শিরোনাম
// ইফতেখারুল অনুপম //
টাঙ্গাইল, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস): বঙ্গবন্ধু সেতু-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার এলাকা চারলেনে উন্নীতকরণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বর্তমানে পাশের নিউ ধলেশ্বরী নদী থেকে বালু এনে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। যানজটে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক চারলেন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যানজট, সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি দুর্ঘটনা কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন পর্যন্ত পয়েন্ট ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। মূল কাজ শুরু হতে আরো সময় লাগবে। জানা গেছে, বিগত ১৯৯৬ সালের (২৩ জুন) বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের পর থেকে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২৩টি জেলার যোগাযোগের প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কটি পরিগণিত হয়। এতে মহাসড়কে গাড়ির চাপ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। যানবাহনের তুলনায় মহাসড়কটি সম্প্রসারিত না হওয়ায় প্রায় প্রতিদিন যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। বিশেষ করে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। জনগুরুত্ব বিবেচনা ও প্রতিনিয়ত যানজট-দুর্ঘটনারোধে সরকার মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প হাতে নেয়। বর্তমানে মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত চারলেন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। ফলে কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত সহজেই যানবাহন চলাচল করছে। এতে সড়ক দুর্ঘটনার হারও অনেক হ্রাস পেয়েছে।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর উত্তরবঙ্গের ১৭টিসহ মোট ২৩টি জেলার গাড়ি ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে চলাচল শুরু করে। এতে মহাসড়কে গাড়ির চাপ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। গাড়ির তুলনায় মহাসড়কটি সম্প্রসারিত না থাকায় প্রতিদিনই যানজটসহ দুর্ঘটনার কবলে পরে প্রাণ দিতে হতো যাত্রী ও চালকদের। বিশেষ করে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে এই সড়কে জন ভোগান্তি বেড়ে যায় বহুগুণে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার সড়কটি চারলেনে উন্নতি করণের প্রকল্প হাতে নেয়। ফলে এসব ভোগান্তির অবসান করতে সরকার নতুন করে আবারও এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার সড়ক প্রায় ৬০১ কোটি টাকা ব্যায়ে চারলেনসহ এসএমভিটি (সার্ভিস লেন) করার উদ্যোগ নেয়।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প (প্যাকেজ-৫) ফেইজ-২ এর অধীনে আইনিপ্রক্রিয়া শেষে এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপ্রান্ত মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড। প্রায় ৬০১ কোটি টাকা ব্যয়ের ওই প্রকল্পের ১৩ দশমিক ৬ কি.মি. মহাসড়কে একটি ফ্লাইওভার, ৮টি ব্রিজ, ১০টি কালভার্ট ও দুইটি আন্ডারপাস এবং একটি সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। আগামী ২০২৪ সালে জুন মাসে কাজটি শেষ করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যেই চারলেন প্রকল্পে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাবে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২৩ জেলার মানুষ।
সরেজমিন মহসড়কের এলেঙ্গা ও আনালিয়াবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়কের দক্ষিণপাশে কাজ শুরু হয়েছে। দিনরাত পাইপযোগে সড়ক নির্মাণের জন্য ফেলা হচ্ছে বালু মাটি। দিনাজপুরগামী হানিফ পরিবহনের চালক রমজান আলী বলেন, আগে প্রতিনিয়ত টাঙ্গাইলে এসে যানজট আটকা পড়তে হতো। অনেক সময় চোখের সামনেই দুর্ঘটনা দেখেছি। মহাসড়কটির চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চারলেন বাস্তবায়ন হওয়ায় এখন খুব বেশি দুর্ঘটনা ঘটে না, কমেছে ভোগান্তিও।
পাবনা সদরের বাসিন্দা আলম হোসেন বলেন, আমি ব্যবসায়িক কাজে মাসে ৩/৪ বার ঢাকায় যাতায়াত করি। আসার পথে এলেঙ্গা পর্যন্ত দ্রুত সময়ে পৌঁছাতে পারি। তবে এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত যানজট হয়। তাই সড়কটি বাস্তবায়িত হলে আমার মতো যাত্রীদের সময় অনেকটা বেঁচে যাবে। স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারবো।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেডের স্থানীয় কর্তা ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কার্যাদেশ (ওয়ার্কঅর্ডার) পেয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেছে। দিনরাত পাইপযোগে মহাসড়ক নির্মাণের জন্য বালু-মাটি ফেলা হচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) প্রকল্পের নদী খননের উত্তোলিত বালু-মাটি (ড্রেজড ম্যাটারিয়াল) প্রশাসনের সহায়তায় স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ক্রয় করে ফেলা হচ্ছে।
এই মহাসড়কের এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহুরুল হক বলেন, গাজীপুরের ভোগরা পর্যন্ত চারলেন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় যাত্রী ভোগান্তি ও সড়ক দুর্ঘটনা কমে গেছে। দ্বিতীয় ফেইজের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত চারলেনের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হলে আর কোনো ভোগান্তি থাকবে না।
এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব চারলেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে মহাসড়কের চারলেনের কাজ শেষ করার আশা করছি। মহাসড়ক নির্মাণ কাজের ব্যয় বাড়বে কিনা সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত পয়েন্ট ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। মূল কাজ শুরু হতে আরো সময় লাগবে। এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম খান জানান, তাদের দায়িত্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বুঝে নেওয়া। তারপরও প্রকল্পে মাটিভরাট করতে গিয়ে ঠিকাদারের কারণে যাতে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে তিনি লক্ষ্য রাখবেন। প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।