শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ এ সেøাগানে গোপালগঞ্জে খাদ্যবান্ধব কর্মসচিূ আওতায় ৫১ হাজার ৫২৩ হতদরিদ্র পরিবার পাচ্ছেন স্বল্পমূল্যের খাদ্য সহায়তার চাল।
এ কর্মসূচির আওতায় পরিবার প্রতি ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র পরিবারগুলো খাদ্য সহায়তা পেয়ে তাদের ক্ষুধা নিবারণ করতে পারছেন। এখান থেকে পাচ্ছেন শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
খাদ্য অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুপ্রকাশ চাকমা বলেন, জাতীয় খাদ্য নীতিতে সকল সময়ে দেশের সকল মানুষের জন্য নির্ভরযোগ্য খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ঠে (এসডিজি) নো-পোভারটি ও জিরো হাঙ্গার অর্জনের প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে। তাই ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দারিদ্র দূরীকরণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে। এ লক্ষ্য, প্রত্যয় ও অভিপ্রায় অর্জনের জন্য পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র জনগণকে স্বল্পমূল্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান ও পুষ্টি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থায় খাদ্য বান্ধব কর্মসূটি গ্রহণ করা হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে হতদরিদ্র পরিবারকে শুভেচ্ছা মূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে প্রণীত ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে হতদরিদ্রদের জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্যে কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশস্য নীতিমালা ২০১৬’ সংশোধন করে কার্যক্রমকে আরও সুসংহত এবং সময়োপযোগী করার জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার।
এ নীতিমালা অনুযায়ী মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এ ৫ মাস সরকার এ কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্র পরিবারগুলোকে ২০১৭ সাল থেকে খাদ্যসশ্য সহায়তা প্রদান করে আসছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, গোপালগঞ্জ জেলায় এ কর্মসূচির আওতায় ৫১ হাজার ৫২৩ হতদগরিদ্র পরিবার খাদ্যশস্য সহায়তা পেয়ে আসছে। এরমধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৩ হাজার ৯৬৭ পরিবার, মুকসুদপুরে ১২ হাজার ৫৯২ পরিবার, কাশিয়ানীতে ১১ হাজার ৬৫৩ পরিবার, কোটালীপাড়ায় ৯ হাজার ৪০১ পরিবার ও টুঙ্গিপাড়ায় ৩ হাজার ৯১০ পরিবার এ সুবিধা পাচ্ছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুপ্রকাশ চাকমা আরো বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টেবর মাসের চাল আগস্ট মাসেই আগাম বিতরণ করা হয়েছে। পরিবার প্রতি ৬০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। নভেম্বরের বিতরণের চালও দ্রুত বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান চৌধূরী টুটুল বলেন, মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর,অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের অভাব অনটন থাকে। এসময় তাদের তেমন কোন কাজ থাকে না। তারা বেকার হয়ে পড়েন। তাই মানবতাবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব মানুষের কথা চিন্তা ক্ষুধা নিবারণ ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে ২০১৭ সাল থেকে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি চালু করেছেন। ১৫ টাকা কেজি দরে চাল পেয়ে হতদরিদ্র পরিবারগুলো উপকৃত হচ্ছে। তারা তাদের ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে পারছেন। ক্ষুধায় তাদের কষ্ট পেতে হচ্ছে না।
এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী দিনমজুর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার হরিদাসপুর ইউনিয়নের ভেড়ার বাজারের বাসিন্দা আবুল হাসান (৬০) বলেন, অভাবের ৫ মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নামমাত্র মূল্যে চাল দেন। এ চাল দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতে পারি। আগে অভাবের ৫ মাসে ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট পেতাম। এখন আর সেই অবস্থা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ টাকা কেজি দরে চালের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাই বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ধন্যবাদ জানাই।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের কালিভিটা গ্রামের কৃষাণী মণিমালা বিশ্বাস (৪৫) বলেন, এ সময়ে আমাদের কোন কাজ থাকে না। তাই সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকত । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করার পর এ অবস্থা এখন আর নেই। গেল আগস্টে মাত্র ৯০০ টাকায় ২ মাসের ৬০ কেজি চাল একসাথে আগাম পেয়েছি। ঘরে এখানো ৪২ কেজি চাল রয়েছে। ঘরে চাল থাকলে ক্ষুধার চিন্তা থাকে না। মনের আনন্দে বিল থেকে শাপলা ও মাছ সংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারছি। এতে সংসারে স্বাচ্ছন্দ এসেছে। ক্ষুধা দূর করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।