শিরোনাম
ঢাকা, ৮ নভেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : একটি আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা সহিংসতা ও ভুল তথ্যকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দুটি প্রধান বাধা হিসেবে বর্ণনা করে সহিংসতা ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে বৈশ্বিক বন্ধুদের আন্তরিক সমর্থন চেয়েছেন।
৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা মার্কিন নীতিনির্ধারকদের বাংলাদেশকে আফগানিস্তান-স্টাইলের লুণ্ঠনের উপলক্ষ্য না বানানোর আহ্বান জানিয়ে মত দেন যে টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তখনই কার্যকর হবে, যখন সহিংসতা ও বিভ্রান্তির জন্য দায়ী অপরাধীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বের করে দেওয়া হবে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রো রেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশের দ্রুত অগ্রগতির জন্য ওয়েবিনারের প্যানেলিস্টরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ১৫ বছরের ধারাবাহিকতাকে পুরো কৃতিত্ব দিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ‘গ্লোবাল ফোরাম ফর ভায়োলেন্স-ফ্রি সেকুলার ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ’ থেকে আজ এখানে প্রাপ্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “সহিংসতা ও ভুল তথ্য: বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা” শীর্ষক ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলম্যান, মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট লেখক ড. নুরুন নবী। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পাঁচজন প্যানেলিস্ট এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তারা হলেন: অধ্যাপক আবদুর চৌধুরী, অধ্যাপক এবিএম নাসির, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেথ ওল্ডমিক্সন ও সিনিয়র গবেষক ড. মাজহারুল ইসলাম রানা।
বক্তারা একই সাথে লাখ লাখ বাংলাদেশীকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারীদের জন্য ভাতা প্রবর্তনের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন। তাদের পর্যবেক্ষনে বলা হয়, জামায়াত-বিএনপি-নেতৃত্বাধীন বিরোধীরা এই সময়ে নৈরাজ্য ও সহিংসতা না করলে বাংলাদেশ আরও অগ্রগতি লাভ করতে পারতো । এ প্রেক্ষাপটে প্যানেলিস্টরা ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি-জামায়াত মদদপুষ্ট সরকার বিরোধী সমাবেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেদিন তারা একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা, হাসপাতালে, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি যানবাহনে, অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে রাজধানীতে তা-ব চালায়, যেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম আন্ডারওয়াটার রোড টানেল বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করেন। সেদিন প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা হয় এবং অন্যান্য হামলায় বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে আহত করা হয়।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির বিষয়ে বক্তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ওই দলগুলো কেন অসাংবিধানিক কিছু চাচ্ছে ? তারা একথা উল্লেখ করে স্মরণ করিয়ে দেন, নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানেই নির্বাচন হতে হবে।
অধ্যাপক আবদুর চৌধুরী উল্লেখ করেন যে গোল্ডম্যান শ্যাস অ্যান্ড চেজ বাংলাদেশকে বিশ্বের পরবর্তী শীর্ষ দশটি উদীয়মান অর্থনীতির একটি হিসাবে চিহ্নিত করেছে এবং এটি ১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে বিস্ময়কর অগ্রগতি। ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের মতো, বর্তমান বৈশ্বিক সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে, তিনি বিশেষ করে ক্রমাগত ও বৈচিত্রময় সেক্টরে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পক্ষে মত দেন।
ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন তার বক্তব্যে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) দ্বারা পরিচালিত সাম্প্রতিক জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে বর্তমান অর্থনৈতিক সমস্যা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ৭০% জনমত রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে অনলাইনে জামাত-বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন বলয় থেকে একচেটিয়া ভুল তথ্য পরিবেশনা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি বাস্তব প্রভাব ফেলেছে, তাই ইউরোপীয় ও আমেরিকান উভয় অংশীদারেরই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার বিরুদ্ধে লড়াই করতে এগিয়ে আসা উচিত। তিনি আরও উল্লেখ করেন, তারেক জিয়া সহিংসতার সুপরিচিত প্রতীক। যুক্তরাজ্য সরকার তারেক জিয়া ছাড়াও বাংলাদেশের কিছু যুদ্ধাপরাধীকে আশ্রয় দিচ্ছে এবং তাদের এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল তথ্য আর্থ-সামাজিকভাবে বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং বিএনপি অগ্নিসংযোগ ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
ডা. মাজহারুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ক্রমাগত ভুল তথ্য, বিভ্রান্তি ছড়ানোর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল এবং আজও দ-িত বিএনপি নেতা তারেক জিয়া, বঙ্গবন্ধুর দ-িত খুনি ও জামায়াতে ইসলামীর নির্দেশনায় সেই একই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন, তারা মার্কিন সরকার কর্তৃক র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং কিছু বাংলাদেশী নাগরিকের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে সাহায্য করেছে।
অধ্যাপক এবিএম নাসির আমেরিকান নীতিনির্ধারকদের ইসলামী জঙ্গিবাদের উত্থান প্রতিহত করার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া না করার এবং বাংলাদেশকে প্রগতিশীল গণতন্ত্রের দৃষ্টান্ত এবং মধ্যপন্থী মুসলিম দেশের রোল মডেলে পরিণত করার চলমান ধারাকে সমর্থন করার আহ্বান জানান। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই ধারাবাহিক সহিংসতার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি উল্লেখ করেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের পাঁচ বছরের দুঃশাসন ছিল দেশের ইতিহাসে অন্ধকার অধ্যায়। তিনি বলেন, ২০১৩-২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং প্রগতিশীল ব্লগারদের ওপর হামলা চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। ২৮ অক্টোবর, ২০২৩-এ দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচির শুরু থেকে আবার একই ধরনের সহিংসতা ফিরে এসেছে। অধ্যাপক নাসির মার্কিন নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান যে একটি টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং একটি অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তখনই সম্ভব, যখন সহিংসতা ও বিভ্রান্তির জন্য দায়ী অপরাধীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বহিষ্কার করা হবে, অন্যথায় এটি আফগানিস্তানের ধাঁচের লুণ্ঠনে পরিণত হবে।
সেথ ওল্ডমিক্সন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে সতর্ক করেন যে সহিংস চরমপন্থীরা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বাংলাদেশে লোক সংগ্রহ এবং সহিংসতা উসকে দিতে বেশ সক্রিয়। তাই ভুল তথ্য প্রচারণার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক রিপাবলিকান ইনস্টিটিউশন দ্বারা উল্লিখিত বর্তমান সরকারের প্রতি ৭০% অনুমোদনের রেটিং-এর মতো ইতিবাচক তথ্য নিয়ে একটি প্রচারণা শুরু করার পরামর্শ দেন।