শিরোনাম
জয়পুরহাট, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস): আধুনিকতার ছোঁয়া ও কালের বির্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি। এখন আর নবান্ন উৎসব, পৌষ পার্বন কিংবা বিষেয় কোন অনুষ্ঠানে ঢেঁকিতে আর ধান ও চাল ভানার শব্দ শুনা যায় না। বর্তমান গুটি কয়েক বাড়িতে ঢেঁকি দেখা যায়।
এক সময় জয়পুরহাট জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে প্রতিটি পরিবারেই ধান ভানতে ঢেঁকির প্রচলন ছিল। সেই সময় পরিবারের নারীরা ধান, গম, ভুট্টা,চালসহ বিভিন্ন শষ্য ভাঙ্গার কাজ ঢেঁকিতেই করতেন। বিশেষ করে শবে-ই-বরাত, শবে-ই- কদর , ঈদ, পূজা, নবান্ন উৎসব পৌষ পার্বনসহ বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে পিঠা-পুলি খাওয়ার জন্য অধিকাংশ বাড়িতে ঢেঁকিতে নতুন ধানের চালের আটা তৈরীতে ধুম পরে যেতে। সে সময় গ্রামের বধূদের ধান ভানার গান আর ঢেঁকির ছন্দময় শব্দে চারিদিকে চলতো হৈ চৈ আর আনন্দ ফুর্তি। বাড়িতে চলতো জামাই মেয়ে আড্ডা। তাছাড়া সুদুর অতীতে এলাকার বড় কৃষকেরা আশে পাশের দরিদ্র নারীদের টাকা দিয়ে ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গিয়ে নিতেন । আবার দরিদ্র পরিবার ঢেঁকিতে চাল ভাঙ্গিয়ে হাটে-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। আর ঢেঁকিতে ভাঙ্গা চাল খুব সুস্বাদু ও পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় ওই চালের খুব কদর ছিল। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া এবং কালের বিবর্তনে ধান, গম, ভাঙ্গা যন্ত্রিকতার কারনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ বিলপ্তির পথে। গ্রাম-গঞ্জে গেলে এখনো দুই একটি বাড়িতে ঢেঁকি দেখা গেলেও অদূর ভবিষ্যতে ঢেঁকির প্রচলন থাকবে না বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এলাকার প্রবীন কয়েজন লোকের সঙ্গে কথা বললে ঢেঁকি বিষয়ে বলেন- একসময় এই অঞ্চলে ঢেঁকিতে ধান ভানার ব্যাপক প্রচলন ছিল। বিভিন্ন উৎসবের সময় প্রতিটি বাড়িতে নতুন জামাই মেয়ে ও অথিতিদের উপস্থিতিতে বাড়ি ছিল কোলাহল পূর্ণ। গভীর রাতে ঢেঁকিতে ধান ভানার শব্দ শুনা যেত কিন্তু কালের বির্বতনে ও সময়ের চাহিদা অনুয়ায়ী আধুনিক যন্ত্রপাতির ছোঁয়ায় কালের গর্ভে ঢেঁকি হারিয়ে গেছে। তারপরও সেই ঢেঁকির কদর জয়পুরহাটের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুই একটি বাড়িতে এখনো দেখা যায়। তবে ঢেঁকি ছাঁটা চালে আমিষের যে আধিক্য ছিল যা যন্ত্রে ভাঙ্গা চালে তা আর পাওয়া যায় না।