শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১৩ মার্চ, ২০২৪ (বাসস) : গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট
(বিনা) উদ্ভাবিত মানবদেহের সহনশীল বিনা খেসারী ১ রেকর্ড পরিমাণ ফলন দিয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলায় প্রতি হেক্টরে এ জাতের খেসারী ১ হাজার ৯শ’ কেজি উৎপাদিত হয়েছে। প্রচলিত জাতের খেসারী প্রতি হেক্টরে ৭শ’ কেজি উৎপাদিত হয়। প্রচলিত জাতের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ উৎপাদন দিয়েছে বিনা খেসারী ১।
বিনা চাষে অনুর্বর নিচু জমিতে এ খেসারী আবাদ করা যায়। রোগ বালাই তেমন নেই। এ জাতের খেসারীতে মানব দেহের ক্ষতিকর বেটা অকজাইল এ্যামাইনো এলানিন নেই। বোপনের ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যেই ক্ষেত থেকে ফসল তোলা যায়। এ ফসল চাষাবাদ করে গোপালগঞ্জের কৃষক লাভবান হয়েছেন।
গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র জানিয়েছে, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলার ২৬ একর জমিতে ৫০টি প্রদর্শনী প্লটে এ জাতের খেসারী আবাদ করা হয়। প্রতি প্লটেই রেকর্ড পরিমাণ খেসারী উৎপাদিত হয়েছে।
কাশিয়ানী উপজেলার দক্ষিণ ফুকরা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি এ বছরই প্রথম বিনা খেসারী ১ আমার ৫২ শতাংশ নি¤œ ও অনুর্বর জমিতে আবাদ করেছি। প্রচলিত জাতের তুলনায় এ খেসারীর প্রায় তিনগুণ ফলন পেয়েছি। এ জাতের খেসারীতে রোগবালাই নেই বললেই চলে। তাই অধিক উৎপাদন পেয়ে লাভবান হয়েছি।
কাশিয়ানী উপজেলার বেথুড়ি ইউনিয়নের নড়াইল গ্রামের বাসুদেব বিশ্বাস বলেন, এ মৌসুমের যে কোন ফসলের তুলনায় বারি খেসারী আবাদ করে অধিক লাভের টাকা ঘরে তুলেছি। আমার দেখাদেখি আমাদের গ্রামের কৃষক এ খেসারী আবাদের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
বিনা প্রধান কার্যালয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (গবেষণা) ড. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার জমি নিচু ও অনুর্বর। এখানে সাধারনত কৃষক একটি ফসল ফলিয়ে থাকে। এ জেলার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বিনা উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল আবাদ সম্প্রসারেণে আমরা কাজ করে যাচ্ছে। বিনা খেসারী ১ এ জেলায় কৃষকে রেকর্ড পরিমান ফলন দিয়েছে। প্রচলিত জাতের খেসারীতে মানব দেহের ক্ষতিকর বেটা অকজাইল এ্যামাইনো এলানিন মাত্রা অতিরিক্ত পরিমানে রয়েছে। পক্ষান্তরে বিনা ১ জাতের খেসারীতে ওই উপাদান মানব দেহের সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। এটি মানব দেহের কোন ক্ষতি করবেনা। এ খেসারী মানুষ নিরাপদে খেতে পারবেন। এ জাতের খেসারী আবাদ করে কৃষক যেমন উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারবেন, তেমনি লাভবান হবেন।
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, এ জেলার কৃষক প্রতি হেক্টরে এ জাতের খেসারী ১ হাজার ৯শ’ কেজি উৎপাদন করেছে। জাতীয় পর্যায়ে আমাদের দেশে প্রতি হেক্টরে খেসারীর গড় উৎপাদন মাত্র ৭শ’ ৫০ কেজি। বিনা খেসারী ১ বাংলাদেশর প্রচলিত যে কোন জাতের খেসারীর তুলনায় সবচেয়ে বেশি ফলন দিতে সক্ষম। এ ছাড়া এ জাতের বীজ আগামী বছরের আবাদের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। এটির আবাদ সম্প্রসারিত হলে সারাদেশে খেসারী বিপ্লব ঘটবে। আমদানী নির্ভরতা কমবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বিধার রায় বলেন, গোপালগঞ্জে জেলার ৫ উপজেলায় ৮ হাজার ৯শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে খেসারীর আবাদ হয়। কৃষক বিনা ১ জাতের খেসারী আবাদ সব জমিতে সম্প্রসারিত করলে এ জেলায় খেসারীর উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। কৃষক লাভবান হবেন।