বাসস
  ২২ নভেম্বর ২০২৩, ১৮:০৩

সীসা দূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সিলেটে সাংবাদিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

সিলেট, ২২ নভেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : সীসা দূষণ সম্পর্কে সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশে  বর্তমান সীসা দূষণের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করনের লক্ষ্যে সিলেটে সাংবাদিকদের নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সিলেট নগরীর গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেল ও রিসোর্টে আন্তর্জাতিক সংস্হা ইউনিসেফ সিলেটের ফিল্ড অফিসের সহায়তায় এ কর্মশালাটির আয়োজন করে সিলেট জেলা সিভিল সার্জন অফিস। 
‘সীসা দূষণ বন্ধ হলে, বাড়বে শিশু বুদ্ধি বলে’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে, উক্ত কর্মশালায় সিলেটের প্রায় অর্ধশতাধিক সাংবাদিকরা অংশ নেন। 
সিলেট জেলার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ, চীফ অব ফিল্ড অফিস-সিলেট কাজী দিল আফরোজা ইসলাম, সিলেট জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত ও ইউনিসেফ সিলেট ফিল্ড অফিসের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মির্জা ফজলে এলাহী।
মেডিকেল অফিসার-সিভিল সার্জন অফিস ডা. স্বপ্নীল সৌরভ রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ডা. স্নিগ্ধা তালুকদার ও ডা. তনুশ্রী তালুকদার। 
বক্তারা বলেন, বিশ্বে প্রতি তিন জন শিশুর একজন সীসা দূষণের শিকার। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই হার ৬০ শতাংশ এবং প্রায় ৩ কোটি ৬০ লক্ষ শিশুর রক্তে সীসার মাত্রা ৫(ক্রম) মাইক্রোগ্রাম পার ডেসিলিটার এর বেশি। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ সংখ্যাগরিষ্ঠ আক্রান্ত দেশ।
ইউনিসেফ এর সহায়তায় আইসিডিডিআরবির মাধ্যমে ২০২২ সালে সিলেটের ২৪৮ জনসহ টাঙ্গাইল, খুলনা ও পটুয়াখালীর সর্বমোট  ৯৮০ জন শিশুর রক্তে সীসার মাত্রা পরিমাপ করা হয়। পরীক্ষায় প্রত্যেকের নমুনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সীসার উপস্থিতি পাওয়া যায়। 
সিলেটে ব্যাটারী তৈরীর কারখানা বা অন্যান্য শিল্প কারখানা কম থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৮৪ ভাগ শিশুর রক্তেই সীসার মাত্রা ছিল আমেকিার জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা সিডিসি কর্তৃক নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সীসার উৎস সম্পর্কে আরও জানার জন্য এই বছর এই বাচ্চাদের বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের খাদ্য পণ্য ও ব্যবহার্য জিনিসপত্রের  নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, রক্তে সীসার কোন নির্ধারিত নিরাপদ মাত্রা নেই, অর্থাৎ যেকোন পরিমাণ সীসার উপস্থিতি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
শিশুরা সবচেয়ে বেশি সীসা দূষণের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় যা অনেক ক্ষেত্রেই আর নিরাময় করা সম্ভব নয়। সীসা দূষণের ফলে শিশুদের নানান শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি আইকিউ কমে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এতে মনোযোগের ঘাটতি তৈরি হয়ে শিশুরা লেখাপড়ায় দুর্বল হয়- যা ভবিষ্যতে তাদের অনেক আগ্রাসী করে তোলে ও পরিপূর্ণ বিকাশের সক্ষমতাকে ব্যাহত  করে। 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বুদ্ধি ভিত্তিক পঙ্গুত্বের পেছনে ৭০ভাগ সীসা দূষণ দায়ী বলে  জানানো হয়েছে।
সীসার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি গর্ভবতী মহিলার পাশাপাশি  তার গর্ভের ভ্রুণকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে শিশুর ওজন কম হওয়া, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়া- এমন কি মৃত্যুও হতে পারে। তাছাড়া সীসা দূষণের ফলে বড়দের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি, হার ও মাংসপেশীতে ব্যথা এবং প্রজনন সমস্যার পাশাপাশি নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
দৈনিক ব্যবহার্য অনেক জিনিসপত্র যেমন- সাজসজ্জার রং, মসলা (হলুদ,মরিচে রঞ্জক পদার্থের মিশ্রণ), অ্যালুমিনিয়াম ও সিরামিকের থালা-বাসন, খাবারের পাত্র, বাচ্চাদের খেলনা, আয়ুর্বেদিক ঔষধ, সুরমা, সিঁদুর, প্রসাধনী, ই-বজ্য, পানির পাইপ ও ফিটিংস ইত্যাদিতে  সীসার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে।
এছাড়া সীসা যুক্ত এ্যাসিড ব্যাটারির অনিরাপদ ও অপরিকল্পিত পুনঃচক্রায়ন কারখানার মাধ্যমেও সীসা ব্যাপকহারে আমাদের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
কর্মশালায় জানানো হয় যে,সীসা দূষণের প্রকোপ সাথে সাথে দৃষ্টিগোচর না হওয়ায় এর ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা এখনো উদাসীন। এটি নিরব ঘাতক হয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করছে প্রতিনিয়ত। সীসা দূষণের কোন সুনির্ধারিত চিকিৎসা না থাকায় প্রতিরোধ ই হচ্ছে একমাত্র বাঁচার উপায়। তাই সম্মিলিত ভাবে সীসা দূষণ প্রতিরোধের উপর অনুষ্ঠানে জোর দেয়া হয়।
সিলেট সিভিল সার্জন অফিসের আয়োজনে ইউনিসেফের সহায়তায় ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানকারি, চিকিৎসক, শিক্ষক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিনিধি, কিশোর-কিশোরী ক্লাব  প্রশিক্ষক ও সদস্যদের নিয়ে একাধিক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ৪৬০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৭টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৮টি কিশোর কিশোরি ক্লাব, ইপিআই সেন্টার, রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউট, সদর উপজেলার সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী ক্লাবের মাধ্যমে কমিউনিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা সভার আয়োজন করে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।