শিরোনাম
দিনাজপুর, ২৩ মার্চ, ২০২৪ ( বাসস): পৌরাণিক কাহিনী জেলা দিনাজপুর মোগল সম্রাটের পরগনা ঘোড়াঘাট স্থাপত্য। এ উপজেলা ঐতিহাসিক নিদর্শন সূরা মসজিদ অবস্থিত। কালের সাক্ষী হয়ে প্রাচীনতম এ ঐতিহাসিক মসজিদটি এখনো রয়েছে।
সম্প্রতি সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে , দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে ঘোড়াঘাট - হিলি পাকা রাস্তায় পাশে চোরগাছা মৌজায় প্রাচীন স্থাপত্যের ৫০০ বছর আগের এ সুরা মসজিদ । দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদের নির্মাণ কারুকার্য এক নজর দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটি আসেন হাজার হাজার দর্শক ও পর্যটক।
স্থানীয় দর্শনার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা শহর থেকে দর্শনার্থীদের সারা বছর জুড়েই থাকে পদ চারণা এ এলাকায়। সুরা মসজিদ নির্মাণকে নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মত। অনেকেই এ মসজিদকে সৌর মসজিদ বলে আখ্যয়িত করে থাকেন। আবার কেউ বলে সুরা মসজিদ। আবার অনেকের কাছে সম্রাট শাহ সুজা মসজিদ নামে পরিচিত রয়েছে।
স্থানীয়দের মতে সুর শব্দের অর্থ অপদেবতা বা জিন। জনশ্রুতি রয়েছে, শত শত বছর আগে জিনেরা এক রাতে মসজিদ নির্মাণ করেন বলে অনেকের বিশ্বাস।
আবার মসজিদটির কারুকার্য ও নির্মাণ স্থাপনশৈলী দেখে কেউ ধারণা করেন ১৬ শতকের সুলতানি আমলে হোসেন শাহীর শাসন আমলে এটি নির্মাণ করা হয়। এ মসজিদকে আসমানী বা গায়েবী অর্থাৎ লোক চক্ষুর আড়ালে তৈরি হওয়া মসজিদ বলে দাবি করা হয়। আবার প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন, মোগল সম্রাটের আমলে সে সময় বাংলার সুবেদার শাহ সুজা এই মসজিদ নির্মাণ করেন। তাই তারা একে শাহ সুজা মসজিদ নামে ডাকেন। তবে এর নির্মাণ ও গঠনশৈলী দেখে ধারণা করা যায় শাহ সূজার ক্ষমতা গ্রহণের অনেক আগে এই মসজিদটি নির্মিত করা হয়েছে। যেহেতু এই মসজিদটি নির্মাণে কোন শিলালিপি নেই। তাই গঠনশৈলীর উপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য নির্মাণকাল বের করা হয়েছে। স্থাপত্যশৈলী ও নির্মাণকালের কলা কৌশল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ধারণা করা হয় সুলতান হোসেন শাহের আমলের নির্দেশনা এটি।
বড় মসজিদটির বাইরের দিকের আয়তন উত্তর দক্ষিণ ৪০ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিম ২৬ ফুট । ৪ ফুট উঁচু মজবুত প্লাটফরমের উপর মসজিদের অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এর প্রধান কক্ষের আয়তন ভেতরে ১৬ দশমিক ১৬ ফুট। প্রধান কক্ষের সাথে যুক্ত আছে ৬ ফুট প্রশস্ত রাস্তা। পুরো মসজিদের দেয়ালে অসংখ্য খোপকাটা মৌলক টেরাকোটার অলংকরণ, যা এর ইমারতের বাহিক সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
সুলতানি আমলের বিরল স্থাপত্য সুরা মসজিদ প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত, নামাজের কক্ষ ও বারান্দা। মসজিদের উপরে বর্গকার ও গম্বুজ বিশিষ্ট নামাজ কক্ষ এবং ছোট ৩ টি গম্বুজ বিশিষ্ট একটি বারান্দা রয়েছে। নামাজের কক্ষ ৭ দশমিক ৮৪ মিটার বাই, ৭ দশমিক ৮৪ মিটার। বারান্দার মাপ ৪ দশমিক ৮৪ মিটার লম্বা ও ২ দশমিক ১২ মিটার চওড়া। চুন সুরকির সাহায্যে ছোট আকৃতির ইট দ্বারা নির্মিত মসজিদে দেওয়াল ১ দশমিক ৮০ মিটার প্রশস্ত। নামাজ কক্ষের ৪ কোণে ৪টি ও বারান্দায় দুটি কালো পাথরের মিনার রয়েছে । মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্ব দিকে ৩ টি ও উত্তর দক্ষিণ দিকে একটি খিলানকত প্রবেশ পথ রয়েছে। মসজিদের ভিতরে কেবলা দেয়ালে ৩ টি সুন্দর ভাবে অলংকৃত পাথরের তৈরি অবতল মেহরাব রয়েছে। মসজিদে ইটের সাথে পাথরের ব্যবহার দেওয়ালের মাঝে পাথর স্তম্ভ ইটের গাঁথুনি চোখে পরার মত। এছাড়া প্রত্যেক দরজার নিচে চৌকাঠ রয়েছে। সেগুলো পাথরের তৈরি। পূর্ব পাশে মসজিদে প্রবেশের সিড়ি রয়েছে। এখানকার কালো বেলে পাথর বাংলার পশ্চিম পান্তে অবস্থিত রাজমহল থেকে আনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে । প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী মসজিদটি দেখার জন্য আসেন। অনেকে আসেন এখানে মানত করা গরু খাসি কুরবানী দিয়ে রান্না করে আশপাশের লোকজনকে খাওয়ানোর জন্য।
সংস্কার কাজ করে মসজিদে সৌন্দর্য বাড়াতে পারলে দর্শনাথীর সংখ্যা আরো বাড়াতে পরে বললে স্থানীয়রা মনে করেন।
মসজিদের ইমাম মৌঃ মোঃ ইনামুল হক বলেন, আমি এ মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ান। দিনাজপুর জেলার প্রাচীন এ স্থাপত্য সাক্ষী এ মসজিদটির প্রায় পাঁচশত বছর আগে নির্মিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনাথীরা মসজিদটি দেখার জন্য আসেন। দর্শনার্থীরা কেউ নামাজের জন্য আবার কেউ মানত শোধ করার জন্য আসেন।
সূরা মসজিদের সভাপতি আলহাজ্ব সেকেন্দার আলী জানান , এটা দিনাজপুর জেলার এটি ঐতিহাসিক মসজিদ। স্থানীর এমপি শিবলী সাদিক এবং দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেছ। এ ঐতিহাসিক মসজিদ সংরক্ষণের জন্য মসজিদ এলাকায় একটি বাউন্ডারি ওয়াল ও বড় গেট করলে স্থানটি নিরাপত্তা বাড়বে। স্থানটি দেখতে আরো ভালো লাগবে সৌন্দর্য বাড়বে। তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমাদের আবেদন এ ঐতিহাসিক নির্দেশন মসজিদটি মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে যুগ উপযোগী সংস্কার করে ঐতিহাসিক নির্দেশনটি ধরে রাখতে।তবে এ মসজিদটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।