বাসস
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:৩৪

কৃষিকে অনুকরণীয় বাণিজ্যিক করেছেন গোপালগঞ্জের সফল কৃষক আয়ুব আলী

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার এক অনুকরণীয় আদর্শ বাণিজ্যিক কৃষক এখন মো. আয়ুব আলী শেখ (৫৫)। তিনি খোরপোষের কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিণত করেছেন।
প্রথমে মাত্র ৪০ শতাংশ জমি থেকে তিনি বছরে ৬ লাখ টাকা আয় করেন। তিনি ওই জমিতে বছরে ফল, সবজিসহ তিনটি ফসলের চাষাবাদ করেন। গড়ে প্রতিটি ফসল থেকে তিনি ২ লাখ টাকা করে আয় করেন। কৃষিকাজ করেই তিনি আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছেন।
আয়ুব আলী গোপালগঞ্জর সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের চরগোবরা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ৪ বছর প্রবাস জীবন কটিয়েছেন। তখন থেকেই  তিনি আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠেন। সফল কৃষক হতে হৃদয়ে অদম্য ইচ্ছা পোষন করেন।  দেশে ফিরে এসে ২০০৮ সাল থেকে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে কৃষিকাজ শুরু করেন। কৃষি তাকে সমৃদ্ধি দিয়েছে। তিনি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় বাণিজ্যিক কৃষির প্রকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।  
আয়ুব আলী বলেন, আমি আমার বাড়ি সংলগ্ন ৪০ শতাংশ জমিতে ১ বছরে তিনটি ফসল করি। এরমধ্যে রয়েছে বিদেশী ফল সাম্মাম, বেগুন ও শশা । এসব ফসল আবাদে বছরে আমার ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এখান থেকে আমি কমপক্ষে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার সাম্মাম, বেগুন ও শশা বিক্রি করি। আমি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করি। তাই এসব চাষাবাদে আমার সার, সেচ ও কীটনাশক খরচ কম লাগে। এখানে মালচিং ফিলিং, হলুদ ফেরেমোন ফাঁদ, ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করি। এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রণোদনা, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ পেয়ে আমি এ অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছি।  
আয়ুব আলী বলেন, আমার সাম্মাম চাষ নিয়ে বাসসে প্রতিবেদন প্রকাশের পর এবি ব্যাংক ও বিদেশী একটি সংস্থা আমাকে সহযোগিতা করার জন্য যোগাযোগ করে। আমি এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডির সাথে দেখা করেছি। তারা আমাকে কৃষি কাজে ঋণসহ সব ধরণের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। এ কারণে আমি বিদেশী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করিনি। এবি ব্যাংকের সহযোগিতা পেলে আমি কৃষিকে আরো আধুনিক ও সমৃদ্ধ করতে পারব।
তিনি বলেন, ওই ৪০ শতাংশের পাশাপাশি আরো ২ বিঘা জমিতে আমি সারা বছর শাক সবজির আবাদ করি। চাষাবাদ করে আমি পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ ভাল আছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে কৃষকের আয় দ্বিগুন করে দিতে কৃষিকে বাণিজ্যিকী করণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।  মো. আয়ুব আলী শেখ একজন আদর্শ কৃষক। তিনি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারাবছর ফল ও সবজির চাষ করেন। তিনি ক্ষেতে সারাবছর প্রচুর পরিশ্রম করেন। এসব চাষাবাদ করে তিনি অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন। তিনি খোরপোষের কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিনত করেছেন। বাণিজ্যিক কৃষির ক্ষেত্রে স্থাপন করেছেন অনন্য দৃষ্টান্ত। কৃষিই তাকে সমৃদ্ধির পথ দেখিয়েছে। তাকে অনুকরণ করে এখন অনেকেই আধুনিক চাষাবাদের বাণিজ্যিক কৃষিতে ঝুঁকছেন। তারাও সাফল্যের দেখা পাচ্ছেন। কৃষিকে বাণিজ্যিকী করণের লক্ষ্য পূরণে মো. আয়ুব আলী শেখ অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চর গোবরা গ্রামের কৃষক মো. সিরাজ শেখ বলেন, আমার প্রতিবেশি আয়ুব আলী  শেখ আমার আইকন। আমি তাকে অনুসরণ করে সারাবছর ৩ বিঘা জমিতে বেগুন, শশা, লাউসহ অন্যান্য শাক-সবজির চাষ করি। ৩ বিঘা জমি থেকে বছরে অন্তত ৬ লাখ টাকা আয় করতে পারি।   
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান চৌধূরী টুটুল বলেন, বাণিজ্যিক কৃষির উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন মো. আয়ুব আলী শেখ। তিনি আমার ইউনিয়নের গর্ব। তাকে অনুকরণ করে অনেকেই এখন আধুনিক বাণিজ্যিক কৃষিকাজে ঝুঁকছেন। এটি আমাদের কৃষির জন্য সুসংবাদ।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্বতী বৈরাগী বলেন, আয়ূব আলী শেখ একজন পরিশ্রমী ও স্মার্ট কৃষক। তিনি সব সময় কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করেন। বাণিজ্যিক কৃষির চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খায়। তাই তিনি উচ্চ ফলনশীল শাক, সবজি ও ফলের আবাদ করেন। ক্ষেতে সুষম জৈব, রাসায়নিক সার ও ফেরমেন ফাঁদ ব্যাহার করে পোকা দমন করেন। এ কারণে তারা ফসল উৎপাদনে খরচ কম লাগে। অধিক ফসল উৎপাদন করে তিনি গত ১৫ বছর ধরে লাভবান হয়ে আসছেন।