বাসস
  ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৯

দিনাজপুরের শাহ আলম চা বিক্রি করে স্বাবলম্বী

দিনাজপুর, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ( বাসস): দিনাজপুর শহরে পুলহাটে চা বিক্রেতা  শাহ আলম প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার চা বিক্রি করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছে। দু ছেলে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পেরে  নিজেকে সাফল্য মনে করছেন।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সরেজমিন দিনাজপুর শহরের ফুলহাট এলাকায় তার দোকানে গিয়ে চা বিক্রির সরগরম লক্ষ্য করা গেছে। তার দোকানের চা খেতে আসা বিভিন্ন খরিদ্দারদের সাথে কথা বলা বলে  জানা যায় ,  তার দোকানে  পাওয়া যায় ভিন্ন স্বাদের চা। তেঁতুল চা, মরিচ চা ও লেবু চা সহ ৮ থেকে ১০ রকমের চা। লেবু, চায়ের লিকার, কাঁচা মরিচ, তেঁতুল, চিনি ও বিশেষ এক ধরনের মশলা দিয়ে এসব চা তৈরি হয়, যা টক, ঝাল ও মিষ্টি। দূর-দূরান্তের মানুষজনও ভিন্ন স্বাদের এ চা পান করতে  তার চা দোকানে আসেন।
চা বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, তার  দোকানে ৮ থেকে ১০  রকমের চা পাওয়া যায়। প্রতিদিন তিন হাজার কাপ বিক্রি করেন। সে হিসাবে দিনে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা চা বিক্রি হয়। লেখাপড়া বেশি দূর না করলেও দিনরাত পরিশ্রম করে নিজেই গড়েছেন নিজের ভাগ্য।
দিনাজপুর পৌরসভার পুলহাট এলাকায় রাস্তার পাশে শাহ আলমের দোকান। ৩০ বছর ধরে চা বিক্রি করছেন। শাহ আলমের  বাড়ি ওই এলাকায়। এর মধ্যে ৯ বছর ধরে তেঁতুল চা, মরিচ চা ও লেবু চা বিক্রি করছেন। চায়ের  দোকান করে এক ছেলে ও এক মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত  করিয়েছেন। এখন তাদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন এ চা দোকানি।
তেঁতুল চা, মরিচ চা ও লেবু চা ছাড়াও এখানে পাওয়া যায় মালাই চা, মধু চা, দুধ চা, লাল চা, পদুনা চা, আদা চা, রসুন চা, গ্রিন টি, ডায়াবেটিক চা, মরিচা চা,  তেঁতুল চা  । সারাদিন চা-প্রেমীদের ভিড় লেগেই থাকে। প্রতিদিন  সন্ধ্যার পর দ্বিগুণ এসব বিভিন্ন রকমের চা  বেচাকেনা হয়। এর মধ্যে তেঁতুল চা, মরিচ চা ও লেবু চায়ের কাপের মূল্য ১৫ টাকা। মালাই চা ও মধু চা ২০ টাকা আর লাল চা ৫ টাকা।
তবে দোকানটি কাঁচা মরিচের চায়ের জন্য বেশ জনপ্রিয়।  এ বিশেষত চা তৈরিতেও রয়েছে ভিন্নতা। প্রথমে চিনি দিয়ে পরে একটি লেবুর অর্ধেক রস দেয়া হয়। এরপর চায়ের লিকার, গরম পানি ও একটি কাঁচা মরিচ ও বিশেষ মশলা দেয়া হয়। যা দোকানি নিজেই তৈরি করেন। এরপর চামচ দিয়ে নেড়ে পরিবেশন করা হয়। তেঁতুল চাও একইভাবে তৈরি হয়। চিনি ও তেঁতুলের সঙ্গে দেয়া হয় লিকার। এরপর গরম পানি ও বিশেষ মশলা দিয়ে পরিবেশন করা হয়। লেবু চায়ে থাকে লেবুর রস, গরম পানি ও চিনি। সব চায়ে দেয়া হয় আদার কুচি।
দিনাজপুর জেলা সদরের মাসিমপুর এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘যেদিনই আমি শহরে যাই, ফেরার পথে এখানে কাঁচা মরিচের চা পান করি। খুবই ভালো লাগে। টক, ঝাল, মিষ্টি; অন্যরকম স্বাদ। বন্ধুবান্ধবদেরও পান করাই।’
শহরের নয়নপুর এলাকার ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘আমি একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। সপ্তাহে একদিন পুলহাট এলাকায় আসতে হয়। এখানে এলেই মরিচ চা অথবা তেঁতুল চা পান করি। বেশ ভালো লাগে। মাঝেমধ্যে বাড়িতে এমন চা তৈরির চেষ্টা করি, কিন্তু হয় না। তাই এখানেই আসি।’
শাহ আলম বলেন, ‘সংসারে স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে । ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত  করেছি। ছেলে আর্কিটেকচার প্রোগ্রামে পড়াশোনা করেছে, মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে এবার  বিসিএস দেওয়ার  প্রস্তুতি নিচ্ছে। মেয়ে যদি সরকারি কর্মকর্তা হয়, আর ছেলে যদি ভালো পর্যায়ে যায়, তবেই আমার দিনরাত পরিশ্রম সার্থক হবে বলে মনে করছেন।’
শাহ আলম  বলেন, ‘তবে তেঁতুল চা, মরিচ চা ও লেবু চা বিক্রি করছি ৯ বছর ধরে। একবার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে মরিচ চা খেয়েছি। এরপর রাজশাহীতে গিয়েও এমন চা তৈরি দেখেছি। তারপর নিজেই এসব চা তৈরি করে  সফল হয়েছি। প্রতিদিন তিন হাজার কাপ চা তার দোকান থেকে  বিক্রি হয়। তবে চা তৈরিতে এখন অনেক খরচ পড়ে। ১৫ টাকা কাপ চা বিক্রি করি। একটা লেবুর দাম ৪ থেকে ৬ টাকা ও তার সাথে  মশলা দিয়ে চা বানানো হয়। তার দোকানে চা খেয়ে ক্রেতাদের কোন সমস্যা হয় না। এখন পর্যন্ত কোন খরিদ্দারের অভিযোগ পাননি।   চা বিক্রি বেশি হওয়ায়  লাভ ভালো  হয়। সবমিলিয়ে পরিশ্রম করে ভালোভাবে জীবনযাপনের চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, আমার চা তৈরীর পদ্ধতি দিনাজপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে এখন চালু হয়েছে। আমি ওইসব চা দোকানদারদের চা তৈরীর পদ্ধতি শিখিয়েছি। অনেক বেকার যুবক তার কাছে পরামর্শ নেওয়ার জন্য আসে। তিনি তাদের সঠিক পরামর্শ দেন।
তার বক্তব্য সবাই কাজ করে চলুক, বসে না থেকে যেকোনো কাজ করে  সফলতা অর্জনের মাধ্যমে  দেশ থেকে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।