বাসস
  ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:১৬

বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের পুরস্কৃতকারীদের বিচার হওয়া উচিত : আ জ ম নাছির

চট্টগ্রাম, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, বুদ্ধিজীবী হত্যায় যারা সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল তাদেরকে জিয়াউর রহমান-এরশাদ-খালেদা জিয়া মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত বানিয়েছিলেন। জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করে তাদের গাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ানোর সুযোগ দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মাদের প্রতি ক্ষমাহীন অপরাধ করেছেন। এ কারণে খালেদা জিয়ার বিচার এবং জিয়া ও এরশাদের মরণোত্তর বিচার হওয়া উচিত। 
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ফয়’স লেকস্থ বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বাঙালি জাতির মেধাবী শহীদ সূর্য সন্তানদের স্মরণে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন শেষে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নজিরবিহীন গণহত্যা ও পোড়া মাটি নীতি গ্রহণ সত্ত্বেও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।  মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ঊষালগ্নে হানাদার বাহিনী এদেশীয় এজেন্ট ও দোসর আলবদর ও আলসামস্ বাহিনী পরিকল্পিতভাবে স্বাধীন বাঙালি জাতিসত্তাকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে জাতির মানবসম্পদ ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। পৃথিবীর কোন দেশে পরাজিত শক্তির হাতে বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নজির নেই। একমাত্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ক্ষেত্রেই এমন বর্বরোচিত ঘটনাটি পরাজিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ঘটিয়েছিল। যারা এই বর্বরতার খলনায়ক, তারা শুধু মানবতা বিরোধীও নয়, সভ্যতা ও মেধা হরণকারী দুর্বৃত্ত। পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর আলবদর আলসামস্ বাহিনীর প্রেতাত্মা ও বশংবদরা এখনো বেঁচে আছে এবং বাঙালি জাতিসত্তাকে ধ্বংস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তাদেরকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করতে না পারলে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে না। 
তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব বিরোধী অপশক্তিকে সমূলে নির্মূল করার প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিকে আবারো বিজয়ী করার জন্য সমগ্র বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। 
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন আরো বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পরাজয় নিশ্চিত হবে জেনেই স্বাধীন বাঙালি জাতিসত্তাকে জ্ঞান ও মেধায় চিরতরে পঙ্গু করে দিতে বাঙালি সাহিত্যিক, লেখক, কবি, ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প-িত-মনীষীদের হত্যা করার দায়িত্ব তাদের অনুসারী বাহিনীর প্রধানদের দিয়েছিল এবং যা তারা বাস্তবায়ন করে। সেই ধিকৃত অপরাধীদের মধ্যে ছিল: মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, মাওলানা মান্নান, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, কাদের মোল্লা, কামরুজ্জামান, মীর কাশেম আলী প্রমুখ। 
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, রাজারবাগে বধ্যভূমিতে যেসব শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মরদেহ পাওয়া গেছে এবং অপারেশন সার্চলাইট শুরুর পর ঢাকায় যে সকল বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছেন তাঁদের একটি নামের তালিকা করা হলেও সমগ্র বাংলাদেশে  যে সকল বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছেন আজ পর্যন্ত তার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি হয়নি। আমাদের এই অপারগতা ক্ষমাহীন। এই কাজটি করতে পারলেই আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দায়মুক্ত হবো। 
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গ্যাস সিলিন্ডার কাটার মেশিন ব্যবহার করে ঢাকা ময়মনসিংহ গাজীপুরে প্রায় বিশ ফুট রেললাইন কেটে অবরোধের নামে বিএনপি বর্বরোচিত রেল দুর্ঘটনাটি ঘটিয়েছে ও নাশকতার মহড়া দিয়েছে। তাদের পরিকল্পনা ছিল কয়েক শত নিরীহ রেলযাত্রীকে হত্যা করা। দুর্ঘটনার ফলে রেল ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লেও সাতজনের বেশি হতাহত হননি। নাশকতার নামে অবরোধকারী চিহ্নিতকরণে গণতল্লাশি চালাতে হবে এবং যেখানেই অবরোধকারীদের পাওয়া যাবে সেখানেই তাদের প্রতিহত করার জন্যে জনগণকে সাথে নিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে সহায়তা করা হবে। 
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, যারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে তারা প্রকৃত অর্থে চরম মানবতাবিরোধী তাদের বশংবদরা এখনো আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি জামাতের আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে। সামগ্রিকভাবেই জাতি বিপজ্জনক পরিস্থিতি ও পরিবেশের মধ্য দিয়ে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে যাচ্ছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে চূড়ান্ত লড়াইয়ের শরীক হয়ে জাতিকে বিপদমুক্ত করতে হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ নঈম উদ্দীন চৌধুরী, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলহাজ খোরশেদ আলম সুজন, আলহাজ আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ এমপি, উপদেষ্টা আলহাজ সফর আলী, শেখ মোহাম্মদ ইসহাক, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, দপ্তর সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসের, আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাজী মো. হোসেন প্রমুখ।
সভার শুরুতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি, সকালে দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি সম্মানার্থে বিন¤্র শ্রদ্ধা নিবেদনে ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।