শিরোনাম
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : ব্রিটিশ সরকারের আমলে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী তিন গুম্বুজওয়ালা জামে মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজও। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের মেহার গ্রামের পাখি ডাকা, ছায়া ঢাকা, অনাবিল সুখ-শান্তির সুশীতল পরিবেশে অবস্থিত মসজিদটি।
মসজিদটির ভেতর ও বাহিরে রয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্য বিভিন্ন কারুকাজ করা। চিনা মাটির প্লেট ভাঙ্গা দ্বারা বিভিন্ন ডিজাইনে মসজিদ টি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটির চারপাশের ওয়ালগুলো তিন ফুট পুরো। যার কারনে শীতকালে মসজিদের ভিতর গরম আর গরমকালে ঠান্ডা অনুভূতি হয়। পুরো মসজিদ টি চুন-শুড়কির তৈরি। ভেতরের মিম্বরটিতে রয়েছে সুনিপুঁণ হাতে নির্মিত অপূর্ব কারুকাজ। যে কেউ একবার দেখলে মন ভরে যায় সৌন্দর্যের কারনে। মসজিদের দেয়ালে নির্মাণ সন লেখা রয়েছে ১৩৩১ বাংলা ও ১৯২৫ ইংরেজি। তৎকালীন সময়ে জমিদারি প্রথা চালু থাকার কারনে উপজেলার মহিচাইল গ্রামের জমিদার শ্রী ভৈরব চন্দ্র সিংহ এর অনুমতিক্রমে মেহার গ্রামের তৎকালীন প্রভাবশালী দানবীর ব্যক্তি হাজী নজর মামুদ এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
হাজী নজর মামুদের নাতী হাজী রমিজ, হাজী আ. খালেক বাসসকে বলেন, মসজিদটি নির্মাণ কাজের সময় জমিদার শ্রী ভৈরব চন্দ্র সিংহ হাতী চড়ে এসে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। জমিদার শ্রী ভৈরব চন্দ্র সিংহ তখন একজন প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন। যার জমিদারির আওতাধীন এলাকা ছিল চান্দিনা, বরুড়া, দেবিদ্বার ও দাউদকান্দি এলাকা নিয়ে। তৎসময়ে জমিদারি প্রথা চালু থাকার কারনে জমিদারের নির্দেশ মোতাবেক সব কাজ হতো। মসজিদটি নজর মামুদ হাজী বাড়ি জামে মসজিদ নামেই পরিচিত। সে সময়ে হাজী নজর মামুদ পায়ে হেঁটে মক্কা গিয়ে হজ করেছেন। তৎসময়ে এলাকায় মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কোন মসজিদ ছিল না। তাই তিনি এলাকার মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য নিজ উদ্যোগে মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির সামনে রেখেছেন মুসুল্লীদের বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচনা করার জন্য বসার স্থান। মসজিদটির দক্ষিণ পাশে মসজিদের মুসুল্লীদের অযুও গোসল করার জন্য তৎসময়ে তিনি ১২০ শতক জায়গায় একটি পুকুর খনন করে যান। যাতে রয়েছে পাকা ঘাট। তিনি মসজিদটি নির্মাণ করে ভবিষ্যতে মসজিদ পরিচালনার জন্য, প্রতি রমজান মাসের কদরের রাতে মসজিদের মুসুল্লীদের খাবার ও মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জ্বিনের খরচসহ অন্যান্য ব্যয়ভার বহন করার জন্য মসজিদের নামে ২৬৪ শতক জায়গা ওয়াকফ করে দিয়ে যান। হাজী নজর মামুদের ২ ছেলে ছিল, আপ্তরদ্দী ও মিছির আলী। হাজী সাহেবের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে মসজিদের সবধরনের দেখাশোনা করতেন। ছেলেদের মৃত্যুর পর তার ছেলের ঘরের নাতীরা মসজিদটি এখন দেখাশোনা করছেন। বর্তমান সময়ে এসে মসজিদের মুসুল্লিদের স্থানসংকুলান না হওয়ায় তার নাতীরা মসজিদের সামনের খালী জায়গাটি মসজিদের সাথে সংযুক্ত করে সম্প্রসারণ করে মুসুল্লীদের নামাজের জায়গা তৈরি করেন। তার পাঁচ নাতীর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। এখন দুই নাতী ও নাতীর ঘরের পতিরা মসজিদটি নিয়মিত দেখাশোনা করছেন।