বাসস
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:১৬

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে প্রশিক্ষণ নিয়ে ‘রংধনু একাডেমী’ গড়েছেন পপি

ঢাকা, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ (বাসস) : সমাজে এক সময় ছিলেন অবহেলিত। বড় হয়েছেন অভাব-অনটনের  মধ্যে দিয়ে। কিন্তু সমাজের সমালোচনা আর প্রভাশালী ব্যক্তিদের কটুক্তি, পুরুষতান্ত্রিকতা কিছুই ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি সুলতানা পপিকে। নিজেই সৃষ্টি করেছেন নিজের কর্মসংস্থান। নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। গড়ে তুলেছেন ‘রংধনু একাডেমী’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ব্লক এবং বুটিকের।
পপি বলেন আমি নিজে প্রথমে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর মোহাম্মদপুর শাখা হতে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এরপর আবার একই প্রশিক্ষণ মিরপুরের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে নিই। তারপর আমি গড়ে তুলি আমার নিজের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘রংধনু একাডেমী’ যেখানে মহিলাদের ব্লক এবং বুটিকের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যাতে তারাও হয়ে উঠতে পারেন স্বাবলম্বী।
পপি বলেন, প্রশিক্ষণ একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়। কারন এর মাধ্যমে অনেক নতুন কিছু শেখা যায়। আর তাই আমি সুযোগ পেলেই প্রশিক্ষণ নিই। আবার নতুন কিছু দেখলে তা করার চেষ্টা করি। 
তিনি বলেন আমি নিজেকে দিয়েই সবসময় বিচার করি। আমার মতে সব কিছুর জন্য দরকার প্রশিক্ষণ। আর এই প্রশিক্ষণ ছাড়া আমার পক্ষে স্বাবলম্বী হওয়া কখনোই সম্ভব ছিল না।
১৯৮৮ সালে এসএসসি পাশ করার পর একটি এনজিও দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করা বর্তমানে সফল সুলতানা পপি বলেন শুরুতে আমি অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। এমনকি ১৯৯১ সালে আড়ং’এ বিক্রয় কর্মীর কাজও করেছি। কিন্তু আমার সবসময় একটি স্বপ্ন ছিল। সমাজের উন্নয়নের পাশাপাশি এ দেশের নারীদের জন্য কিছু করব।
সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমি প্রশিক্ষণ নিই। পরে স্বামী এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে শুরু করি এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। 
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সফল নারী হিসেবে পুরুষ্কার অর্জনকারী সফল এই নারী বলেন আমি এখন স্বাবলম্বী।
সুলতানা পপির মত আরেক নারী হচ্ছেন আইনুন নাহার। নয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট নাহার বলেন আমিও ২০০৩ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধীনে ময়মনসিং গার্মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার হতে প্রশিক্ষণ নিই। এবং প্রশিক্ষণ শেষে তারা আমাকে একটি সেলাই মেশিন দেয়।
মাসিক মাত্র ১২০০ টাকা উপার্জনকারী তার স্বামীও তাকে বারবার তাগাদা দিতে থাকেন কিছু একটা করার জন্য। সমাজের সব বাধা উপেক্ষা করে নাহার শুরু করে তার গার্মেন্ট ব্যবসা। 
তিনি বলেন বর্তমানে ব্যবসায় আমার মূলধন প্রায় ২০ লাখ টাকা। এছাড়াও প্রতি মাসে আমার কয়েক লাখ টাকা আয় হয়। নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য সফল এই নারীকে ২০১৬ সালে প্রদান করা হয় জাতীয় যুব পদক।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনোয়ারুল করিম বলেন ইতোমধ্যে প্রায় ৪৮ লাখ যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে। তাদের মধ্যে ২০ লাখ নিজেরাই স্বাবলম্বী হয়েছেন।
তিনি বলেন এসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবক-যুবতীদের মধ্যে ৩০ শতাংশই নারী এবং অধিকাংশ প্রশিক্ষণই হচ্ছে নারীদের জন্য। 
বাংলাদেশের যুব সমজাকে বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে তার অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরলসভাবে কাজে করে চলেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ ওমেন চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র প্রেসিডেন্ট সেলিমা আহমেদ বলেন কীভাবে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করতে হবে, কীভাবে তা চালাতে হবে, কীভাবে অর্থেও যোগান করতে হবে এবং বাজারের অবস্থা কি এসব বিষয়ে বিষদভাবে ধারনা থাকতে হবে নারীদের। তাহলেই তারা সফল হতে পারবেন। অন্যথায় একজন নারী কখনো পুরুষদের সাথে এই যুদ্ধে টিকে থাকতে পারবে না।
তিনি বলেন আমাদের প্রতিষ্ঠান অনেক নারীকে কীভাবে আরো বেশী পরিমানে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা যায় ... সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি। ইতোমধ্যে তার  প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশেে প্রায় ৩৫,০০০ নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার আরো প্রায় নয় হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/ফই/মহ/১৪০৫/স্বব