বাসস
  ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:৫৯
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:০৪

শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জ-৩ আসন মুখরিত শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায়

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ৪ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস): জেলার টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ-৩ আসন। এখানে অষ্টমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির প্রার্থী এম নিজাম উদ্দিন লস্কর, গণফ্রন্টের সৈয়দা লিমা হাসান, জাকের পার্টির মাহাবুর মোল্লা, বাংলাদেশ কংগ্রেসের শহিদুল ইসলাম মিন্টু ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শেখ আবুল কালাম ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন।
নির্বাচনকে ঘিরে এখন শেষ মুহুর্তের প্রচার-প্রচারণায় মুখরিত পুরো এলাকা। শেখ হাসিনার পক্ষে ভোট চাইতে প্রতিদিনই নেতা-কর্মীরা ভোটারদের ঘরে-ঘরে যাচ্ছেন। তারা উন্নয়ন ও ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণের জন্য ভোট চাইছেন। নির্বাচনী ইস্তেহার সম্বলিত লিফলেট তুলে দিচ্ছেন, পথসভা ও নির্বাচনী জনসভা করছেন। এসব জনসভায় প্রচুর মানুষের সমাগম হচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলছে মাইকিং। এছাড়া নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা বের করছেন খন্ড-খন্ড মিছিল। প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ভরে গেছে নির্বাচনী এলাকা। ভোটাররা উৎসব মুখর পরিবেশে ৭ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।    
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এলাকায় শিক্ষার হার বেড়েছে। নতুন-নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনী এলাকার মানুষ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এলাকার কৃষি নির্ভর অর্থনীতি গতিশীল হয়েছে। সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক আবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি এই আসনের ভোটারদের আস্থা অবিচল। আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো খুবই শক্তিশালী। এখানে সংগঠনটি তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত। আসনটি আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রায় সব মানুষই আওয়ামী লীগের সমর্থক। এ আসনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়াকার্স পার্টি, বাসদ, সিপিবি বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। এ আসনে বিগত ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ লাখ ২৯ হাজার ৫৩৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী বিএনপির এসএম জিলানী পান ১২৩ ভোট। দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ১ লাখ ৮৭ হাজার ১৮৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দি এ.জেড অপু শেখ পান ২ হাজার ৪৩০ ভোট। আগের নির্বাচনগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিএনপি ও অন্যান্য দলের প্রার্থীরা বরাবরই জামানত হারিয়েছেন।
নতুন ভোটার টুঙ্গিপাড়া সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী তনুস্কা বাইন, আহমেদ তামিম, দিলরুবা তাবাচ্ছুম বলেন, আমরা নতুন ভোটার। আমাদের প্রথম ভোট আমরা স্মার্ট বাংলাদেশর পক্ষে দেব। আমরা তরুণরা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে উৎসবের আমেজে ভোট দেব। এখন আমরা ভোট উৎসবের জন্য প্রতিক্ষা করছি।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের ভ্যানচালক উজির মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ হাসিানার লিফলেট আমার বাড়িতে নেতা-কর্মীরা পৌঁছে দিয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা আমার কাছে ভোট চেয়েছেন। এখানে ভোটকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জন্য বিনামূল্যে চাল, স্বল্পমূল্যে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। রাস্তা-ঘাট সহ সব কিছুর উন্নয়ন করেছেন। এজন্য আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।
কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রামের বাসিন্দা ও শিক্ষক মো. শফিকুর রহমান বলেন, এখনে ভোটের আমেজ অনেক অগেই শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এখান থেকে বরাবর ভোট করেছেন। তিনি আমাদের ভোটে প্রধানমন্ত্রী হন। এটি আমাদের কাছে গর্বেব। তাই তাঁকে ভোট দেওয়ার জন্য আমরা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেব। সেই প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি।    
গোপালগঞ্জ ৩ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, এই আসন থেকে আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সুলতানশাহী গ্রামে। নির্বিঘেœ টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছি। ভোট চাইছি। আশা করছি, এখান থেকে সম্মানজনক ভোট পাব।
জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী মাহাবুর মোল্লা বলেন,  আমরা নির্বাচনে আছি। এখানে নির্বাচনী পরিবেশ রয়েছে। আমরা আমাদের দলের প্রতীক গোলাপ ফুলের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি । আমি বিনা বাধায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি । জাকের পার্টির দাওয়াত প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি। আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব ইনশাল্লাহ।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনএনপি) প্রার্থী শেখ আবুল কালাম বলেন, এখানে ভোটকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আমি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। ভোট আমাদের দল সব নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করে আসছে। এখানে অবাধ নির্বাচন হবে।
গণফ্রন্টের প্রার্থী সৈয়দা লিমা হাসান বলেন, আমরা নির্বাচনের মাঠে আছি। জনসংযোগ, লিফলেট বিতরণসহ সব কাজ আমি নির্বিঘেœ করতে পারছি। প্রচার প্রচারণায় নেমে আমি সন্তুষ্টু। এ আসনে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক ভোটের পরিবেশ আছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী এম. নিজাম উদ্দিন লস্কর বলেন, আমি ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। তারা আমাকে ভোট দেবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। আমি এ আসন থেকে জিততে পারব না। কিন্তু  প্রচার-প্রচারণা , জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করে আমি খুশি। কারণ এখানে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বিঘেœ প্রচার-প্রচারণার কাজ করতে পারছি।
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, প্রচার, প্রচারণা, জনসংযোগ ও নির্বাচনী সভা করে আমরা নৌকায় ভোট চাইছি। নির্বাচনী এলাকার উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও ভোট কেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি করেছি। তারা ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। ভোটাররা ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। ৭ জানুয়ারি তারা উৎসবমুখর পরিবেশে ভেটে দেবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ভোট দিতে কোটালীপাড়াবাসী উম্মুখ হয়ে আছেন। ৭ জানুয়ারি আমরা ভোটের বিপ্লব ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করব।