শিরোনাম
॥ এস এম মজিবুর রহমান ॥
শরীয়তপুর, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ (বাসস) : ২০২০-২১ অর্থ বছরে সরকারের ভোজ্য তেলের জাতীয় ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ তেল ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে জেলায় উন্নত জাতের স্বল্পমেয়াদি সরিষার আবাদের ফলে চার বছরের ব্যবধানে ইতিমধ্যে জাতীয় লক্ষমাত্রা অতিক্রম করে ৬২.৭৫ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধি করার কথা জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। এর মাধ্যমে শুধু জেলার নিরাপদ ভোজ্য তেলের ঘাটতিই কমবে না জাতীয় পর্যায়ের ঘাটতি কমাতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ বছর জেলায় অধিক তেল উৎপাদনশীল জাতসহ স্থানীয় জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নুর আহমেদ বাসস’কে বলেন, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে ভোজ্য তেলের ৪০ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কৃষি বান্ধব সরকারের প্রণোদনা ও সহায়ক কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে ইতিমধ্যে আমরা লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৬২.৭৫ শতাংশ সরিষার আবাদ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। ২০২১-২২ অর্থ বছরে শরীয়তপুরে অধিক তেল উৎপাদনশীল উন্নত জাতসহ দেশিয় জাতের সরিষা আবাদ হয়েছিল ১০ হাজার ৮৮০ হেক্টরে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সেখানে সরিষার আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৪৫০ হেক্টরে। আবাদকৃত জাতের মধ্যে রয়েছে স্বল্প মেয়াদি বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৭, বিনা-৯ ও বিনা-১০ জাতের সরিষা।
আমরা কৃষকদেরকে স্বল্প মেয়াদি রোপা আমন বিনা-৭, বিনা-১৭, ব্রি ধান-৬২ ও ব্রি ধান-৭৫ জাতের ধান আবাদে উদ্বুদ্ধ করছি। যাতে রোপা আমনের ফলন তুলে অনায়াসেই কৃষক ওই জমিতে বোরো আবাদ করতে পারেন। রোপা আমনের প্রচলিত জাতের আবাদ করলে ফলন পেতে কৃষকের সময় লাগে জাত ভেদে ১২৫ থেকে ১৪০ দিন। যা বোরো আবাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। তাই বোরো আবাদ স্বাভাবিক রেখে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা উৎপাদন বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে আমরা বিভিন্ন উন্নত জাতের স্বল্প মেয়াদী জাতের সরিষা আবাদে কৃষকদেরকে পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে আসছি। যাতে বোরোর মধ্যবর্তী অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা আবাদ করে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষক অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন। এতে করে শুধু কৃষক পর্যায়ে নিরাপদ ভোজ্য তেলের ঘাটতিই কমবে না জাতীয় ঘাটতি পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভুমিকা পালন করবে। কমবে ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা।
জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের বোরোকাঠি গ্রামরে কৃষক আবুল হাশেম সরদার বলেন, আগে আমরা স্থানীয় জাতের রোপা আমন ধান আবাদ করলে বোরো আবাদের মাঝখানে সরিষা আবাদ করার সুযোগ পেতাম না। তবে গত দুই বছর যাবত কৃষি বিভাগের পরামর্শে বিনা-৭ জাতের রোপা আমন করাতে ধান কেটে আবার বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করছি। এতে খুব সহজেই ওই জমিতে বোরো আবাদ করতে পারছি। মাঝ খান থেকে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে বিঘাপ্রতি সাড়ে ৭-৮ মণ সরিষাও পেয়ে যাচ্ছি।
ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নের চর ঠেঙ্গারবাড়ি গ্রামের কৃষক মো: কামাল উদ্দিন বলেন, বাজারে খাবার তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমরা গত তিন বছর যাবত বেশি তেল হয় এমন জাতের সরিষার আবাদ বাড়িয়েছি। তাই গত দুই বছর যাবত নিজেদের সরিষা ভাঙিয়ে তেল খেতে পারছি। এখন আর বাজার থেকে বেশি দামে সয়াবিন তেল কিনতে হয় না। নিজেরা যেমন নিরাপদ সরিষার তেল খেতে পারছি, বিক্রি করতে পারছি আবার আত্মীয়-স্বজনকেও কিছু দিতে পারছি।