শিরোনাম
॥ মাজহারুল আলম মিলন ॥
পীরগঞ্জ (রংপুর), ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ (বাসস): রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২৩ হাজার ১৫২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, চলতি বোরো মওসুমে খাদ্যে উৎপাদনের পীরগঞ্জ উপজেলায় গত ২৫ জানুয়ারি থেকে পীরগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়নসহ পৌরসভা এলাকায় কুয়াশা ও শীত উপেক্ষা করে বোরো চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকেরা। সরিষা ও আলু উত্তোলনের পর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ শতভাগ ধানের চারা রোপণ কার্যক্রম চলবে। নির্বিঘেœ বোরো ফসল উদ্পাদনের জন্য কৃষি বিভাগ কৃষকদের সঠিক সময়ে চারা রোপণ সুষম সারের ব্যবহার এলএলপি কার্যক্রম বাস্তবায়নসহ আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে উৎসাহিত করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় এমপি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী’র সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনা ও পরামর্শে এবং কৃষি বান্ধব সরকারের কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষকের মাঝে বিনামুল্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ও সার বিতরণ এবং কৃষি বিভাগের মাধ্যমে আধুনিক ধান চাষাবাদ প্রযুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে উপজেলার বেরো ধান ফসলের আবাদ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের খাদ্যে স্বয়ংসর্ম্পুণতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। চলতি বোরো মওসুমে কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে হাইব্রিড ও উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ও সার বিনামূল্যে ১৪ হাজার কৃষককে প্রদান করা হয়েছে।
পীরগঞ্জ কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি মওসুমে বোরো চাষে অধিক ও ভালো মানের ফলন পাওয়ার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের কাছে গিয়ে ইরি বোরো ধানের সফল চাষে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। যেসব জমিতে চাষ করা হচ্ছে ইরি-বোরো ধান। তার সার্বিক পরিচর্যার জন্য কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। যেসব কৃষক আমন ধান কাটার পর আলু বা সরিষা চাষ করেননি, ওই কৃষকরা আগাম সেই সব জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন। চলমান মওসুমে হিরা-১, হিরা-২, ব্রিধান-৭৪, ব্রিধান-৮৮, ব্রিধান-৮৯, ব্রিধান-৯২, ব্রিধান-১০২ এবং হাইব্রিডের বিভিন্ন জাত সমুহসহ স্থানীয় জাতের কিছু ধান চাষ বেশি হচ্ছে। কৃষকেরা ভোর হতেই বীজতলা থেকে বোরো ধানের বীজ তুলে বোরো চাষে প্রস্তুত করা জমিতে চারা রোপণ করছেন। ভোররাত থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত বোরো জমি প্রস্তুত করতে কৃষকেরা পাওয়ার টিলার ও মহেন্দ্র দিয়ে চাষ করছেন জমি। অনেকে আগাম আলু উত্তোলনের পর ওই জমিতে রোপণ করছেন বোরো ধানের চারা। বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
রংপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, জেলার ৮টি উপজেলা ও মেট্রো এলাকায় বোরো মওসুমে মেট্রো এলাকায় ৩০৭২ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ৪৯৬৩ হেক্টর জমিতে উফশী, সদর উপজেলায় ২৪৭২ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ৫০৬৩ হেক্টর জমিতে উফশী, কাউনিয়া উপজেলায় ২৪৯৯ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ৫০৯৮ হেক্টর জমিতে উফশী, গঙ্গাচড়া উপজেলায় ৫২৯২ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ৫৭১৪ হেক্টর জমিতে উফশী, মিঠাপুকুর উপজেলায় ১৬৮১২ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ১৭৫২০ হেক্টর জমিতে উফশী, পীরগঞ্জ উপজেলায় ১০৮৬৪ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ১২২৮৮ হেক্টর জমিতে উফশী, পীরগাছা উপজেলায় ৬১৮৬ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ১০১১২ হেক্টর জমিতে উফশী, বদরগঞ্জ উপজেলায় ৪০৩৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ১২৬৬০ হেক্টর জমিতে উফশী, তারাগঞ্জ উপজেলায় ৩৫৭৮ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ৪১৮২ হেক্টর জমিতে উফশীসহ ৫৪৮১০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ৭৭৬০০ হেক্টর জমিতে উফশীসহ সর্বমোট ১৩২৪১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।হাইব্রিডে ২৭০৭৬১ টন ও উফশীতে ৩২২০৪০ টনসহ ৫৯২৮০১ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
উপজেলার বোরো হাইব্রিড চাষি মিলনপুরের আব্দুর রাজ্জাক, নজরুল ইসলাম, মকিমপুরের পার্থ কুমার, সুজিত চন্দ্র মহন্ত,বোরো উফশী চাষি কেশবপুরের শাহাদত হোসেন, মাহান্দার নেওয়াব, গঙ্গাঁরামপুরের আব্দুল হাদী ও আব্দুল কাফিসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগাম চারা রোপণ করায় ক্ষেতে ফসল ভালো উৎপাদন হয়। আর সারি-সারি করে ধানের চারা রোপণ করার ফলে পরিচর্যায় স্বস্তি মিলে। এছাড়া ক্ষেতে রোগবালাই কম হওয়ায় অন্যান্য ফসল থেকে শতকরা ২০ভাগ উৎপাদন বেশি হবে।
জেলার রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, চলতি মওসুমে শীতে বীজ তলার কৃষকদের সচেতনতা ও পরিচর্যার কারনে চারার অবস্থা ভাল থাকায় কৃষকেরা বেশ স্বস্থিতে রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বোরো মৌসুমে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বাম্পার ধানের ফলন আশা করা যাচ্ছে।