বাসস
  ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ১০:১২

গোপালগঞ্জে ৬ স্থানে দশমীর নৌকা বাইচ

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ (বাসস): গোপালগঞ্জের ৬ স্থানের আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দুর্গা পূজার বিজয়াকে আরো আনন্দ মুখর করে তুলেছিল। বিজয়া দশমীকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি বাওড়ে মঙ্গলবার নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ দিন কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর নদীতে, রামশীলের সন্ধ্যা নদীতে,  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় মধুমতি বিলরুট চ্যানেলে , কাশিয়ানী উপজেলার বাথানডাঙ্গার কুমার নদে ও মুকসুদপুর উপজেলার কালিনগরে  নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ মানুষের মিলন মেলা বসেছিল। আজ বুধবার মুকসুদপুর উপজেলার জলিড়পাড়ে মধুমতি বিলরুট চ্যানেলে  নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
বর্ষার বিদায় লগ্নে শরতের মনোরম বিকেলে  গোপালগঞ্জ, নড়াইল,পিরোজপুর,বাগেরহাট, মাদারীপুর, ফরিদপুর ও বরিশাল জেলার বিভিন্ন বয়সের লাখ লাখ মানুষ  নৌকা বাইচ উৎসবে মেতে নির্মল আনন্দ ঊপভোগ করেছেন।
আজ বুধবার দুপুরে মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়ে মধুমতি বিলরুট চ্যানেলে  বিজয়া দশমীর নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।  গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুরের ৩০ টি  সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা, চিলাকাটা, জয়নগর বাচারী নৌকা অংশ নেবে এ নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায়। নান্দনিক এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা বিপুল আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে দুপুর দু’টা থেকে শুরু হয়ে চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। পরে প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে ফ্রিজ, টিভিসহ বিভিন্ন পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার বিজয় দশমীর বিকেলে  কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল গ্রামের সন্ধ্যা নদীতে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ প্রতিযোগিতায়  গোপালগঞ্জ ও বরিশাল জেলার ৩৫টি নৌকা অংশ নেয়। উৎসব মুখর পরিবেশে দু’পাড়ে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ বিজয় দশমীর নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। এটি বরিশাল ও গোপালগঞ্জ জেলার মিলন মেলায় পরিণত হয়। পরে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয় ।
বিজয়া দশমীর সর্ববৃহৎ নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা এদিন  কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর নদীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঘাঘর নদীর জাঠিয়ার মোড় থেকে ঘাঘর কান্দা পর্যন্ত  দু’কিলোমিটার পর্যন্ত এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহ্যবাহী এ নৌকা  বাইচ  উপভোগ করতে বিভিন্ন বয়সের লক্ষাধিক নারী পুরুষ নদীর দু’পাড়ে সমবেত হন।  দেড়শ’ বছর ধরে এ বাইচ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও বরিশাল জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ২৫টি বাচারী নৌকা অংশ নেয়।এ প্রতিযোগিতায় প্রধান আকর্ষণ ছিল মহিলাদের বাছারী নৌকা। মহিলাদের পাঁচটি বাচারী নৌকা এ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে। পরে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি অবসরপ্রাপ্ত সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার । এ দিন কাশিয়ানী উপজেলার বাথানডাঙ্গায়  অনুষ্ঠিত নৌকাইচ প্রতিযোগিতা বিজয়ার আনন্দকে আরো মুখরিত করে তোলে। গোপালগঞ্জ ও নড়াইল জেলার অন্তত ১৫ টি নৌকা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। পরে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করে আয়োজক কমিটি।
বিজয়া দশমীর আনন্দ ভাগাভাগি ও প্রাণবন্ত করতে  গোপালগঞ্জ সদর সাতপাড়ে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। মধুমতি বিলরুট চ্যানেলে অনুষ্ঠিত এ বাইচ উপভোগ করেত নদীর দু’পাড়ে জড়ো হন বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার মানুষ। এ নৌকা বাইচে অংশ নেয় ২০ টি  নৌকা।
এছাড়া মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর বিকেলে  মুকসুদপুর উপজেলার কালিনগরে অনুষ্ঠিত নৌকা  বাইচে ১০ নৌকা অংশ নেয়।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি গ্রামের  গ্রামের সজল রহমান বলেন , আমাদের এলাকার নৌকাবাইচ কেউ প্রচলন করেননি। দু’ শ’ বছর আগে বাওড় এলাকার মানুষ চিত্ত বিনোদনের জন্য নৌকা দিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতো এ থেকে এটি প্রচলিত হয়। সে ঐতিহ্য এখনো চলছে। এ বছরও গ্রামবাসী এটির আযোজন করেছে । বাইচ থেকে এলাকার মানুষ নির্মল আনন্দ উপভোগ করছেন।
কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর গ্রামের জব্বার মিয়া  বলেন , দশমীর বিকেলে নৌকা বাইচ থেকে শুধু আনন্দ পেতেই নৌকার মালিকরা নৌকা নিয়ে এখানে আসেন। বাইচ উপলক্ষ করে বাড়িতে আতœীয় স্বজনরা আসেন। সবাই মিলে আনন্দ উপভোগ করি।
কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাস  বলেন, প্রায় দেড় শ’ বছর আগে যশোরের বিঘাপতির জমিদার খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে ঘাঘর নদীতে দুর্গা পূজার পর এখানে মেলা ও নৌকাবাইচের প্রচলন করেছিলেন। সেখান থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার দশমীর দিনে এখানে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।কোটালীপাড়া উপজেলার সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ এ নৌকা বাইচ উপভোগ করেন।