শিরোনাম
হবিগঞ্জ, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস): হবিগঞ্জে এসএসসি পরীক্ষার্থী মদিনাতুল কুবরা জেরিন হত্যার ঘটনায় জাকির ও নুর হোসেন নামে দুই যুবককে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ সুদীপ্ত দাস এই দন্ডাদেশ প্রদান করেন।
জাকির হোসেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধল গ্রামের দিদার হোসেনের ছেলে এবং নুর হোসেন একই উপজেলার পাটলী গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে। রায় প্রদানকালে আসামী জাকির হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিল। তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানাযায়, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধল গ্রামের আব্দুল হাইয়ের মেয়ে এবং রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২০ সালের এসএসসি পরিক্ষার্থী মদিনাতুল কুবরা জেরিনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল একই গ্রামের জাকির হোসেন। কিন্তু জেরিন তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করতো জাকির। এই বিষয়টি জেরিনে বাবা জাকির হোসেনের পরিবারকে অবগত করেন। এ নিয়ে সালিশ বৈঠকও হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জেরিনকে অপহরণের পরিকল্পনা করে জাকির। ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি সকাল ৮টায় নূর আলম নামে একজনের অটোরিক্সায় উঠে স্কুলে যাচ্ছিল জেরিন। এর আগেই অটোরিক্সাতে ছিল জাকির ও তার সহযোগী। অটোরিক্সাটি জেরিনের স্কুল পেরিয়ে গেলেও তাকে নামিয়ে দেয়া হচ্ছিল না। নামার চেষ্টা করলে জেরিনের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয় অপহরণকারীদের। এক পর্যায়ে সে অটোরিক্সা থেকে লাফ দিলে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ জানুয়ারী সকালে মারা যায় জেরিন। প্রথমে এ ঘটনা দুর্ঘটনা বলে প্রচার করা হলেও পরবর্তীতে পুলিশ এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে।পরবর্তীতে ৩০ জানুয়ারি আদালতের নির্দেশে কবর থেকে জেরিনের লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।
এরআগে ১৯ জানুয়ারী রাতে হবিগঞ্জ সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন জেরিনের বাবা আব্দুল হাই। এ ঘটনায় নুর হোসেন ও জাকিরকে পুলিশ গ্রেফতার করলে তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে। পরে সবুজ নামে আরো এক যুবককে গ্রেফতার করা হলে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হবিগঞ্জ সদর থানার তৎকালীন ওসি মাসুক আলী দন্ডিত দুইজনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। শিশু সবুজ মিয়ার নামে পৃথক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২১ জনের স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করা হয়। শিশু মামলাটি এখনও বিচারাধীন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পিপি এডভোকেট আবুল হাশেম মোল্লা মাসুম ও এডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তারা বলেন, এই রায়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়েছে। ভবিষ্যতে অপরাধীরা এধরনের কাজ করতে সাহস পাবে না।
মামলার বাদী ও স্কুল ছাত্রী জেরিনের পিতা আব্দুল হাই দুই মাস আগে মৃত্যুবরণ করায় তার ভাই আব্দুল মতিন ও আব্দুল মালেক আদালতে উপস্থিত থেকে এই রায় শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা দ্রুত রায় বাস্তবায়নের দাবী জানিয়েছেন।
জেরিনের চাচা আব্দুল মালেক বলেন, জেরিন একজন মেধাবী ছাত্রী ছিল। সে প্রাথমিক ও অস্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। স্কুলে তার রোল নং ছিল ১। সবার প্রত্যাশা ছিল সে এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পাবে। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ নেয়ার আগেই তাকে মেরে ফেলে ঘাতকরা। আর কোন পরিবারকে যেন এ ধরনের কষ্টের মুখোমুখি হতে না হয়।
তিনি বলেন,জেরিনের কষ্টে তার বাবা আব্দুল হাই অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
আসামী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ বলেন, তারা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করবেন।