শিরোনাম
রংপুর, ১৯ অক্টোবর, ২০২৩ (বাসস): সরকার কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ভূ-পৃষ্ঠের পানি সংরক্ষণ প্রকল্প চলতি মৌসুমে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে ২৫৮ কোটি টাকা মূল্যের এক লাখ টন অতিরিক্ত আমন ধান উৎপাদনে কৃষকদের সহায়তা করছে।
সংশ্লিষ্টকর্মকর্তারা জানান, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) পাঁচ বছর (২০১৯-২০২৫) মেয়াদি ‘ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ (ইআইআর)’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
সুবিধাভোগী কৃষকরা জানান, প্রকল্পের আওতায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া খাল ও নদী পুনঃখননের ফলে তাদের জমিগুলো কয়েক দশক পর জলাবদ্ধতামুক্ত হয়ে পুনরায় আবাদযোগ্য উর্বর জমিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
ফলে, তারা চলতি মৌসুমে বিগত তিন থেকে চার দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো এসব জমিতে আমন ধান চাষ করতে সক্ষম হয়েছেন।
আগে তারা তাদের এসব জমিতে বছরে শুধুমাত্র একবার বোরো ধান চাষ করতে পারতেন। কারণ, বৃষ্টির পানি ও বন্যার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সেগুলি প্রতি বছর ছয় মাস পর্যন্ত জলাবদ্ধ থাকত।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার ফতা গ্রামের কৃষক সারওয়াার আলম জানান, এবছর ইআইআর প্রকল্পটির আওতায় বিলুপ্ত প্রায় খোরানদী খালের আংশিক পুনঃখননের ফলে এলাকার ৪শ’ একর জমি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত পুনরায় আবাদযোগ্য উর্বর জমিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
‘এলাকার অনেক কৃষকদের মতো আমিও আমার জলাবদ্ধতামুক্ত সাত একর জমিতে বিগত ৪০ বছরে প্রথমবারের মত চলতি মৌসুমে আমন ধান চাষ করেছি। আমি এ বছর আমন ধান কাটার পর আলু চাষ এবং তারপর বোরো ধান আবাদ করব,’ তিনি বলেন।
পার্শ্ববর্তী পীরগাছা উপজেলার মনুরছড়া গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন জানান, ইআইআর প্রকল্পের আওতায় বিলুপ্ত আলাইকুমারী ও ঝিনিয়া খাল পুনঃখননের ফলে এলাকার শত শত একর জমি জলাবদ্ধতা থেকে এবার মুক্ত হয়েছে।
নিজাম বলেন ‘আমি চার দশক পর আমার তিন একর জমিতে এবার প্রথমবারের মত আমন ধান চাষ করেছি।’ এখন থেকে তিনি তার জমিতে বছরে তিনটি ফসল চাষ করবেন।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড় বদনপাড়া গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ কায়কোবাদ জানান, বিলুপ্ত চতরা খাল পুনঃখননের ফলে এলাকার ১২টি গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ ভীষণ খুশি হয়েছে। তাদের প্রায় ৩ হাজার ২০০ একর জমি জলাবদ্ধতা মুক্ত হয়ে পুনরায় আবাদযোগ্য জমিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
অনেক কৃষক সম্পূরক সেচের জন্য লো-লিফ্ট পাম্প ব্যবহার করে পুনঃখনন করা খাল থেকে সংরক্ষিত ভূপৃষ্ঠের পানি তুলে সাম্প্রতিক খরার মতো পরিস্থিতিতে সফলভাবে আমন ধানের চারা রোপণ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি জলাবদ্ধতামুক্ত আমার দুই একর জমিতে এবার আমন ধান চাষ করেছি’। আমন ধান ও পরে বোরো ধান কাটার পর তিনি আলু চাষ করবেন।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার চর বেরুবাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম জানান, বিলুপ্ত বোয়ালদারা খাল পুনঃখননের ফলে বিস্তীর্ণ জমি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়ে এখন সেখানে বছরে আমন ধানসহ তিনটি ফসল চাষের বাস্তব সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
বিএমডিএ’-র রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং ইআইআর প্রকল্প পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, ২৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি থেকে কৃষকসহ এলাকার হাজার মানুষ মানুষ ইতোমধ্যেই বহুমাত্রিক সুবিধা পেতে শুরু করেছেন।