শিরোনাম
॥ রোস্তম আলী মন্ডল ॥
দিনাজপুর, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ (বাসস): ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঘাটতি মিটাতে সরকার তেল জাতীয় ফসলের আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বৃহত্তর দিনাজপুরো ৩টি জেলার বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সরিষা চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। দিনাজপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথ্যে অনুযায়ী দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। এই চাহিদা পূরণে সরকার দেশে তেলজাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। গত ৩ বছরে এই প্রকল্পের অধীনে কৃষি বিভাগের কর্মতৎপরতায় আশাতীত ফলাফল পাওয়া গেছে। এই প্রকল্পের অধীনে প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তে কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের মাধ্যমে দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলিতে রূপান্তর করে অধিক ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। বিশেষ করে সরিষা, তিল, সূর্যমুখী, চীনা বাদাম, সয়াবিন উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষকের সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন করাই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য।
তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়ের ১০ উপজেলা কাজ শুরু করা হয়। ইতোমধ্যে ভালো ফলন ও আশানুরূপ দাম পাওয়ায় ৩ জেলার সব উপজেলাতে ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।
স্থানীয় বেশ কিছু কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আমন ধান তোলার পর অনেক জমি পরবর্তী বোরো ধান রোপণের আগ পর্যন্ত অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকত। কিন্তু বর্তমানে কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকেরা মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন।
তারা জানান, সরিষা তোলার পর অনায়াসে বোরো ধান রোপণ করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা আবাদের কারণে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিকর রোগ-বালাই দমনেও সহায়ক হচ্ছে।
তেলজাতীয় ফসলের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কৃষি বিভাগের সম্প্রসারণ প্রকল্পের দেওয়া তথ্যমতে, গত ৩ বছরে সরিষার আবাদ বেড়েছে। গত তিন বছরে রবি মৌসুমে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায় মোট ২৫ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়। এতে ফলন হয় ৩৯ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় তিন জেলায় গত ৩ বছরে সরিষার আবাদ বেড়েছে। গত বছর রবি মৌসুমে মোট ৪৫ হাজার ৫২৮ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়। ফলন হয় ৬৯ হাজার ৬৮৯ মেট্রিকটন । চলতি বছর রবি মৌসুমে ৫৬ হাজার ৭৬৬ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। সম্ভাব্য ফলন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৬ হাজার ২৮৪ মেট্রিকটন।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, তিনি চলতি বছর আড়াই একর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। আগে নিজের প্রয়োজনে সামান্য জমিতে সরিষা চাষ করে আলু আবাদ করতেন। কিন্তু বর্তমানে সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় এবং তেমন খরচ না থাকায় সরিষার আবাদ বাড়িয়েছেন। সেই সাথে সরিষা আবাদ করলে পরবর্তী ফসলে সার কম খরচ হয়। ফলে ফসলের উৎপাদন খরচ কমে।
জেলার বিরামপুর উপজেলার কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, আগে এই সময়ে তার জমি পড়ে থাকত। কিন্তু এখন কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি গত ৩ বছর ধরে সরিষার আবাদ করছেন। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের দিনাজপুর কৃষি গবেষণা বিভাগের উপ-পরিচালক এসএম গোলাম ফারুক বলেন, ‘বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলে আমন আবাদের পর বোরো রোপণের আগ পর্যন্ত জমিগুলো অনাবাদি পড়ে থাকে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই অঞ্চলের জমিগুলো চাষের আওতায় এসেছে। তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে তেলের ঘাটতি পূরণ ও বৈদেশিক নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
গত ৩ বছরে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়ার কথা উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কৃষকেরা সরিষার আবাদের মাধ্যমে একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি বৈদেশিক নির্ভরতা কমছে। আবার সরিষা আবাদের কারণে পরবর্তী ফসলে সারের খরচও কমছে। জমির উর্বরতাও বাড়ছে।’