শিরোনাম
॥ মাজহারুল আলম মিলন ॥
পীরগঞ্জ (রংপুর), ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ (বাসস) : প্রতি বছর রবি ও খরিপ মৌসুমে দুই বার ভুট্টা চাষ করে থাকেন কৃষকরা। চলতি রবি মৌসুমে জেলার ৮টি উপজেলা ও মেট্রো এলাকায় ২১ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯২৮ মেট্রিক টন। রংপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন ভুট্টা চাষের ওই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, চলতি বছর রবি মৌসুমে রংপুর কৃষি অধিদপ্তরের অন্তর্ভুক্ত ৮টি উপজেলা ও মেট্রো এলাকায় ২১ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য ছিল। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি অতিরিক্ত ১০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষি বিভাগের প্রণোদনার আওতায় উন্নতমানের ভুট্টার বীজ সরবরাহ, প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণসহ মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারীদের সহযোগিতা ও কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় জেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই মৌসুমে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় বরাবরের মতো অধিক জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। গতবছর এই উপজেলায় ভুট্টার চাষ হয়েছিল ৬ হাজার ৮০০ হেক্টর। এ মৌসুমে চাষ হয়েছে ৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে।
এছাড়া মিঠাপুকুর উপজেলায় ৩ হাজার ৭৪০ হেক্টর, বদরগঞ্জ উপজেলায় ২ হাজার ৮২০ হেক্টর, গংগাচড়া উপজেলায় ২ হাজার ৪০০ হেক্টর, পীরগাছায় ২ হাজার ২৮০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর, তারাগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ১৩০ হেক্টর, কাউনিয়া উপজেলায় ৮৭৫ হেক্টর ও মেট্রো এলাকায় ১৭৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে।
গতবছরের তুলনায় এবছর রবি মৌসুমে অতিরিক্ত প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে জেলায় প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ১১ মেট্রিক টন করে ভুট্টা উৎপাদন সম্ভব। গত বছর জেলার কৃষকেরা জমি থেকেই কাঁচা ভুট্টা ভালো মূল্যে বিক্রি করতে পেরেছেন। অনেকেই শুকানোর পর বিক্রি করে অধিক লাভবান হয়েছেন। গত বছর ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ায় এবং কৃষকরা লাভবান হওয়ায় চলতি বছর জেলার কৃষকদের মধ্যে ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। এবছর জেলার পতিত জমিসহ চর অঞ্চলে ভুট্টা চাষ বেশি হয়েছে।
পীরগঞ্জ উপজেলার ঘাষিপুরের কৃষক মানিক উল্লা, কুয়েতপুরের আবুল কাশেম, বাবলু, আব্দুল মতিন, হাফিজুর, কাটাদুয়ারের জাকির হোসেন ও সৈকত জানান, করতোয়া নদীর চরে পতিত জমি গুলোতে ভুট্টা চাষ করলে সেচের প্রয়োজন কম হয়। চরাঞ্চলের কৃষকেরা কৃষি বিভাগের সাথে পরামর্শ করে এসব জমিতে অধিক হারে ভুট্টা চাষ করেছেন। দিনে দিনে চাষীদের আগ্রহ বাড়ছে। ভুট্টা চাষে সফলতা এসেছে এবং ফলন ভালো হবারও সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি বিভাগের সরবরাহ করা উন্নত জাতের ভুট্টার বীজে চাষ করেছেন তারা। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে কৃষকেরা অনেকেই ভুট্টা চাষ করেছেন। গত বছরের মতো এবারও বাজার মূল্য ভালো পাওয়া যাবে বলেই প্রত্যাশা তাদের। অধিক লাভের আশায় এবার উপজেলায় আগাম জাতের ভুট্টা চাষ বেশি হয়েছে।
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, কৃষিবান্ধব সরকারের কৃষি প্রণোদনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পরামর্শ ও নির্দেশনায় কৃষকরা বাণিজ্যিক ভাবে ভুট্টা চাষে উৎসাহিত হচ্ছে। এছাড়া ভুট্টা থেকে মাছ ও মুরগির খাদ্য উৎপাদন এবং গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এটি লাভজনক। এ মৌসুমে উপজেলার ১৮ হাজার ২০০ কৃষককে প্রণোদনার আওতায় ধান, গম, ভুট্টা, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ ও বিনামূল্যে সার সরবরাহ করা হয়েছে।