শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া, (গোপালগঞ্জ), ১৪ মার্চ, ২০২৪ (বাসস):গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ পরমাণুু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত বিনামসুর-৮ বাম্পার ফলন দিয়েছে। প্রতি হেক্টরে এ জাতরে মসুর ২ হাজার ২০০ কেজি ফলেছে বলে বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রর ইনচার্জ ও উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ কামরুজ্জামান বাসসকে জানিয়েছেন। সঠিক পরিচর্যা পেলে এ জাতের মসুর ২ হাজার ৫৫০ কেজি পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। তারপরও গোপালগঞ্জে এ জাত রেকর্ড পরিমান ফলন দিয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। জাতটি মরিচা ও ঝলসানো (ব্লাইট) রোগ সহনশীল। পোকা মাকড়ের আক্রমণ তেমন হয় না। এ জাতে ছত্রাকের আক্রমণ হয় না। তাই কোন ছত্রাক নাশক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। এ জাত আবাদ করে কৃষক মসুরের অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হন। তাই গোপালগঞ্জে প্রতিবছর এ জাতের মসুরের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম আকন্দ বলেন, এ বছর ৫০াট প্রদর্শনী প্লটে আমরা ৫০ জন কৃষককে দিয়ে জেলার ৫ উপজেলায় বিনামসুর-৮ জাতের আবাদ করিয়েছি। প্রতি প্লটের আয়তন ছিল ৫২ শতাংশ। প্রতিটি প্রদর্শনী প্লটে আমরা কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দিয়েছি। সেই সাথে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে বিনামসুর-৮ চাষাবাদ করিয়েছি। কৃষকরা এখান থেকে মসুরের বাম্পার ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন।
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৌরভ অধিকারী বলেন, এটি স্বল্পজীবনকালীন ও উচ্চ ফলনশীল একটি জাত। এ জাত ৯৫ থেকে ১০০ দিরে মধ্যে ফলন দেয়। মসুর সংগ্রহের পর কৃষক এ জমিতে পাট আবাদ করতে পারেন। পাট কেটে কৃষক ওই জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ করবেন। এ মসুর চাষাবাদ করলে কৃষক একই জমিতে বছরে ৩টি ফসল করে অধিক ফসল ফলাতে পারেন। এছাড়া স্থানীয় মসুরের জাত হেক্টরে ৭৫০ কেজি ফলন দেয়। সেখানে বিনামসুর-৮ প্রায় তিনগুন অর্থাৎ ২ হাজার ২০০ কেজি ফলন দিয়েছে। এ মসুরের আবাদ বৃদ্ধি পেলে দেশে ডালের আমদানী নির্ভরতা কমবে। এছাড়া এ ডালের বীজে ডালের পরিমান ৯০ ভাগ। প্রটিন রয়েছে ৩%। বিনামসুর-৮ সহজে সিদ্ধ হয় ও খেতে সুস্বাদু।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বিধান রায় বলেন, জেলার ৫ উপজেলায় ৫ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে মসুরের আবাদ হয়। এসব জমিতে বিনামসুর-৮ চাষাবাদ করা হলে এ জেলায় মসুরের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এতে একদিকে যেমন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে কৃষক অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হবেন। এটি আমাদের কৃষি ও কৃষকের জন্য সু-সংবাদ ।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের কৃষক ফয়সার শরীফ বলেন, বিনা উদ্ভাবিত জাতগুলো বরাবরই রেকর্ড পরিমাণ ফলন দিয়ে থাকে। ৫২ শতাংশ জমিতে বীজ ও সার পেয়ে বিনামসুর-৮ আবাদ করি। বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের পরামর্শ এটি পরিচর্যা করে হেক্টর প্রতি ২ হাজার ২০০ কেজি ফলন পেয়েছি। এটি দেখে প্রতিবেশি কৃষকরা আগামী বছর এ জাত আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।