শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস): জেলায় ২ হাজার ১৬০টি পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হয়েছে। এতে আনাবাদী পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনা চাষাবাদের আওতায় এসেছে। এসব বাগান থেকে জেলার অন্তত ২০ হাজার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। বাগানে উৎপাদিত শাক, সবজি ও ফলমূল থেকে তারা পাচ্ছেন পুষ্টি। পারিবারিক পুষ্টি বাগানের বাড়তি শাক, সবজি ও ফলমূল বিক্রি করে মিলছে অর্থ। এসব বাগান থেকে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির পাশাপাশি অর্থ উপার্জিত হওয়ায় বাগান সৃজনকারীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আ. কাদের সরদার বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ১৬০টি পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা ৬৭৯ টি, মুকসুদপুর উপজেলায় ৪৯৪ টি, কাশিয়ানী উপজেলায় ৪৩২টি, কোটালীপাড়া উপজেলায় ৩৭০টি ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ১৮৫টি পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হয়েছে। এখান থেকে জেলার অন্তত ২০ হাজার মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকার প্রধান শেখ হাসিনার নিজ জেলা গোপালগঞ্জে আনাবাদী পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনাসহ প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোত্তম ব্যবহার করে পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বসতবাড়ির আঙ্গিনা, পুকুরপাড়, খালপাড়, বসতবাড়ির আশপাশের স্যাঁতসেতে ছায়াযুক্ত প্রতি ইঞ্চি অব্যহৃত আনাবাদী জমিতে শাক, সবজি ফলমূল উৎপাদিত হচ্ছে। এতে বাগান সৃজনকারীদের পুষ্টিহীনতা দূর হওয়ার পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। এখান থেকে বাগান সৃজনকারী সারাবছরই শাক-সবজি, ফলমূলসহ কিছু না কিছু পাচ্ছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা এ প্রকল্প থেকে বাগান সৃজনকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এছাড়া বীজ, সার ও পারিবারিক পুষ্টি বাগানের উপকরণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা তাদের পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। এখানে উৎপাদিত শাক-সবজি ও ফল বাগান সৃজনকারীরা খেয়ে পারিবারের পুষ্টির চাহিদা পুরণ করছেন। বাড়তি সবজি বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদীঘলিয়া গ্রামের মাহমুদা বেগম (৩৫) বলেন, বাড়ির আঙ্গিনা আগে পতিত পড়ে ছিল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বীজ, সার ও অন্যন্য উপকর পেয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান করেছি। এখানে শাক-সবজি ও ফল উৎপাদিত হচ্ছে। এগুলো নিজেরা খাচ্ছি। আত্মীয় স্বজনদের দিচ্ছি। বাড়তি শাক সবজি বাজারে বিক্রি করে অর্থ পাচ্ছি। এতে আমি খুবই খুশি। এ বাগান স্থাপনের আগে প্রশিক্ষণ পেয়েছি। বাগান পরিচর্যাসহ সব পরামর্শ কৃষি বিভাগের কর্মীরা বাড়িতে এসে দিচ্ছেন। তাই বাগান করে এটি সারাবছর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে।
কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের মাছপাড়া গ্রামের দীপক সরকার (৪৫) বলেন, আমাদের উপজেলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা। আমাদের গ্রামে উচু জমির বড় অভাব। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার আহবানে খাল পাড়ের জমিতে পারিবারিক পুষ্টিবাগান করেছি। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রতি ইঞ্চি জমি সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করেছি। আমাদের গ্রামের সবাই পুকুরপাড়, বসতবাড়ির আঙ্গিনা ও বাড়ির স্যাঁতসেতে ছায়াযুক্ত জায়গায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান করেছেন। আমরা এসব বাগান থেকে সুফল পাচ্ছি।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের গৃহবধূ মিতা নূর বেগম (৩০) বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। পাবিরারিক পুষ্টিবাগান প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অক্ষরে-অক্ষরে পালন করতে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় পুষ্টিবাগান করেছি। এখানে এখন শাক-সবজি ও ফলের সমারোহ। আঙ্গিনার নিজের হাতের সবজি বাগান দেখলে মনভরে যাচ্ছে। এখান থেকে পুষ্টি পাচ্ছি। আমার বাগান দেখে অনেকেই এ বাগান করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। আগামীতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতা ছাড়াই টুঙ্গিপাড়ায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান ব্যক্তি উদ্যোগে সম্প্রসারিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। পরিবারের জন্য কল্যাণমুখী এ উদ্ভাবনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।