শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ৩১ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস): শোকের মাস আগস্টের শেষ দিনেও শোকার্ত মানুষ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন । আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শোকার্ত মানুষ বঙ্গন্ধুর সমাধিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৪৮ তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু করেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন বয়সের মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। শোকার্ত মানুষের শ্রদ্ধা আর শোকাশ্রুতে মহান নেতার সমাধিসৌধ ¯œাত হয়েছে।
এ বছরের আগস্ট মাস জুড়েই বঙ্গবন্ধু সমাধিতে শোকার্ত মানুষের সমাগম ছিল সবচেয়ে বেশি। আগস্টের প্রথম দিন থেকেই বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। এটি শেষ দিন পর্যন্ত অর্থাৎ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। শোকার্ত মানুষ টুঙ্গিপাড়া এসে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শোকাবহ আগস্টের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের কালরাতে ঘাতকের বুলেটে শাহাদত বরণকারীদের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মোনাজাত করেছেন। বঙ্গবন্ধুসহ তাদের জন্য শোকাশ্রুপাত করেছেন। শোকাবহ আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সচিব, বিভিন্ন দপ্তর, বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এছাড়া রাজনৈতিক সমাজিক, সাংস্কৃতিক, শ্রমজীবী, পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে মাস ব্যাপী বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।
কক্সবাজারের প্রবীণ আওয়ামী লীগ কর্মী মোজাম্মেল হোসেন (৭০) বলেন, টুঙ্গিপাড়া আমাদের চেতনা ও আদর্শের জায়গা। এখানে আসলে আমরা বঙ্গবন্ধুর পরশ পাই। পিতা এখানেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। এখানেই ঘুমিয়ে আছেন। তাই টুঙ্গিপাড়া আমাদের তীর্থ। শোকের মাসে টুঙ্গিপাড়া এসে শোকাবহ পরিবেশে পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। তার জন্য দোয়া-মোনাজাত করেছি। আল্লাহর কাছে কেঁদেছি। ১৫ আগস্টের বিয়োগাতœক ঘটনা কারবালার ঘটনাকেও হার মানিয়েছে। তাই বিদেশে পলাতক খুঁনীদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে এসে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।
পাবনার ঈশ্বদীর স্কুল শিক্ষক মোতাহার মোল্লা (৫৫) বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি আদর্শের নাম। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। এটিকে বিচ্ছিন্ন করা যায়না। খুঁনীরা বঙ্গবন্ধুকে টুঙ্গিপাড়ার প্রত্যন্ত গ্রামে কবর দিয়ে তাকে চিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু খুঁনীদের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে চিরন্তন বঙ্গবন্ধু আরো সজিব। তিনি আমাদের প্রতিটি লড়াই সংগ্রামে পথ দেখান। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সহস যোগান। বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন চিরন্তন প্রেরণার উৎস হয়ে। তাই শোকের মাসে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করতে অনুপ্রেরণা নিয়েছি। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করব বঙ্গবন্ধুর ৪৮ তম শাহাদত বার্ষিকীতে এটাই আমদের অঙ্গীকার।
বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধের কিউটের মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করে। ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে পিতা মাতার কবরের পাশে টুঙ্গিপাড়ায় সমাহিত করা হয়। ২০০১ সালের ১০ জানুয়ারি টুঙ্গিপাড়ায় নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করতে বিদেশসহ দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন আসেন। এ বছর শোকের মাসে টুঙ্গিপাড়ায় সবচেয়ে বেশি মানুষের সমাগম হয়েছে। তারা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে বিন¤্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা নওয়াব আলী বলেন, এ মাসে গড়ে প্রতিদিন ১ শ’ সংগঠন বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন মন্ত্রী, এমপি, সচিব, বিচারপতি, সিটি কর্পোরেশন মেয়র, জেলা পরিষদের প্রশাসক, বিভিন্ন দপ্তর, বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শোকের সাম আগস্টে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এই মাসের ছুটির দিন গুলোতে শোকার্ত মানুষ টুঙ্গিপাড়ায় বেশি এসেছেন। প্রিয় নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ফাতেহা পাঠ করে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত করেছেন। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর জন্য অশ্রুপাত করেছেন। তদের বিন¤্র শ্রদ্ধা ও চোখের অশ্রুতে বঙ্গবন্ধু সিক্ত হয়েছেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাবুল শেখ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস। তিনি টুঙ্গিপাড়ার সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম গ্রহণকরে আমাদের গর্বিত করেছেন। ঘাতকরা ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু নিথর মৃত্যুহীন দেহ নিয়ে টুঙ্গিপাড়ার প্রিয় জন্ম মাটিতেই ফিরে আসেন। তার সমাধিসৌধটি এখন বাঙ্গালী জাতির অমর সমাধিসৌধ। টুঙ্গিপাড়া এখন বাঙ্গালী জাতির তীর্থ। প্রিয় নেতার প্রতি এ বছরের শেকের মাসে সবেচেয়ে বেশি মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। মৃত্যুর ৪৮ বছরপরও বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জিব। এটি এখন ধ্রুব সত্য।