বাসস
  ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:১৪

গোপালগঞ্জে ভাসমান বেডে সমজি চাষে প্রদীপের বাজিমাত

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ, ২ সেপ্টেম্বর,২০২৩ (বাসস): ৬ বছরের প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে আসেন আত্মপ্রত্যয়ী প্রদীপ বিশ^াস। শুরু করেন ভাসমান বেডে সবজি চাষ। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে পেয়েছেন সাফল্য। এ বছর তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কচুরিপানা দিয়ে ৯০ টি ভাসমান বেড করেছেন। এরমধ্যে ২২টিতে লাল শাক ও ঢ্যাড়শের আবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে ২২টি বেড থেকে ২০ হাজার টাকার লাল শাক বিক্রি করেছেন। ওই বেড গুলোর ঢ্যাড়শ গাছে ঢ্যাড়শ ফলতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহ থেকে তিনি ঢ্যাড়শ বিক্রি করতে পারবেন। বাকী ৬৮টি বেডে তিনি সাম্মাম, পেঁয়াজ ও মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করবেন। ৯০টি বেড থেকে তিনি প্রায় ৫ লাখ টাকা আয়ের প্রত্যাশা করছেন।
এতক্ষণ বলছিলাম ভাসমান বেডে সফল সবজি চাষি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের ছিলনা গ্রামের প্রদীপ বিশ^াসের (৪৫) কথা ।
প্রদীপ বিশ^াস ২০০৮ সালে দুবাই যান। সেখানে তিনি কনস্ট্রাকশন কাজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এ কাজ তার ভালো  লাগেনি। তাই তিনি  দেশে ফিরে নিজে কিছু করার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করেন। ২০১৪ প্রদীপ দেশে ফিরে আসেন। শুরু করেন কচুরিপানার  ভাসামান বেডে সবজি চাষ। এতে তিনি ব্যাপক সাফল্য পান। এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাসমান বেডে সবজি এবং মসলা চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করণ প্রকল্পের আওতায় ৯০টি বেডে সবজির চাষ করছেন।
সরেজমিনে  প্রদীপের ভাসমান বেডে সবজি চাষ এলাকায় গিয়ে দেখাগেছে, পানির ওপরে তার  ভাসমান বেডগুলো সারিবদ্ধভাবে ভেসে রয়েছে। বোডগুলো জলাশয়ে অনন্য মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। সেখানে  এখন শুধু লাল আর সবুজের সমারোহ  । দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।
আত্মপ্রত্যয়ী প্রদীপ বিশ^াস বলেন, ২০১৪ সালে বিদেশ থেকে ফিরে ৯ বছর ধরে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করছি। এ পদ্ধতির চাষে রাসায়নিক সারা বা কীট নাশক ব্যাহার করা হয় না।তাই ভাসমান বেডের সবজি সুস্বাদু, বিষমুক্ত ও মানব দেহের জন্য নিরাপদ। বর্ষার সময় বাজারে সবজির আমদানী কমে যায়। এ সবজির চাষাবাদ সম্প্রসারণ করে  বাজারের সবজির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এছাড়া  বাজারে এ সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এ সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হয়।
ওই কৃষক আরো বলেন, সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাসমান বেডে সবজি এবং মসলা চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করণ প্রকল্পের আওতায় এ বছর ৯০টি বেডে করেছি। এখানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমাকে বেড তৈরির সব খরচ দিয়েছে। সাথে ট্রে, জাল, বাঁশ, বীজ সংরক্ষণের কৌটা, ৮ প্রকার সবজি বীজ বিনা মূল্যে দিয়েছে। আমি ইতিমধ্যে ২২টি বেডে লাল শাক ও ঢ্যাড়শ রোপণ করেছি। এখান থেকে ২০ হাজার টাকার লাল শাক বিক্রি করেছি। ঢ্যাড়শ গাছ বড় হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে ঢ্যাড়শ বিক্রি করতে পারব। বাকী ৬৮টি বেডে সাম্মাম, পেঁয়াজ ও মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করব। এসব চাষাবাদের সব খরচ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিয়েছে। তাই এখান থেকে ৫ লাখ টাকা আয়ের প্রত্যাশা করছি।
ওই কৃষক আরো বলেন, বছরের ৭ মাস আমাদের জমি জলমগ্ন থাকে। এখানে কোন ফসল হয় না। জলমগ্ন জমি সর্বোচ্চ ব্যবহার করে, ৭ মাস ভাসমান বেডে আমি সবজি আবাদ করি। আমার দেখাদেখি অনেকেই এ পদ্ধতির চাষাবাদ শুরু করেছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার বলেন, প্রদীপ বিশ^াস অত্যন্ত পরিশ্রমী ও মেধাবী কৃষক। তিনি মেধা ও শ্রমকে যুগলবন্দী করে ভাসমান বেডে সবজি চাষাবাদে সাফল্য পেয়েছেন। তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাকে অনেকেই অনুকরণ করছেন।
ভাসমান বেডে সবজি এবং মসলা চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. বিজয় কৃষ্ণ বিশ^াস বলেন, আমরা জলাবদ্ধ আনাবাদি জমি চাষবাদের আওতায় এনে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছি। জলাবদ্ধ জমিতে ভাসমান বেড ও ডালি পদ্ধতিতে কৃষকদের দিয়ে সবজি চাষাবাদ করাচ্ছি । এ পদ্ধতির চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারছি। এটি সম্প্রসারিত হলে জলাবদ্ধ এলাকায় সবজি ও মসলার উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।  অনেক জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। সেই সাথে কৃষকও লাভবান হবেন।