বাসস
  ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৪

প্রশিক্ষণে ভাগ্য বদল কুমিল্লার নাছিমার

॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ (বাসস): যুব উন্নয়নে সেলাই মেশিনে প্রশিক্ষণ নিয়ে দারিদ্র্যতাকে জয় করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন কুমিল্লার নাছিমা বেগম। একইসঙ্গে ভূমিকা রাখছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিয়ে তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অসহায় নারীদের দিচ্ছেন বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ।
এক সময় আয়ের পথ না থাকায় পরিবার নিয়ে প্রায় অনাহারে দিন কাটাত হতো নাছিমা বেগমের। নাছিমা বেগম বাসসকে বলেন, অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হলেও বেশ কয়েক বছরের মাথায় স্বামী মতিউর রহমান দুর্রঘটনায় মারা যায়। তখন চার সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন নাছিমা বেগম। পরবর্তীতে কুমিল্লা শহরের এক দূরসম্পর্কের খালার সহযোগিতায় নাছিমা বেগমের চার সন্তান নিয়ে কুমিল্লায় চলে আসেন।
কুমিল্লায় এসে প্রথমে বাসা বাড়িতে আয়ার কাজ শুরু করলেও পরবতীর্তে কাজের ফাঁকে ফাঁকে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সেলাইয়ের কাজের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ছোট্র পরিসরে বাসায় শুরু করেন সেলাইয়ের কাজ। প্রথমদিকে কাজ না পেলেও এখন নাছিমা বেগমের দম ফেলার সুয়োগ নেই। প্রথমে কুমিল্লার নিউ মার্কেটে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে সেলাই কাজ শুরু করেন। এতেই ঘুরে যান নাছিমার ভাগ্যের চাকা। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই সময়ে শহরের একমাত্র নারী দর্জি ছিলেন নাছিমা। বর্তমানে নগরীর মনোহরপুর হাজী প্লাজার দ্বিতীয় তলায় ও রেইসকোর্স এলাকায় ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজায় দুটি টেইলার্সের দোকান আছে তার। এছাড়া ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজায় আরও দুটি থান কাপড়ের দোকানের মালিক নাছিমা বেগম। চারটি দোকানে ১৫ জন কর্মী কাজ করেন তার দোকানে।
নাছিমা বেগম বাসসকে বলেন, দোকানের আয়ের একটি অংশ মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা ও দরিদ্রদের দান করেন। এক সময় সংসার চলত না। নাছিমা বেগম যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে তখন পথ দেখালেন অন্য নারীদের। আর তাতে সবার দিনও ফিরেছে। সংসারে আগের সেই টানাটানি এখন অতীতের কথা। ২৫০ জনের বেশি বেকার নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন সেলাইয়ের কাজে। তারাও এখন প্রত্যেকে স্বাবলম্বী।
নাছিমা বেগম বাসসকে বলেন, চার ছেলে মধ্যে দুইজনকে এইচএসসি আর এক ছেলেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করিয়েছেন। তারাও এখন সময় দেন দোকানে। আর ১০ বছর বয়সে এক ছেলে মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। নাছিমা জানান, সুন্দর ব্যবহার, ধৈর্য ও সততা থাকলে যে কোনো ব্যক্তি ব্যবসায় সফলতা লাভ করা সম্ভব। তার স্বপ্ন বিধবা ও দুস্থ নারীদের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার।
নাছিমা বেগমের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া নাজমা আক্তার নামের এক নারী বাসসকে বলেন, নাছিমা আপার তত্ত্বাবধানে সেলাই কাজ শিখে  গত বছর আমি ২১ হাজার টাকা আয় করেছি। অপর নারী শিউলি আক্তার (৩৫) জানান, গত তিন বছর থেকে সেলাইয়ের কাজ করছেন। সেলাইয়ের টাকায় তাঁর এক ছেলে এক মেয়ে পড়াশোনা করছে। বড় ছেলে জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আর মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ সামসুজ্জামান বাসসকে বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ১৮ থেকে ৩৫ বছরের বেকার যুবক ও মহিলাদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ঋণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে মাসিক কিস্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করতে হয়।