বাসস
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২:১১

আইনজীবীদের অংশগ্রহণ ছাড়া দেশে ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় : প্রধান বিচারপতি

ঢাকা, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ (বাসস) : প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, বিচার বিভাগের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে আইনজীবীদের অংশগ্রহণ ব্যতীত দেশে ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে তালিকাভুক্ত নবীন আইনজীবীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। অনুষ্টানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিবৃন্দ, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক, এডভোকেট মোঃ আবদুন নূর দুলাল; সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তাবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক নবীন আইনজীবী।
নবীন আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবিধানে বর্ণিত যে কোনো মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হন। তাই দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধারের  অন্যতম অনুঘটক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সদস্যরা। কেননা যে ব্যক্তির অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তিনি সবার আগে আপনার কাছেই আসেন তার সমস্যার কথা খুলে বলতে। মনে রাখবেন,  বার ও বেঞ্চ-উভয়ের সমন্বয়েই বিচার বিভাগ। তাই বিচার বিভাগের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে আপনাদের অংশগ্রহণ ব্যতীত দেশে ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
বিচার বিভাগের ইতিহাস উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রত্যয়, আপসহীন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার সংগ্রামের জন্য যুগে যুগে আইনজীবীরা আমাদের সমাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন। অতীতে আমাদের মহান সংবিধানের বিধানকে ভূলুণ্ঠিত করে দেশে যখনই স্বৈরতন্ত্র কায়েম হয়েছে কিংবা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে-তখন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীরা রাজপথে নেমে এসেছেন। সুপ্রিমকোর্টের নেতাদের স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে কোনোরূপ আপস না করে হাসিমুখে কারাবরণ গ্রহণ করেছেন-এমন দৃষ্টান্ত অনেক রয়েছে।
মামলা জটের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রায় ৪০ লাখ মামলার ভারে বিচার বিভাগ আজ ন্যুজ। এছাড়াও, বিচারক স্বল্পতা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব, বাজেট স্বল্পতাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আমাদেরকে প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হচ্ছে। অধস্তন আদালতের কার্যকর তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাসকল্পে আমার পূর্বসূরি প্রধান বিচারপতি দেশের আটটি বিভাগের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমন্বয়ে আটটি মনিটরিং কমিটি গঠন করেছিলেন। এরই মধ্যে আমরা মনিটরিং কমিটির সুফল পেতে শুরু করেছি। কিন্তু একজন বিচারপতির পক্ষে বড় একটি বিভাগের সবগুলো জেলার কার্যক্রম তত্ত্বাবধান দুরুহ একটি ব্যাপার। তাই মনিটরিং প্রক্রিয়াকে আরও জোরদার করার জন্য আমি দেশের বৃহত্তর বিভাগগুলোর জন্য একাধিক হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিকে দায়িত্ব দিয়েছি। বর্তমানে দেশের আটটি বিভাগের জন্য মোট ১৩ জন বিচারপতি সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত আছেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আইন পেশার মাধ্যমে অর্থ-বিত্ত-বৈভব অর্জন নয়; বরং তাঁদের মূল্য লক্ষ্য ছিলো আইনি সহায়তার মাধ্যমে মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করা। তাই অসহায় মানুষকে আইনি প্রতিকার প্রদানের মাধ্যমে দেশের মানুষের অধিকার রক্ষায় তাঁরা নিজেদের সম্পূর্ণরূপে আত্মোৎসর্গ করেছিলেন। মনে রাখবেন, আপনারা সেই ঐতিহ্যের  উত্তরাধিকারী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য বীর  মুক্তিযোদ্ধাগণ তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিলো আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে বিরাজ করবে সাম্য ও  সামাজিক ন্যায় বিচার, যা হবে সম্পূর্ণরূপে শোষণমুক্ত এবং যেখানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি হবে আইনের শাসনের ব্যতিক্রমহীন চর্চা। বঙ্গবন্ধুর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের অন্যতম কুশীলব বাংলাদেশের আইনজীবীগণ। আইনজীবীগণ বিচারপ্রার্থী মানুষের অধিকার রক্ষায় কোর্ট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তাই আমি আশা করি, সুপ্রিম কোর্ট বারের নবীন সদস্যগণ তাদের সিনিয়রদের দেখানো পথ অনুসরণ করে এদেশের সাধারণ মানুষকে আইনি সেবা প্রদানের মহৎ ব্রত নিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে আইন পেশায় মনোনিবেশ করবেন। 
প্রধান বিচারপতি বলেন, একজন বিচারপ্রার্থী মানুষ যখন ন্যায় বিচার প্রাপ্তির আশা নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে আসেন তখন প্রথমেই তিনি একজন আইনজীবীর দারস্থ হন। বিচারপ্রার্থীগণ আইনের জটিল নিয়ম কানুন জানেন না, তাদের পক্ষে জানা সম্ভবও নয়। তারপরেও তারা পরম নির্ভরতায় আপনাদের উপর তার সম্পদ ও স্বাধীনতা রক্ষার গুরুভার অর্পণ করেন। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের মধ্যকার এই নির্ভরতার সম্পর্ক আপনাদের জন্য একটি পবিত্র আমানত। তাই এই আমানত রক্ষা করার বিষয়ে আইনজীবীদের সবসময় সচেতন থাকতে হবে।  
প্রধান বিচারপতি নবীন আইনজীবীদের উদ্দ্যেশে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আপনারা সবাই আপনাদের পেশাগত জীবনে এই গুরু দায়িত্বটি সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করবেন।’