বাসস
  ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৫৭

শাম্মী আহমেদ ও সাদিক আবদুল্লাহ নির্বাচন করতে পারছেন না

ঢাকা, ২ জানুয়ারি, ২০২৪ (বাসস): বরিশাল-৪ আসনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহমেদের আনা লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। 
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। ফলে শাম্মী আহমেদ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে পারছেন না। 
এদিকে বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতার বিষয়ে চেম্বার আদালতের দেয়া স্থগিতাদেশ চলমান থাকবে বলে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে সাদিক আবদুল্লাহও নির্বাচন করতে পারছেন না। 
গত ১৮ ডিসেম্বর প্রার্থিতা বাতিলের বিরুদ্ধে বরিশাল-৪ আসনের প্রার্থী শাম্মী আহমেদের রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করেন তিনি।
দ্বৈত নাগরিকত্ব ইস্যুতে প্রার্থিতা বাতিল হয় বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহমেদের। আপিল আবেদন শুনানি করে গত ১৫ ডিসেম্বর এ সিদ্ধান্ত দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে ইসির ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন শাম্মী আহমেদ। শাম্মী আহমেদ এবং একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ পরস্পরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন ইসিতে। শুনানি শেষে শাম্মীর প্রার্থিতা বাতিল হলেও বহাল থাকে পঙ্কজ নাথের। শাম্মী আহমেদ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও তা গোপন করেছেন বলে অভিযোগ ছিল পঙ্কজ নাথের। আপিলকারীর দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকার অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের সহায়তায় সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দেয় ইসি। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের সহায়তায় শাম্মী আহমেদের অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে জরুরি ভিত্তিতে ১৪ ডিসেম্বর ইসি সচিবালয়ে পাঠানোর পর প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর পঙ্কজ নাথের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ করেছিলেন শাম্মী আহমেদ।
বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট। 
এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ওই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুকের আনা আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার কোর্ট বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দিয়েছিলেন।
সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে আনা আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার কোর্ট হাইকোটের্র আদেশ স্থগিত করে আদেশ দেন। 
স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন অপর প্রার্থী জাহিদ ফারুক।
আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। কিন্তু দলের মনোনয়ন পান বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। যুক্তরাষ্ট্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব ও হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়ন বাতিল চেয়ে ইসিতে আপিল করেন জাহিদ ফারুক। আর জাহিদ ফারুকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ইসিতে আপিল করেন সাদিক আবদুল্লাহ। শুনানি শেষে ১৫ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন জাহিদ ফারুকের আপিল মঞ্জুর করে। সাদিক আবদুল্লাহর আপিল নামঞ্জুর করে সিদ্ধান্ত দেন ইসি। ফলে সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল হয়। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সাদিক আবদুল্লাহ হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্টে রিট করে প্রার্থিতা ফিরে পান সাদিক আবদুল্লাহ। যা আপিলে স্থগিত হলো।
সংবিধানের ৬৬ (২) (গ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন।’সংবিধানের উক্ত অনুচ্ছেদের অনুরূপ বিধানই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২(১)(৬) অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুয়ায়ী আনা তথ্য আমলে নিয়ে প্রার্থিতা বাতিল করে ইসি।
তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ৭ জানুয়ারি হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ।