শিরোনাম
ঢাকা, ১৯ অক্টোবর, ২০২৩ (বাসস): আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) মহাসচিব হুয়ান কার্লোস সালাজার বলেছেন, ঢাকাকে বিমান চলাচলের একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে, তার সংস্থা বাংলাদেশকে সমস্ত নীতি ও সক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। আজ রাজধানীর একটি হোটেলে আইসিএও এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশনের (ডিজিসিএ) ৫ দিনব্যাপি ৫৮তম সম্মেলনশেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি হিসাবে বেসামরিক বিমান চলাচলকে সহায়তার জন্য বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি দেখে আমরা সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি, এবং এটি এমন একটি বিষয় যে খাতে আইসিএও সহায়তা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ সিএএবি চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান এবং আইসিএও’র এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক তাও মা-ও এই ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন।
কার্লোস বলেন, আইসিএও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ প্রদান করবে, যাতে তারা একটি বিমান চলাচল কেন্দ্র হয়ে ওঠার লক্ষ্য বাস্তবায়নে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি সফল বিমান চলাচল কেন্দ্র হওয়ার লক্ষ্যে অবাধ বিমান পরিবহন নিশ্চিত করতে, অন্যান্য দেশের সাথে বিমান পরিষেবা চুক্তি আরও উদারীকরণ করতে হবে। তবে আইসিএও মহাসচিব বলেন, একটি স্বাধীন সংস্থা হিসাবে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা বিমান চলাচলের কেন্দ্র হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে কতটা উদার হতে পারে। কার্লোস দেশের দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিমান চলাচল খাতের সাম্প্রতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, সিএএবি লক্ষ্য অর্জনে সঠিক পথে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা হিসেবে, আমরা এখানে বাংলাদেশে এসে এবং বাংলাদেশে বেসামরিক বিমান চলাচলের দ্রুত বিকাশের বিষয়াবলী প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়ে খুবই আনন্দিত।’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনালকে বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধাসহ অবিশ্বাস্য অবকাঠামো হিসেবে উল্লেখ করে আইসিএও’র প্রধান কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ কীভাবে নতুন সুযোগ-সুবিধাগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে, সে বিষয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘একটি আঞ্চলিক বিমান চলাচল কেন্দ্র হওয়ার স্বপ্ন দেখার সিদ্ধান্ত নিতে এই তৃতীয় টার্মিনালটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।’
আইসিএও মহাসচিব তার পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশও তার বিমান চলাচল খাতের প্রকৃত গতিধারা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে, কারণ দেশটি অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যেমন ভাল করছে , তেমনি অনেক আন্তর্জাতিক বিমান অপারেটরও এখানে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তিনি বলেন যে উন্নয়ন অগ্রগতি, দেশের জনগণ, লিঙ্গ সমতা ও পরবর্তী প্রজন্মের পেশাজীবিদের দেখভালের লক্ষ্যের উপর গুরুত্ব আরোপে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি, দেশটিকে শুধু এই অঞ্চলে নয়, বৈশ্বিক মঞ্চেও একটি শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে উন্নীত করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দেশের শুধু বর্তমান নেই, এই দেশের ভবিষ্যৎও আছে।’ উল্লেখ্য, সোমবার কার্লোস এবং আইসিএও কাউন্সিলের সভাপতি সালভাতোর সিয়াচিটানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সিএএবি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আইসিএও’র সাথে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নীতি সহায়তা পাওয়ার জন্য একটি সহযোগিতার কাঠামো স্বাক্ষর করেছে। রহমান আশা প্রকাশ করেন, আইসিএও’র সহায়তা আগামী দিনে দেশের বিমান খাতের আরও উন্নয়নের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে সিএএবি’কে সাহায্য করবে।
৩৮ বছর পর ঢাকায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ৪৭টি দেশ ও ১৩টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিত্বকারী প্রায় ৫০০ বিদেশি প্রতিনিধি অংশ নেন। আইসিএও’র ত্রি-বার্ষিক সাধারণ সভার পর এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। আর এই সম্মেলনটি প্রথম ঢাকায় ১৯৮৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সম্মেলনে এভিয়েশন সেফটি, এয়ার নেভিগেশন, এভিয়েশন সিকিউরিটি, ফ্যাসিলিটেশন, এয়ার ট্রান্সপোর্টের উন্নয়ন, পরিবেশগত বিপর্যয় রোধ, এভিয়েশন সেক্টরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যবহারিক দিক ও আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।