শিরোনাম
ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির একতাবদ্ধ থাকা প্রয়োজন।
আগামীকাল সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১-এর ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষ্যে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১-এর ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষ্যে আমি সংগঠনটির সকল সদস্যকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনের মূল ‘থিম’ ‘বাঙালি গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।"
তিনি বলেন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ একটি সংগঠন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের বহুমুখী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালরাতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। হত্যাকারী ও তাদের দোসররা ক্ষমতা দখল করে পরিকল্পিতভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত করেছে, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ও ৭ মার্চের ভাষণ তারা নিষিদ্ধ করেছিল। ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া ও গৌরব সমুন্নত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, "১৯৯৬ সালে আমরা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে স্বাবলম্বী করার জন্য ‘কল্যাণ ট্রাস্ট উদ্ধার পরিকল্পনা’ গ্রহণ করি। ২০০০ সাল থেকে প্রথমবারের মত গরিব-দুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০০ টাকা মাসিক ভাতা চালু করি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরপর এ ভাতা মাসিক ৯০০ টাকায় উন্নীত করা হয়। পরবর্তীকালে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মানি ভাতা চালু করি। বর্তমানে তাঁরা মাসিক ২০ হাজার টাকা পাচ্ছেন। আমরা যুদ্ধাহত, খেতাবপ্রাপ্ত ও শহীদ পরিবারবর্গের মাসিক সম্মানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে পুনঃনির্ধারণ করেছি। সম্মানি ভাতার পাশাপাশি শহীদ, যুদ্ধাহত ও ৭ বীরশ্রেষ্ঠ এবং তাঁদের পরিবারকে রেশন সামগ্রীও দেওয়া হচ্ছে। সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে আমরা ২০১৮ সালে নতুন কল্যাণ ট্রাস্ট আইন প্রণয়ন করেছি। ২০২২ সালে আমরা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন পাশ করি। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের জন্য বীরনিবাস প্রকল্প চালু করেছি। রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতাপ্রাপ্ত সকল যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি যানবাহনে সর্বোচ্চ শ্রেণিতে ফ্রি ভ্রমণের ব্যবস্থা নিয়েছি। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণ সর্বোচ্চ ৮ লাখ টাকা অনুদান গ্রহণ করে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সরকারি চাকুরি হতে অবসর গ্রহণের সময়সীমা ৬০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। নির্দিষ্ট গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ৫% কোটার ব্যবস্থা এবং মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু ছাত্র বৃত্তি’ চালু করা হয়েছে।"
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার ও মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করেছি। আমরা বাংলাদেশকে সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে নিচ্ছি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বে আজ ‘রোল মডেল’। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। জিডিপির গড় বৃদ্ধি হয়েছে ৬.৭ শতাংশের বেশি।’
তিনি বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ‘৭১-এর এই জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আরো সমুন্নত হবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যার বিষয়টির আন্তর্জাতিকীকরণ প্রচেষ্টা এগিয়ে যাবে। দেশে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রেও এই সম্মেলন অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।’
প্রধানমন্ত্রী সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ‘৭১-এর ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।