শিরোনাম
দিনাজপুর, ২৫ মার্চ, ২০২৪ (বাসস): জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামে উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় কৃষকেরা ঁেপয়াজের উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে। আগামী বছর ওই কৃষকদের নিজস্ব বীজেই পেঁয়াজের চাষ হবে।
দিনাজপুর বীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সারাদেশে পরিচিতি রয়েছে দিনাজপুর জেলা খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণ জেলা হিসেবে খাতি রয়েছে। সেই সাথে এখানে রবিশস্যসহ সব ধরনের শস্য প্রতিবছর চাষ হয়ে থাকে। বিগত কয়েক বছর চাষ করার রবি শস্যের ঠিকমতো দাম না পাওয়ায় কৃষকেরা রবি মৌসুমে ঁেপয়াজ রসুনসহ সবজি চাষ কম দিয়েছে । ফলে জেলার চাহিদা অনুযায়ী ঁেপয়াজসহ অন্যান্য সবজি চাষ না হওয়ায় মূল্য বেড়ে গেছে। আগামীতে জেলার চাহিদা অনুযায়ী বা অতিরিক্ত সবজি চাষ বাস্তবায়ন করতে কৃষি বিভাগের সঙ্গে নিয়ে এ উপজেলা পরিষদ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছরের জন্য নিজস্ব ঁেপয়াজের বীজ উৎপাদনের সক্ষম হওয়া গেছে। আগামী বছর এ উপজেলায় কৃষকদের নিজস্ব ঁেপয়াজের বীজে ঁেপয়াজ চাষ করা সম্ভব হবে। এছাড়া এ উপজেলায় একাধিক কৃষকের সংরক্ষণ করা ঁেপয়াজের বীজ নিজেদের চাহিদা পূরণ করে জেলার অন্যান্য উপজেলায় ঁেপয়াজ চাষে সরবরাহ করা যাবে । এভাবে জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলো ঁেপয়াজের বীজ উৎপাদনে মনোযোগী হলে এ জেলা উৎপাদিত ঁেপয়াজ নিজেদের চাহিদা পূরণ করে দেশের অন্যান্য জেলা গুলোতে পাঠানো যাবে।
তিনি বলেন, জেলার মাসিক সমন্বয় উন্নয়ন সভায় বরাবর কৃষি বিভাগের এ উৎপাদন বিষয়গুলো নিয়ে তিনি আলোচনা করে থাকেন। কিন্তু এর জন্য এ জেলার কৃষি বিভাগের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া জানান , জেলার ১৩ টি উপজেলায় এবার ২ হাজার ২২৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ লক্ষ্যমাত্র ানির্ধারণ করা হয়েছিল। বিগত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে বেশি পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। গত অর্থবছরে জেলায় পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ২৫ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। এবার পেঁয়াজের চাষ লক্ষ্য মার্তার অতিরিক্ত হওয়ায় ফলন উৎপাদন বেশি হবে। পেঁয়াজের চাষ বাড়তে কৃষি বিভাগের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী বছর গুলোতে যেন, এ জেলার উৎপাদিত ঁেপয়াজ জেলার চাহিদা পূূরণ করে বাইরের জেলাগুলোতে পাঠানো যায় সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
জানতে চাইলে বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কালিপদ রায় বলেন, দিনাজপুরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলায় পেঁয়াজবীজ উৎপাদনের প্লট নেই। উপযুক্ত মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও এত দিন কেউ দিনাজপুরে পেঁয়াজ আবাদে আগ্রহী হননি। কারণ, খুব পরিশ্রম ও যতœ করতে হয়। সময়ও লাগে বেশি।
তিনি বলেন, এ উপজেলার পলাশবাড়ি গ্রামের আদর্শ কৃষক আকবর আলী ও নজরুল ইসলাম সহ প্রায় ১০-১২ জন কৃষক যে পরিসরে ঁেপয়াজের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ শুরু করেছেন, তাঁদের উৎপাদিত বীজ দিয়ে জেলার সর্বনি¤œ দেড় হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ সম্ভব হবে ।
এছাড়া এ উপজেলার মুরারীপুর ভেরভেরী ও সুজাপুরে পিয়াজের বীজ উৎপাদনে কৃষকেরা এগিয়ে গেছ। এ ৩টি গ্রামে বেশ কিছু কৃষক কৃষি বিভাগের সহায় ঁেপয়াজের বীজ উৎপাদন করছে। এবার শুধু এ উপজেলাতে সাড়ে ৩ শত হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ তাঁদের সার-কীটনাশক ও পরামর্শ দিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
তারা জানান, জমি চাষ, বীজ, রোপণ খরচ, সার ও কীটনাশক, সেচ, নিড়ানি, বাঁশ-সুতলি সহ এবার প্রতি বিঘায় খরচ দাঁড়াবে এক লাখ টাকা । আশা করছেন প্রতি বিঘায় ২০০ কেজি বীজ পাবেন। যদি প্রতি কেজি পেঁয়াজ বীজ সর্বনি¤œ দেড় হাজার টাকা বিক্রি করতে পারেন। তবে তাদের ৩ বিঘা করে জমিতে ঁেপয়াজ বীজ রয়েছে। ঁেপয়াজ বীজ বিক্রি করে খরচ বাদে তাঁদের প্রায় ৬ লাখ টাকা করে লাভ হবে।
আকবর আলী বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত বীজের মান ভালো। নিজের উৎপাদিত বীজে চারা প্রস্তুত করে পরীক্ষামূলক ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছি। আমরা পুরো দেশে এ বীজ ছড়িয়ে দিতে চাই। প্রত্যেক কৃষক যদি অল্প জমিতে নিজেরাই পেঁয়াজ চাষাবাদ করেন, আমাদের ঘাটতি অনেকটাই কমে আসবে।’
নজরুল ইসলাম জানান, তার পেঁয়াজ বীজের ক্ষেত দেখতে আসছেন অনেক কৃষক। কেউ কেউ আগাম পেঁয়াজবীজ কেনার কথা বলে রেখেছেন।