শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২৯ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস): গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের পুকুরের পাড়ের ২৫০ হেক্টর জমিতে গ্রীস্ম ও বর্ষকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে স্থানীয় কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। উৎপাদিত এসব সবজির মধ্যে রয়েছে ঢ্যাড়শ, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গে, করলা, উচ্ছে, পুঁইশাক, ঘি-কাঞ্চন, ডাটা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া ও শশা। বাজারে এ সময়য়ে সবজির সংকট থাকে। পুকুরের পাড়ে উৎপাদিত সবজি এ সংকট সামাল দিচ্ছে। উৎপাদিত সবজির ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক। পুকুরের পাড়ের এসব সবজি বিক্রি প্রায় শেষের পথে। এখন কৃষক বাড়িতে টমেটোসহ অন্যান্য সবজি ফসলের বীজতলা করছে। পুকুরের পাড়ের সবজি শেষ হলেই সেখানে তারা টমেটেসহ অন্যন্য আগাম শীতের সবজি রোপণ করবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ২১ ইউনিয়নের পুকুরের পাড়ে ২৫০ হেক্টর জমিতে গ্রীস্ম ও বর্ষাকলীন সবজির আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ২০ টন সবজির ফলন পেয়েছেন কৃষক। সেই হিসেবে পুকুরের পাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদিত হয়েছে। গড়ে প্রতি কেজি সবজি কৃষক ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। পুকুরের পাড়ে ২৫০ হেক্টরে কৃষক ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার সবজি ফলিয়েছেন। কৃষকরা জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি টাকা উপার্জন করছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার বলেন, বর্ষায় রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সব জমি পানিতে তলিয়ে যায়। শুধু পুকুরের পাড় চাষাবাদের উপযোগী থাকে। আমাদের এলাকার কৃষকরা এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখেন না। তারা পুকুরের পাড়ে সারা বছর অধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে সবজির আবাদ করেন। এ সবজি বিক্রি করে তারা প্রচুর উপার্জন করেন। সবজি চাষ করে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো আছেন। তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। কৃষকরা প্রচুর পরিশ্রম করে এ এলাকার কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন ।
রঘুনাথপুর গ্রামের সফল কৃষক অপূর্ব বিশ্বাস বলেন, আমি সার বছর পুকুরের ৪০ শতাংশ পাড়ে সবজি আবাদ করি। সবজি চাষ থেকেই বছরে আয় করি অন্তত ৩ লাখ টাকা। এ কাজে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমাকে কৃষি প্রণোদনা, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাই আমি আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করে সমৃদ্ধি অর্জন করেছি। পুকুরে বর্ষাকালে মাছের চাষাবাদ হয়। শুষ্ক মৌসুম এলেই পুকুরের মাছ ধরে বিক্রি করে দেই। এরপর পুকুরে বোরো ধানের চাষ করি। এভাবে সমন্বিতভাবে চাষাবাদ করে আমি ভালো আছি। সন্তানদের স্কুলে পড়াচ্ছি। বাড়ি ঘরের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
একই গ্রামের কৃষক বাপ্পী বিশ্বাস বলেন, আমিও সারা বছর সমন্বিত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করি। পুকুরের পাড়ের গ্রীম্ম -বর্ষার সবজি বিক্রি প্রায় শেষ হয়েছে। বাড়িতে শীতের সবজির বীজতলা দিচ্ছি। ১৫-২০ দিনের মধ্যে পুকুরের পাড়ে টমেটোসহ শীতের আগাম সবজির চাষাবাদ করব। আগাম সবজি থেকে বাড়তি আয় করতে পারব। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমাদের সব ধরণের সহযোগিতা করে আসছে।