বাসস
  ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:১০
আপডেট  : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:১৩

মধুপুর গড়ের খেজুরের রস ও চাটি গুড়ের অপার সম্ভাবনা

॥ ইফতেখারুল অনুপম ॥
টাঙ্গাইল, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪ (বাসস): টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে জেঁকে বসেছে শীতের তীব্রতা। শীতের আমেজে পিঠাপুলির ধুম পড়েছে। খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে বেড়েছে গাছিদের ব্যস্ততা। অনেকেই মৌসুম চুক্তিতে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছে। গাছি আর কারিগররা খেজুর গুড় বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। গুনে মানে ভালো থাকায় চাহিদাও বাড়ছে। আশপাশের উপজেলা, জেলা থেকে গুড় কিনতে আসছে লোকজন। চিকিৎসকরা বলছে খেজুর রস ও গুড় মানবদেহের জন্য উপকারি। তবে সবার সাবধানে থাকা প্রয়োজন নিপা ভাইরাস থেকে।
পাহাড়ী গড় এলাকার আনারসের মতো খেজুরের রস ও চাটি গুড়ের উৎপাদন অর্থনৈতিক ভাবে অপার সম্ভাবনা তৈরী করতে পারে। হয়ে উঠতে পারে গুড়ের জন্য বিখ্যাত এলাকা। মধুপুরের উর্বর লাল মাটি কৃষি ফসলের জন্য উপযোগী থাকায় বাণিজ্যিক ভাবে খেজুর চাষ হলে রস ও গুড়ের জন্য অঞ্চলটি বিখ্যাত হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।   
টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে চলছে খেজুরের রস সংগ্রহ আর গুড় তৈরি। কুয়াশা ঢাকা ভোরে মাটির হাড়িতে ভরছে লাল মাটির খেজুরের রস। কাঁধে নিয়ে ছুটছেন রসের হাড়ি। বড় কড়াইয়ে কাঁচা রস ঢেলে আগুনে জাল করছেন শীতের সকালে। আগুনের তাপে জলীয় বাষ্পে ঘন হচ্ছে রসের কড়াই। চারপাশ ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে। যতই সময় ঘনিয়ে আসছে দেখা দিচ্ছে ঘন রসের ঝোলাগুড়। এ যেন গাছি আর কারিগরের হাতের যাদু। 
কাঠের যন্ত্রের ঘর্ষনে বেড়িয়ে আসছে গুড়। মাটির চাটির উপরে কালো পলি বিছিয়ে ঢেলে দিচ্ছে গরম সিদ্ধ রসের ঘন ছানা। একটু পরেই জমাট বেঁধে রূপ নেয় গুড়ে। দারুন  রঙ আর পরিবেশ সম্মত উপায়ে তৈরি হচ্ছে খেজুর গুড়। মেডিসিন বা কেমিক্যাল না দেওয়ায় মধুপুরের পাহাড়িয়া এলাকার পিরোজপুর গ্রামের তৈরিকৃত এ গুড়ের চাহিদা বেড়েই চলছে। প্রতিকেজি গুড় সাড়ে চারশ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। গুড় কিনতে আশপাশের উপজেলা থেকে আসছেন ক্রেতারা। 
গাছিরা বলছেন পুরো শীতজুড়ে চলবে গুড় তৈরির কার্যক্রম। পিরোজপুর গ্রামের জোয়াহের আলী (৫৫) জানান, অন্যান্য জেলার গুড়ের চেয়ে লাল মাটির গুড় স্বাদে গুনে ঘ্রাণে অনণ্য। ভেজাল মুক্ত হওয়ায় স্থানীয়দের চাহিদা বেড়েছে। এমন গুড় পেয়ে খুশি স্থানীয়রা। গুনেমানে ভালো থাকায় দুর দূরান্ত থেকেও আসছেন ক্রেতারা। 
তারা মিয়া ৪৫) জানান, তার ১৫ টি খেজুর গাছ এ বছর রস সংগ্রহের জন্য চুক্তির ভিত্তিতে গাছিদের কাছে ইজারা দিয়েছেন। ভালো রস আসছে। এ রস নিয়ে গাছিরা তাদের গ্রামে গুড় তৈরি করছে। 


আবুল হোসেন (৫৪) জানান, বাজারে গুড়ের চেয়ে তাদের এলাকার তৈরিকৃত গুড় গুণেমানে স্বাদে গন্ধে অনেক ভালো। এজন্য দূর দূরান্ত থেকে লোকজন গুড় কিনতে আসছেন। খেজুরের রস ও গুড় তৈরির কারিগর মহসিন মিয়া (৫০) জানান, রাজশাহী থেকে টাঙ্গাইলের মধুপুরে গাছ কাটতে এসেছি। এই জেলায় আমরা ১২ বছর ধরে শীত মৌসুমে গাছ কেটে রস সংগ্রহ ও রস থেকে গুড় তৈরি করি। খেজুরের রস অনেক ভালো। আমাদের সংগ্রহ করা রস ও গুড়ের মান ভালো থাকায় এর চাহিদা বেশি। তার মতে মধুপুরের খেজুরের রসের গুণগত মান অনেক ভালো। 
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান বলেন, খেজুর রসে উপকারিতা আছে, আবার ক্ষতির কারণও হতে পারে। নিপা ভাইরাসের আক্রমনের হাত থেকে রক্ষার জন্য পরিমিত তাপমাত্রায় সিদ্ধ করে খেতে হবে।  
কালের পরিক্রমায় খেজুর গাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে রসের উৎপাদন মোটামুটি ভালো হচ্ছে। আহরিত রসের খেজুরের গুড় পেয়ে খুশি আনারসের জনপদের মানুষেরা। যদি আনারসের মতো খেজুরের চাষ করা যায়, তবে আনারসের মতো এই এলাকার খেজুর গুড়ের সুনামও ছড়িয়ে পড়বে দেশ ও বিদেশে, এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।