শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) ৩০ এপ্রিল,২০২৪ (বাসস): গোপালগঞ্জে জিংক ও পুষ্টি সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ জাতের ধান চাষ করে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। এ জাতের ধান হেক্টর প্রতি হাইব্রিড ধানের মতোই ফলন দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ধানে রোগ-বালাই তেমন নেই। চাল সরু ও চিকন। বাজারে এ জাতের ধান বেশি দামে বিক্রি হয়। চালের ভাত খেতে সুস্বাদু। তাই এ জেলায় প্রতি বছর বঙ্গবন্ধু ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলায় ১ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে বঙ্গবন্ধু ধানের আবাদ হয়েছে। ২০২৩ সালে এ জাতের ধান ৫ উপজেলায় ৪৭০ হেক্টরে আবাদ করে কৃষক। ২০২২ সালে ২শ’ হেক্টর জমিতে বঙ্গবন্ধু ধানের আবাদ হয়। ২০২১ সালে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলায় প্রথম এক সাথে ২১ হেক্টরে এ ধানের আবাদ করা হয়েছিল।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ জাত অবমুক্ত করে। ২০২১ সালে আমরা প্রথম এ জাতের ধান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের আটাশিবাড়ি ব্লকের ২১ হেক্টর জমিতে এক সাথে আবাদ করি। সেখানে প্রতি হেক্টরে কৃষক প্রায় ৮ টন ফলন পায়। আমরা কৃষককে এ জাতের ধান আবাদে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। সেই সাথে তাদের বিনামূল্যে বীজ, সার, পরামর্শ, প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। এ কারণে গোপালগঞ্জ জেলায় বঙ্গবন্ধু ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবছর এ জেলায় ১ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে বঙ্গবন্ধু ধানের আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর এ জেলায় ৬০% ধানের আবাদ বেড়েছে। দিন দিন গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ধানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ধান কৃষককে সমৃদ্ধির হাতছানি দিচ্ছে।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কর্মকর্তা সৃজন চন্দ্র দাস বলেন, বঙ্গবন্ধু ধান -১০০ জিংক ও প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি জাত। এই ধানের চালের ভাত খেলে মানব দেহে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। চাল সরু ও চিকন। ভাত ঝরঝরা, খেতে সুস্বাদু। তাই গোপালগঞ্জের কৃষকদের কাছে বঙ্গবন্ধু ধান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আড়পাড়া গ্রামের কৃষক সায়াদ উদ্দিন বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে আমাদের গ্রামের ৫শ’ শতাংশ জমিতে বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ একসাথে আবাদ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে এ জাতের ধান ৭.৮১ মেট্রিক টন ফলন দিয়েছে। এ ধানে তেমন কোন রোগ বালাই নেই। হাইব্রিড ধানের মতোই এ ধান ফলন দিয়েছে। বাজারে বঙ্গবন্ধু ধান মণপ্রতি ১শ’ থেকে ২ শ’ টাকা বেশি দরে বিক্রি করা যায়। এ ধানের বীজ পরবর্তী বছরের চাষাবাদের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। আমাদের জমিতে উৎপাদিত ধান দেখে কৃষকরা বঙ্গবন্ধু ধান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাই আগামী বছর আমাদের গ্রামের ২ হাজার একর জমিতে বঙ্গবন্ধু ধানের আবাদ হবে।
একই গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, ইনব্রিড জাতের অন্যন্য ধান হেক্টরে ৫ থেকে ৬ টন ফলন দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ধান প্রায় ৮ টন ফলন দিয়েছে। এত ধান দেখে আশপাশের সব কৃষকরে মন ভরে গেছে। তাই ভবিষ্যতে আমাদের গ্রামে এ ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ থামারবাড়ির অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সঞ্জয় কুমার কুন্ডু বলেন, বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ আমাদের কৃষক ও কৃষির জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করেছে। এ জাতের ধান চাষ সম্প্রসারণ করতে পারলে কৃষক অধিক ফলন পেয়ে আরো বেশি লাভবান হবেন। সেই সাথে দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এ ধানের চালের ভাত খেয়ে সব বয়সের মানুষ জিংক ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু ধান আমাদের কৃষিকে সমৃদ্ধ করেছে। এ ধান আবাদের মধ্যে দিয়ে দেশের কৃষকের সমৃদ্ধি আসবে।