শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উন্নয়নে বদলে গেছে সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নিজ জেলা গোপালগঞ্জ। বিগত ১৪ বছরে সড়ক যোগাযোগ, ব্রিজ, কালভার্ট, অবকাঠামোসহ জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়ন করেছে এলজিইডি। মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে।
এতে নি¤œজলাভূমি তথা বিল বেষ্টিত পশ্চাৎপদ গোপালগঞ্জ জেলায় বিশাল সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। জেলার সঙ্গে উপজেলা ও ইউনিয়নের সড়ক সংযোগ স্থাপতি হয়েছে। সহজেই জেলার মানুষ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সবপ্রান্তে যাতায়াত ও উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারছেন। মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। মানুষের আর্থসমাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে।
এলজিইডি’র গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এহসানুল হক বলেন, বিগত ১৪ বছরে গোপালগঞ্জে এলজিইডি ৩ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেছে। এরমধ্যে প্রায় ২ হাজার ২০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ১৪ হাজার ৩২৪ দশমিক ৭ মিটার ব্রিজ কালভার্ট নির্মিত হয়েছে (শতাধিক ব্রিজ-কালভার্ট )। কোটালীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বাপার্ড), গোপালগঞ্জে আধুনিক ইসলামি স্থাপত্য শিল্পের দৃষ্টিনন্দন ঈদগাহ, বঙ্গবন্ধু ও সোহরাওয়ার্দীর অনন্য সাক্ষাতকার স্মৃতিসৌধ, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ল্যান্ডি র্যাম্প, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজরিত স্ট্রিমার ঘাটের সৌন্দর্য বর্ধণ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন সংরক্ষণ, স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধ স্মুতি যাদুঘর নির্মাণ, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ,জেলার ৩৫টি হাট বাজারের উন্নয়ন, পরিবেশ বান্ধব ইউনি ব্লক দিয়ে সড়ক নির্মাণ, শ্মশান, মন্দির, মসজিদ, কবরস্থানের উন্নয়ন করা হয়েছে। জেলার রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, অবকাঠামো নির্মাণসহ সব ক্ষেত্রেই এলজিইডি ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- সাধিত করেছে। এ উন্নয়ন থেকে জেলাবাসী সুফল পাচ্ছেন।
গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগি অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এলজিইডির উন্নয়নে পশ্চাৎপদ গোপালগঞ্জ জেলায় অর্থনৈতিক কর্মকা-ের বিস্তৃতি ঘটেছে। এ উন্নয়নে জেলাবাসীর জীবনমানের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। সড়ক নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হওয়ায় গ্রামে ৩০ হাজার মৎস্য, ১৫ হাজার পোল্টি, ৪ হাজার গরুর খামার ও ২ হাজার কৃষি নির্ভর ফার্মে উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করেছেন। এসব সেক্টরে অন্তত ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানে সৃষ্টি হয়েছে। গড়ে উঠেছে কুটির ও হস্তশিল্প। গ্রাম পর্যায়ে বাজারগুলোর বেচা-কেনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে কৃষক তার উৎপাদিত কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ পণ্য সহজে বাজারজাত করতে পারছেন। তারা এসব পণ্যের ন্যয্য মূল্য পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। সরকারের ব্যাপক উন্নয়নে গ্রামের মানুষ শহরের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেন। তখন তিনি অনুন্নত গোপালগঞ্জ জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ফলে বিগত ১৪ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হওয়ায় এ জেলার পশ্চাৎপদতার চিত্র পাল্টে গেছে।
গোপালগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক নেয়ামতে খোদা ইকবাল হোসেন বলেন, এলজিইডি শুধু রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ও অবকাঠামো নির্মাণ করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ জেলা গর্বিত গোপালগঞ্জকে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়েছে। সৌন্দর্য মন্ডিত করে তুলেছে। তাদের উন্নয়নে গোপালগঞ্জে বাণিজ্যিক কর্মকান্ড প্রসারিত হয়েছে। অর্থনীতিতে গতি এসেছে।
গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি গ্রামের সাংবাদিক ও কবি রবীন্দ্র নাথ অধিকারী বলেন, গোপালগঞ্জ শহর থেকে নৌকায় আমার গ্রামে যেতে দিন কেটে যেতো। এখন মাত্র দু’ঘন্টায় গ্রামে যেতে পারি। আমার গ্রাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকার অন্তর্গত। শেখ হাসিনার গৃহীত উন্নয়ন কর্মকান্ড এলজিইডি বাস্তবায়ন করেছেন। এখন আমরাসহ প্রত্যন্ত কলাবাড়ি গ্রামের মানুষ শহরের সুবিধা ভোগ করছেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কোটালীপাড়া উপজেলার বর্ষাপাড়া সোনার বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নন্দ লাল বিশ^াস বলেন, আমাদের গ্রামে কোন সড়ক যোগাযোগ ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর আমাদের এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এখানে রাস্তাঘাট, বিজ্র, কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এলজিইডি বাজার নির্মাণ করেছে। অবকাঠামগত উন্নয়ন হয়েছে। তাই গোপালপুর থেকে ৩০ মিনিটে টুঙ্গিপাড়া বা কোটালীপাড়া উপজেলা সদরে যাওয়া যায়। ব্যাপক উন্নয়নের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। এখানে বাজার গড়ে উঠেছে কৃষক উৎপাদিত পণ্য সহজে বাজারজাত করতে পারছে। প্রত্যাশিত উন্নয়নে আমরা সুফল পাচ্ছি।
মুকসুদপুর উপজেলার চান্দা বিলের বেদগ্রামের বাসিন্দা মুন্সি আতিয়ার রহমান বলেন, আমাদের চান্দা বিল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। বর্ষায় নৌকায় যাতায়াত করা যেতো। কিন্তু শুস্ক মৌসুমে বিল দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হতো। যাতায়াতের ক্ষেত্রে আমাদের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। মাছসহ অন্যান্য পণ্য এখানেই পচে যেতো। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যে আমাদের দিন কাটতো। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর চান্দা বিলে রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট হয়েছে। শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শ্মশান, কবরস্থানের উন্নয়ন হয়েছে। আমরা বিদ্যুতের সংযোগ পেয়েছি। উন্নয়নের ফলে আমাদের মাছ পচে না। মাছ, উৎপাদিত ফসল, শাপলা সহজেই আমরা বাজারজাত করতে পারি। তাই আয় রোজগার বেড়েছে। আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে।