শিরোনাম
॥ এস এম মজিবুর রহমান ॥
শরীয়তপুর, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : চার যুগেরও বেশি সময় থেকে শরীয়তপুরের উত্তর তারাবুনিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার পদ্মা পাড়ের মানুষ পদ্মার গ্রাসে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। বর্ষা মৌসুম আসতে শুরু করলেই নির্ঘুম রাত কাটাতে শুরু করতেন পরিবারগুলো। সময়ের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিক ১৫ বছরের শাসন আমলের সুফলের হাত ধরে বদলে যেতে থাকে শরীয়তপুরের পদ্মার ভাঙনের চিত্র। এক সময় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাগ্রস্ত মানুষগুলো এখন নতুন উদ্যমে উজ্জল আগামীর স্বপ্ন বুনছেন।
২০২৩ সালের মে মাসে উত্তর তারাবুনিয়ার পদ্মার ভাঙ্গন রোধে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড পাঁচ’শ ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭.২ কিলোমিটার স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু করে। দ্রুত গতিতে কাজ এগিয়ে নেয়ায় ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ অগ্রগতি হওয়ায় ভাঙন কবলিতদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। এলাকাবাসি বলছেন, এ বাঁধ শুধু ভাঙ্গন থেকেই রক্ষা করবে না জীব যাত্রার চিত্র পাল্টে দিয়ে আনবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও।
সখিপুরের গৌরাঙ্গ বাজার গ্রামের আহমেদ শাকিল বলেন, বর্ষায় পদ্মার ভাঙন ছিল আমাদের নিত্য সঙ্গী। বর্ষার আগমনী বার্তায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে যেতাম। শুরু হয়ে যেতো পরিবার পরিজন নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটানোর পালা। সে যে কি আতঙ্ক তা কেবল তারাই বুঝবে যারা ভাঙনের শিকার। শত সহ¯্র আবেদন নিবেদন করেও বিফল হয়েছে ভাঙন কবলিতদের স্থায়ী রক্ষা বাধের দাবি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এনামুল হক শামীম সংসদ সদস্য পরবর্তী পানি সম্পদ উপমন্ত্রী হওয়াটা আমাদের জন্য হয়ে উঠে পরশ পাথরের ন্যায়। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নকৃত স্থায়ী রক্ষা বাঁধ নড়িয়ার জয় বাংলা এভিনিউ, চরাত্রা-নওপাড়ার স্বাধীন বাংলা এভিনিয়ের পর এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে সোনার বাংলা এভিনিউ। আমাদের সোনার বাংলা এভিনিউ বাঁধের কাজ শেষ হলে আমরাও নড়িয়া, চরাত্রা-নওপাড়ার ন্যায় স্থায়ী মুক্তি পাব ভাঙন থেকে।
উত্তর তারাবুনিয়া চেয়ার বাজার ব্যবসায়ী স¤্রাট ইসলাম বলেন, নদীর পাড়ের বাজার হওয়ায় প্রতি বছরই নদী ভাঙনের ফলে আমাদের দোকান স্থানান্তর করতে হতো। এ চিত্র যে কতটা বেদনার ও লোকসানের তা ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য কেউ বুঝবে না। শামীম ভাই মন্ত্রী হওয়ার পর আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এ সরকারের সময়েই নড়িয়ার আদলে উত্তর তারাবুনিয়ার ভাঙন রোধেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করবেন। তখন আমরা ভাবতেই পারি নাই এত দ্রুত আমাদের এখানে বাঁধ হবে। কাজ শুরু হওয়ার পর যেভাবে মন্ত্রী যেভাবে তদারকি করছেন তা অবিশ^াস্য। মাত্র ৬ মাসের মধ্যে যে পরিমান কাজ এেিগয়ছে তাতে আগামী বর্ষায় আর এখানে ভাঙঙ্গ থাকবে না। আমরা নিশ্চিন্তে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারব।
উত্তর তারবুনিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন মাঝি বলেন, ৫০ বছরেরও বেশি সময় থেকে ভাঙ্গছে আমাদের ইউনিয়নের বিস্তীর্ণএলাকা। আমরা অনেকবার স্থায়ী বাঁধের আবেদন করেও পাইনি কোন সুফল। কিন্তু এনামুল হক শামীম উপমন্ত্রী হওয়ার পর আমাদের সকল হতাশাকে উড়িয়ে দিয়ে এখন এ এলাকা রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ শুরু করেছেন। দ্রুত গতিতে যেভাবে কাজ হচ্ছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট ও আনন্দিত। এ বাঁধ শুধু নদী ভাঙ্গনই রোধ করবে না এ জনপদের হবে পুনর্জাগরণ।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, উত্তর তারানুনিয়ার ৭.২ কিলোমিটার এলাকার স্থায়ী ভাঙ্গন রোধে ৫’শ ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় এ বছর মে মাসের ২৭ তারিখে। এলাকর ভাঙ্গন কবলিতদের দুর্দশার কথা চিন্তা করে সোনার বাংলা এভিনিউ নামের এ রক্ষা বাঁধটি কাজের গুণগতমান ঠিক রেখে দ্রুত বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যে গতিতে কাজ চলমান রয়েছে তাতে আমরা আশা করছি প্রকল্প মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২৫ এর আগেই শেষ করতে পারব।
পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বাসস’কে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র সরকারের ধারাবাহিকতার ফলেই শরীয়তপুরে পদ্মার ভাঙন স্থায়ীভাবে রোধ করা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের প্রলয়ংকারী ভাঙ্গনে শরীয়তপুরের মানুষের দুর্দশা দেখে আমাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে। তারই ধারাবহিকতায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৯ সালে শুরু করে জয় বাংলা এভিনিউ রক্ষা বাঁধ বাস্তবায়নের কাজ। মহামারি করোনার মধ্যেও আমরা কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে সক্ষম হই। যেখানে ২০১৮ সালেই পদ্মার ভয়াবহ ভাঙ্গনে ৫ হাজারেরও বেশি পরিবার সর্বস্ব হারিয়েছিল সেখানে ২০১৮ সালের পর নড়িয়ায় আর একটি পরিবারও ভাঙ্গনের শিকার হয়নি। এরপর আমরা পর্যায়ক্রমে চরাত্রা-নওপাড়ায় স্বাধীন বাংলা এভিনিউ নামের রক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন করি। বর্তমানে সখিপুরের সোনার বাংলা এভিনিউ নামের রক্ষা বাঁধও বাস্তাবায়নাধীন। আর জাজিরার রুপসী বাংলা এভিনিউয় রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কাজও এখন শুরুর অপেক্ষায়। আশা করছি সরকারের এ মেয়াদেই কাজ শুরু করতে পারব। রুপসী বাংলার কাজ শেষ হলে শরীয়তপুরের পদ্মার ভাঙ্গন কেবল বইয়ের পাতায় ইতিহাস হিসেবেই থাকবে। এ ছাড়াও পদ্মার শাখা কির্তীনাশা’র ভাঙ্গন রোধের কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে শরীয়তপুরের সকল নদী ভাঙ্গন রোধের কাজ শেষ হবে ইনশাআল্লাহ।