শিরোনাম
মনোজ কুমার সাহা
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২৫ ডিসেম্বর,২০২৩ (বাসস) : বড়দিনে গোপালগঞ্জের খ্রিস্টান পল্লী ও গির্জাগুলো উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে। বর্ণিল সাজে সেজেছে খ্রিস্টান পল্লী ও ভজনালয়। কেককাটা, খ্রিস্টন সম্প্রদায়ের কল্যাণ, মানবজাতি ও বিশ^শান্তির জন্য প্রার্থনা হয়েছে গির্জায় গির্জায়। সেখানে যীশু খ্রিস্টের জন্ম ও মাহত্ম নিয়ে হয়েছে আলোচনা সভা । খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়সের মানুষ প্রার্থনা সভায় অংশ নেন। এদিকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণ করেছেন পৌরসভার মেয়র শেখ রকিব হোসেন। তিনি বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে শহরের গির্জাগুলোতেও ব্যানার দিয়েছেন।
রোবাবার রাত ১০ টা থেকে গোপালগঞ্জের গির্জাগুলোতে প্রার্থনা সভা শুরু হয়। সভায় যীশু খ্রিস্টের জন্ম নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন পালকরা। রাত ১২ টা ১ মিনিটে যীশু খ্রিস্টের জন্ম দিনের কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করা হয়। তারপর অনুষ্ঠিত হয় প্রার্থনা। রাত ১ টা পর্যন্ত চলে প্রার্থনা। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কল্যাণ, বিশ^শান্তি ও মহামারি থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করা হয় গির্জাগুলোতে।
বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্টান পল্লীর বাড়িতে বাড়িতে পিঠা, কেক, মিস্টি, বিরিয়ানী, পোলাও, কোরমা, রোস্টসহ লোভনীয় খাবারের আযোজন করা হয়। এসব দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় বাড়ির লোকজনসহ অতিথিদের।
শহরের আগাপে চার্চের পাস্টার সমুয়েল এস বালা বলেন, রোববার রাতে জেলার ৫ উপজেলার ১৭০ টি চার্চে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে রাত ১২ টা ১ মিনিটে কেক কাটা হয়। চার্চের পাস্টার, ফাদার বা পালকরা এসব সভা পরিচালনা করেন। সভায় খিস্টান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশ নেয়। প্রার্থনা সভায় অংশ নিয়ে সবাই যীশুখ্রিস্টের করুনা ভিক্ষা করেন। প্রার্থনা সভায় গির্জাগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে। আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গির্র্জায় গির্জায় বড়দিনের প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরো বলেন, ওয়াই ডাবলু সিএ, জেলার ১৭০টি গির্জা ও সংস্থাগুলো প্রাক্ বড়দিন উদযাপন করেছে। প্রাক্ বড়দিনে আলোচনা সভা, প্রার্থনা, কেক কাটা ও উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। ১ ডিসেম্বর থেকেই বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গর্বিত গোপালগঞ্জ জেলায় বড়দিনের উৎসব শুরু হয়। জেলাটিতে হিন্দু-মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থান করছে। অসাম্প্রদায়িক এ জেলায় বড়দিনের উৎসব তাই বর্ণিল ও আকর্ষণীয় ।
গোপালগঞ্জ খ্রিস্টান ফেলোশিপের সভাপতি প্রভাষ বাড়ৈ বলেন, কোন কোন গির্জায় আজ সোমবার সকাল ৮ টায়, কোন কোন গির্জায় সকাল ৯ টায় বা ১০ টা কিংবা ১১ টার দিকে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুরের মধ্যেই প্রার্থনা সভা শেষ হবে। তারপর প্রত্যেক গির্জায় অনুষ্ঠিত হবে বড়দিনের প্রীতিভোজ। এতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ অংশ নেবেন। বিকেলে খ্রিস্টান পল্লী ও গির্জার মাঠে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। কোথাও কোথাও সুধীজনদের নিয়ে বড়দিনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দিনটি আমরা প্রার্থনার পাশাপাশি আনন্দ ও উৎসবের মধ্য দিয়ে উদযাপন করছি। বড়দিনকে কেন্দ্র করে আমাদের সবাই আনন্দে উদ্বেলিত ।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বানিয়ারচর ক্যাথলিক গির্জার ফাদার ডেভিড ঘরামী বলেন, যীশুখ্রিষ্টের জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর আমাদের কাছে একটি আনন্দঘন শুভদিন। ২৪ ডিসেম্বর রাত ৯ টা থেকে আমাদের গির্জায় বড় দিনের প্রার্থনা শুরু হয়। যীশুর আগামনী বার্তা এ সভায় প্রাধান্য পায়। রাত ১২ টা ১ মিনিটে কাটা হয় জন্মদিনের কেক। পরে প্রার্থনা চলে রাত ১টা পর্যন্ত। আজ ২৫ ডিসেম্বর সকাল ৮ টায় আমাদের গির্জায় প্রার্থনা শুরু হয়। চলবে দুপুর ১ পর্যন্ত । ৪ ঘন্টার প্রার্থনা শেষে এদিন দুপুরে প্রীতি ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। এতে ১ হাজার ২০০ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নেবেন। বিকেলে সুধীজনের সাথে বড় দিনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। সান্তাক্লোজ বড়দিন উপলক্ষে শিশুদের মধ্যে উপহার সামগ্রী বিতরণ করেছে।
বাংলাদেশ খ্রিস্টান যুব এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শিমিয়োন হাজরা জয় বলেন, উৎসব ও নিরাপত্তার মধ্যে বড়দিন উদযাপনে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং জেলা পুলিশ আমাদের ব্যাপক সহযোগিতা করেছে। র্যাব, পুলিশ, আসনারসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের নিরাপত্তা দিয়েছে। তাদের সহযোগিতায় শেখ হাসিনা সরকারের আন্তরিকতায় আমরা নির্বিঘেœ আনন্দঘন পরিবেশে বড়দিন উদযাপন করতে পারছি। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গোপালগঞ্জ সদর আসনের এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।