বাসস
  ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:১৯

শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা মুখর

টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, ৪ জানুয়ারি, ২০২৪ (বাসস): গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের গোপালগঞ্জ আসন-৩। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এখানে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এলাকায় শিক্ষার হার বেড়েছে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনী এলাকার মানুষ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এলাকার কৃষি নির্ভর অর্থনীতি গতিশীল হয়েছে। সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক আবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি এই আসনের ভোটারদের আস্থা অবিচল। আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাটি হিসেবে পরিচিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। টুঙ্গিপাড়া - কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো খুবই শক্তিশালী। এখানে সংগঠনটি তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত। আসনটি আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রায় সব মানুষই আওয়ামী লীগের সমর্থক। এ আসনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়াকার্স পার্টি, বাসদ, সিপিবি বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। এ আসনে বিগত ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ লাখ ২৯ হাজার ৫শ’ ৩৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী বিএনপি’র এসএম জিলানী পান ১২৩ ভোট। দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ১ লাখ ৮৭ হাজার ১শ’ ৮৫ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি এ.জেড অপু শেখ পান ২ হাজার ৪শ’ ৩০ ভোট।  আগের নির্বাচন গুলোতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিএনপি ও অন্যান্য দলের প্রার্থীরা বরাবরই জামানত হারিয়েছেন।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে শেখ হাসিনার সাথে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী এম নিজাম উদ্দিন লস্কর, গণফ্রন্টের সৈয়দা লিমা হাসান, জাকের পার্টির মাহাবুর মোল্লা, বাংলাদেশ কংগ্রেসের শহিদুল ইসলাম মিন্টু ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শেখ আবুল কালাম।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পোস্টারে-পোস্টারে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকা। প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলছে মাইকিং। এছাড়া নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা বের করছেন খন্ড খন্ড মিছিল।
প্রার্থীরা ভোট পেতে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা ভোটারদের কাছে যচ্ছেন। ভোট চাইছেন। লিফলেট বিতরণ করছেন। অংশ নিচ্ছেন গণসংযোগে।
পক্ষান্তরে, শেখ হাসিনার পক্ষে নির্বাচনী সভা, জনসংযোগ, লিফলেট বিতরণ, মাইকিং সব কিছুই করা হচ্ছে। প্রচার প্রচারণায় শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা এখন মুখরিত। সেখানে ভোটাররা ৭ জানুয়ারি ভোট উৎসবের অপেক্ষায় রয়েছেন।
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, এই আসন থেকে আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। নির্বাচনের আগে আমি মাঠে ছিলাম না। আমি টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া আসনে নতুন মুখ। এ আসনে আমাদের দলের সাংগঠনিক তৎপরতা তেমন নেই। তবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলের কমিটি রয়েছে। এই কমিটি ও আত্মীয় স্বজনরা আমার নির্বাচনের মূল শক্তি। আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সুলতানশাহী গ্রামে । আমার পেশা ব্যবসা। বিগত পাঁচ বছর ধরে আমি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এর আগে আমি আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলাম। তখন থেকেই আমি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আজ থেকে প্রচার-প্রচারণা শুরু হচ্ছে। আমি নির্বাচনী এলাকায় যাব। পোস্টারিং করব। প্রচার প্রচারণা চালাবো। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাব। ভোট চাইবো। আশা করছি সম্মানজনক ভোট পাব।
জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী মাহাবুর মোল্লা বলেন, আমি গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমাদের দল নির্বাচন মুখী। আমরা নির্বাচনে আছি ও থাকবো। জাকের পার্টি মূলত মানবতা ও শান্তিকামী মানুষের জন্য কাজ করে আসছে। তাই আমরা আমাদের দলের প্রতীক গোলাপ ফুলের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দেব। আমি গোপালগঞ্জ জেলা জাকের পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক। টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলায় আমাদের দলের কমিটি রয়েছে। কমিটির সদস্যদের নিয়েই আমি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাবো। জাকের পার্টির দাওয়াত প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেব। ভোট পাব কি? পাব না। তা জানি না, তবে আমরা নির্বাচনের মাঠে থাকবো ইনশাল্লাহ।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনএনপি) প্রার্থী শেখ আবুল কালাম বলেন, আমি পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য। আমার বাড়ি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ভিমাডাঙ্গা উত্তরপাড়া গ্রামে। আমি দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছি। টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া এলাকায় আমার বংশের ও আত্মীয়-স্বজনদের ভোট রয়েছে। তাদের ভোট আমি পাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে নির্বাচন করে এর আগে সব প্রার্থী জামানত হারিয়েছে। আমি এই নির্বাচনে সম্মানজনক ভোট পেয়ে জামানত রক্ষা করতে পারব বলে আশা করছি।
গণফ্রন্টের প্রার্থী সৈয়দা লিমা হাসান বলেন, ১৫ দলীয় প্রগতিশীল ইসলামী জোটের অন্যতম দল জনতার কথা বলে পার্টি। আমি জনতার কথা বলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। গণ-ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। আমি গণ-ফ্রন্ট মহিলা পরিষদ পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। আমরা নির্বাচনের মাঠে আছি এটা জানান দিতেই এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। এখানে আমাদের সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। প্রচার প্রচারণায় নেমে যতটুকু গুছিয়ে নিতে পারি। তার উপর নির্ভর করেই ভোট প্রত্যাশা করছি।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী এম নিজাম উদ্দিন লস্কর বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর টুঙ্গিপাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। বিগত ১০ বছর ধরে আমি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলাম। ৫/৬ মাস আগে আমাদের দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি আত্মপ্রকাশ করেছে। আমি পার্টির গোপালগঞ্জ জেলা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য। জেলার উপজেলাগুলোতে আমাদের কমিটি নেই। তবে দ্রুতই আমরা উপজেলাগুলোতে শক্তিশালী কমিটি গঠন করব। আমার গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলি গ্রামে। এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা আছে। নির্বাচনে আমি জয়লাভ করতে পারব না। কিন্তু এর আগে প্রার্থীরা এ আসন থেকে জামানত হারিয়েছে। তারা ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার ভোট পেত। আমি এই রেকর্ড ভেঙে আরো বেশি ভোট পাবো বলে প্রত্যাশা করছি।
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, প্রচার, প্রচারনা ও নির্বাচনী সভা করে আমরা নৌকায় ভোট চাইছি। ভোটাররা ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। ৭ জানুয়ারি তারা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেবেন।