সতর্ক থাকতে হবে। এই মানসিকতা নিয়েই আমরা রাজপথে আছি এবং লড়বো। ক্ষমতায় আছি বা না আছি - এটা বড় কথা নয়, কিন্তু এই দেশকে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের মুরুব্বিদের হাতে তুলে দিতে পারি না। কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতির উত্তরাধিকার। অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ আমাদের অঙ্গিকার। আমরা ধর্ম-কর্ম ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমাদের লক্ষ্য সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। এই সমৃদ্ধ বাংলাদেশে বিনির্মাণে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে তার কর্মীর হাতিয়ার।
জনসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, স্বৈরাশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে এদেশে হত্যা-কু রাজনীতির সূচনা হয়েছিল। তা অব্যাহত রেখেছিলেন স্বৈরাশাসক এরশাদ এবং জিয়াউর রহমান পতœী খালেদা জিয়া। এসময় হাওয়া ভবনের দুর্নীতি স্পষ্ট হয়ে উঠে। একজন তারেক জিয়া নামক কুলাঙ্গার হাওয়া ভবন থেকে রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রিত করেছিল। সেই অবস্থা থেকে শেখ হাসিনা জাতিকে গণতন্ত্রের মুক্তি ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই শেখ হাসিনা কমপক্ষে ২১ বার হত্যার টার্গেট হয়েছিলেন। আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে আছেন এবং তাকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। আমরা কেউ দলের জন্য অপরিহার্য নই, কিন্তু শেখ হাসিনা বাঙালি, বাংলাদেশ ও দলের জন্য অপরিহার্য।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় জনসমাবেশের শুরুতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সংঘটিত গ্রেনেড হামলায় নিহত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা বেগম আইভি রহমানসহ ২৪ জন শহীদের রুহের মাগফেরাত কামনায় ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয় এবং যারা অসুস্থ আছেন তাদের আশু রোগমুক্তি কামনা করা হয়।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আলহাজ নঈম উদ্দীন চৌধুরী, আলহাজ খোরশেদ আলম সুজন, সিডিএ চেয়ারম্যান এম. জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ এমপি, সম্পাদকম-লীর সদস্য হাসান মাহমুদ শমসের, হাজী মো. হোসেন, মো. আবু তাহের, নির্বাহী সদস্য আলহাজ পেয়ার মোহাম্মদ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, গোলাম মো. জোবায়ের, দিদারুল আলম মাসুম, ইউনিট আওয়ামী লীগের এসএ মুরাদ, মো. সেলিম, মো. নাঈম, আবুল মনছুর চৌধুরী খোকন প্রমুখ।
এদিকে, দোস্ত বিল্ডিং চত্বরে আজ বিকেলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসে প্রতিবাদী বিক্ষোভ মিছিলোত্তর বিশাল সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম বলেছেন, জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসবাদীদের কোন ধর্ম নেই, তাদের একমাত্র পরিচয় তারা সমাজের শত্রু, দেশের শত্রু, তারা দুষ্কৃতিকারী। ২১ আগস্টে টার্গেট ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এ ঘটনার মূল হোতা ছিল তারেক জিয়া। তারা মনে করেছিল, শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পারলে এদেশকে পাকিস্তানের ন্যায় একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারবে। আওয়ামী লীগ ২১ আগস্টের হোতাদের রাজপথেই প্রতিহত করবে।
প্রধান বক্তা সংঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ মো আতাউর রহমান বলেন, বিএনপি-জামাতের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ কর্মীরা সদা সতর্ক রয়েছে। সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি এড ফখরুদ্দিন চৌধুরী, মো. আবুল কালাম আজাদ, আবুল কাশেম চিশতি, উপদেষ্টা সদস্য এড এমএ নাসের চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আলাউদ্দিন সাবেরী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক জাফর আহমেদ, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক নাজিম উদ্দিন তালুকদার, বন ও পরিবেশ সম্পাদক আবু তালেব, উপ-দপ্তর সম্পাদক আ স ম ইয়াছিন মাহমুদ, উপ-প্রচার সম্পাদক জেবুন্নেছা জেসী, কার্যনির্বাহী সদস্য ফোরকান উদ্দিন আহমেদ, মো. সেলিম উদ্দিন, গোলাম রব্বানী, হাসিবুন সুহাদ চৌধুরী সাকিব, সহযোগী সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে দিলোয়ারা ইউসুফ, এড মো. শামীম, এড. বাসন্তী প্রভা পালিত, সাদাত আনোয়ার সাদী, হারুন অর রশীদ, রওশন আরা রতœা, সেলিম সাজ্জাদ, নাছির উদ্দিন দিদার, নাছির উদ্দিন রিয়াজ, এড. জুবাঈদা সরোয়ার নিপা, শফিউল আলম, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তানভীর হোসেন তপু, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম প্রমুখ।
সভাশেষে এক বিশাল প্রতিবাদী বিক্ষোভ মিছিল দোস্ত বিল্ডিং চত্বর থেকে শুরু হয়ে স্টেশন রোড, কোতোয়ালী হয়ে পুনরায় দোস্ত বিল্ডিং চত্বরে এসে শেষ হয়।