শিরোনাম
ঢাকা, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ (বাসস) : স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বিষয়ক এক কর্মশালায় বক্তারা বলেছেন, স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমের জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন।
তারা বলেন, স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নারীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাবে দেশে স্তন ক্যান্সারে নারী মৃত্যুহার বাড়ছে। তাই, জনসচেতনতা সৃষ্টি ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে। ‘স্তন ক্যান্সার সচেতনতায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বক্তারা আজ একথা বলেন।
ক্যান্সার সচেতনতা মাস উপলক্ষে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট (নিমকো) ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
নিমকো’র মহাপরিচালক নূরুন নাহার হেনা’র সভাপতিত্বে কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত কর কমিশনার এবং ব্লু স্কাই চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন (বিএসসিএফ)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্টা আয়েশা সিদ্দিকা শেলী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, নিমকো’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক ফায়জুল হক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এর প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জুবায়দা বাহারুন খান এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এ জেড. মাহমুদুল হাসান।
নুরুর নাহার হেনা বলেন, প্রতিবছর দেশে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। সচেতনতার অভাব, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নারীদের লজ্জার কারণে স্তন ক্যান্সারে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এমনকি তারা জানেও না যে, স্তন ক্যান্সার নিজে নিজেই পরীক্ষা করা যায়।
তিনি বলেন, এই লজ্জার কারণেই একেবারেই শেষ পর্যায়ে এসে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত হয়। যখন চিকিৎসকের কিছু করার থাকে না। তাই এ অবস্থা পরিবর্তনে তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এজন্য প্রয়োজন গণমাধ্যমের জোরালো উদ্যোগ। তিনি ৩০ বছরের বেশি বয়েসী সকল নারীর জন্য স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
আয়েশা সিদ্দিকা শেলী বলেন, বিশ্বে প্রতি মিনিটে ৮ জন নারীর মধ্যে ১জন নারী স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। সারা বিশ্বে যেখানে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর মৃত্যু হার প্রতি ৮ জনে ১ জন, সেখানে বাংলাদেশে এই হার প্রতি ২ জনে ১ জন। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এটা সম্পূর্ণ নিরাময় হয়। স্তন ক্যান্সার মূলত নারীদের রোগ। তবে সারা বিশ্বে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের এক শতাংশ পুরুষ।
তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে চল্লিশ বছর বয়সের পর নারীদের স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক। তবে বাংলাদেশে এখনও এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন স্তন ক্যান্সার বিষয়ক বিশেষায়িত হাসপাতাল । তিনি স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আপামর জনসমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি স্তন ক্যান্সারের ভয়াবহতা মোকাবেলায় জাতীয় বাজেটে স্তন ক্যান্সার খাতে বিশেষ বরাদ্দ রাখার পরামর্শ দেন।
ফায়জুল হক স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গণমাধ্যমের কর্মীদের এ ব্যাপারে সচেতন করে তোলা এবং তাদের মাধ্যমে ক্যান্সার বিষয়ক প্রকাশনা ও প্রচারণা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে এ সম্পর্কে নারী-পুরুষ উভয়েরই সচেতনতা জরুরী। পুরুষ সচেতন না হলে নারীরা ট্যাবু থেকে বের হতে পারবে না। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাবে না।
ডা. জুবায়দা বাহারুন খান বলেন, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীরা শারীরিক জটিলতার পাশাপাশি মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েন। কিন্তু নিজেদের মধ্যে লজ্জা, ভয় ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বেশির ভাগ সময়েই তারা শেষ সময়ে ডাক্তারের কাছে আসেন। তাই সারাদেশে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকির মধ্যে থাকা নারীদের নিয়মিত স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক করার জন্য সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে স্তন ক্যান্সার নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে স্তন ক্যান্সারে মৃত্যু প্রতিরোধে সারাদেশে ব্যাপকভাবে স্ক্রিনিং, আলট্রাসনোগ্রাম, রেডিওথেরাপি সেন্টার খোলা প্রয়োজন। জেলায় জেলায় স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করার ব্যবস্থা করা হলে,প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত হবে। তাতে মৃত্যু হারও কমবে। তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের ধৈর্য্য ধরে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এ জেড. মাহমুদুল হাসান বলেন, স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা একটি সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই মাল্টিডিসিপ্লিনারি এ্যাপ্রোচ থেকেই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, ৩০ বছরের বেশি বয়সী নারীরা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও ২০ বছর বয়সের পর থেকে নারীর স্তন ক্যান্সার হতে পারে। ডা. হাসান ২০ বছরের বেশি বয়েসি প্রত্যেক নারীকে সেল্ফ স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা এবং ৩০ বছরের বেশি বয়েসি নারীদের নিয়মিত স্ক্রিনিং করার পরামর্শ দেন। ৪০-৫৪ বছর বয়সী নারীদের প্রতি বছর একবার আল্ট্রাসনোগ্রাম বা ম্যামোগ্রাম এবং ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের প্রত্যেক দুই বছর পরপর ম্যামোগ্রাম বা আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পরামর্শ দেন।
জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউটের পরিচালক এ কে এম আজিজুল হক এর সঞ্চালনায় কর্মশালায় ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন পোর্টালের গণমাধ্যম কর্মীরা অংশ নেন। ইন্সটিটিউটের উপপরিচালক আবুজর গাফফারী কর্মশালা পরিচালনা এবং সহকারি পরিচালক তানজিম তামান্না কর্মশালা সমন্বয় করেন।