শিরোনাম
॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ১৬ মার্চ, ২০২৪ (বাসস): জেলায় সরকার বছরে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে বলেই কৃষকরা কৃষি কাজ করতে পারছে।
সরকার রাসায়নিক সারে ভর্তুকি দিচ্ছে বলেই কৃষক কৃষিতে টিকে আছে। ভর্তুকি তুলে নিলে কৃষি থেকে কৃষক মুখ ফিরিয়ে নেবে। কারণ একবিঘা জমি থেকে একটা ফসল ঘরে তুলতে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার সার প্রয়োজন। বলছিলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের কৃষক শহিদুল হোসেন।
কৃষি নির্ভর মেহেরপুর জেলায় বছরে চার ধরণের সারে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। জেলার চাষযোগ্য ১১ লাখ হেক্টর জমিতে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি মিলে ৭৯ হাজার মেট্রিকটন টন রাসায়নিক সার ব্যবহৃত হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন সারের গুণগত মান কমে যাওয়াতে চাষাবাদে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করতে হচ্ছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন কৃষক প্রয়োজনের বেশী সার ব্যবহারের কারণে জমির উর্বরা শক্তি কমছে। সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করলে সারে সরকারের ভর্তুকি আরও কমে যাবে। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে জমিতে অতিমাত্রায় সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরা শক্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে। একই জমিতে বছরের পর বছর রাসায়নিক সার প্রয়োগে মাটির অম্লত্ব পরিবর্তিত হয়ে পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগের হিসেবে ৭১৬ বগর্ কিলোমিটারের মেহেরপুর জেলায় ১১ লাখ এক হাজার ১০০ হেক্টর জমি চাষ যোগ্য। এসব জমি চাষাবাদে বার্ষিক সারের চাহিদা ইউরিয়া ৩৬ হাজার ৩৭ মেট্রিক টন। টিএসপি ১৫ হাজার ২৯৯ মেট্রিক টন, ডিএপি ১৫ হাজার ৫৫৪ মেট্রিক টন ও এমওপি ১২ হাজার ২৫৮ মেট্রিক টন। কৃষকের উন্নয়নে সরকারিভাবে প্রতিকেজি ইউরিয়া সারে ৫৪ টাকা। টিএসপি সারে কেজিতে ৮১ টাকা, ডিএপি সারে কেজিতে ১০২ টাকা ও এমওপি সারে কেজিতে ৮৬ টাকা। এ হিসেবে জেলায় বছরে সরকারের ভর্তুকি যাচ্ছে ৩৬ হাজার ৩৭ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের বিপরিতে ১৯৪ কোটি ৫৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। টিএসপি সারে ১২৩ কোটি ৯২ লাখ ১৯ হাজার টাকা। ডিএপি সারে ১৫ কোটি ৮৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ও এমওপি সারে ১০ কোটি ৫৪ লাখ ১৮,৮০০ টাকা।
সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আবদুল হান্নান সরকার জানান- আগে যেখানে অল্প সার দিয়ে আবাদ করা যেত। কয়েকবছর ধরে দ্বিগুণ পরিমান সার প্রয়োগ করেও সেই সুফল মিলছেনা। সরকার যদি সারে ভতর্’কি না দিতেন তাহলে আবাদ করা সম্ভব হতো না। হান্নান মনে করেন- সারের গুণগত মান আগের মতো নেই।
সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ কৃষক রুহুল শেখ অতিরিক্ত সার ব্যবহার প্রসঙ্গে বলেন- আগে আমরা জৈব সার দিয়ে জমি চাষ করে ধান, পাট, সবজি আবাদ করেছি। রাসায়নিক কোন সার ব্যবহার করিনি। একটি আবাদের পর আরেকটি বর্ষা পর্যন্ত জমি পচান রেখেছি। একটি এক বছরে তিনটি ফসল চাষ করতে হচ্ছে। অতিরিক্ত সারের বিকল্প নাই। সরকার যদি সারে ভর্তূকি না দিতেন তাহলে বছরে তিন ফসল, সাথি ফসল চাষ করা সম্ভব হতো না। উৎপাদন ও কম হতো।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, মাটির পরিবেশ ও মাটির উর্বরতা বর্তমানে হুমকির মুখে। অধিক মাত্রায রাসায়নিক সার ব্যবহারই এর প্রধান কারণ। গত এক দশকে আবাদযোগ্য জমি উৎপাদনক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। তিনি জানান- পরিমিত সার ব্যবহার হলে একদিকে যেমন মাটির উর্বরা ঠিক থাকবে, অপরদিকে সরকারের ভর্তুকি কমবে। ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারও মজবুত থাকবে। কিন্তু কৃষক প্রয়োজনের চেয়ে বেশী সার ব্যবহার করছে।