শিরোনাম
॥ শাহাদুল ইসলাম সাজু ॥
জয়পুরহাট, ৬ মে, ২০২৪ (বাসস): জেলার পাঁচবিবি উপজেলায় সরকারের অগ্রাধিকার মূলক প্রকল্পের
আওতায় গরু, ভেড়া, ছাগল এবং হাঁস মুরগী পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাস করা পিছিয়ে পড়া দুই শতাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন ।
জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া হিসেবে চিহ্নিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অতি দরিদ্র মানুষজন। কায়িক শ্রমের মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের। যাদের আয়ের- একমাত্র উৎসই হচ্ছে অন্যের বাড়িতে কাজ করা । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবন মান ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূিচ চালু করার ফলে আজ তারা স্বাবলম্বী স্বপ্ন দেখছেন । ২০২০ সালে বর্তমান সরকার এ প্রকল্প গ্রহণ করেন। দেশ ব্যাপি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসার লক্ষ্যে মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের আওতায় এ প্রকল্প শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে পাঁচবিবি উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ নিয়ায কাযমির রহমান উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অতি দরিদ্র পরিবারর গুলোকে বাছাই করে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে প্রদান করা হয় গবাদি পশু, হাঁস মুরগী, ভেড়া । প্রতিটি বাড়ী ঘুরে এসব প্রকল্প দেখা শুনা ও তদারকির জন্য তিনি নিজেসহ মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন ৩ জন মাঠ সহায়তাকারী ।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ১৬৩ জন কে বকনা বাছুর , ৭০ জন কে ষাঁড়, ৭ শ জনকে ভেড়া, ১ হাজার ৩ শ ৩২ জনের মাঝে (প্রতি জনকে) ২০ টি করে হাঁস-মুরগী প্রদান করা হয়। সরকারী ভাবে হাঁস মুরগী, ভেড়া পালনের জন্য আর্দশ ঘর , গরুর খাবার, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করছেন মাঠ সহায়তাকারীরা ।
পাচঁবিবি উপজেলার দানেজপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্টি সম্প্রদায়ের কান্দরু উড়াওয়ের স্ত্রী বিষনি উড়াও। তার নিজের জমাজমি বলতে কিছুই নেই । থাকেন সরকারের উপহারের বাড়িতে। তিনি ২০২১ সালে সরকারের অগ্রাধিকার মূলক প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে একটি ক্রস ব্রিডের একটি বকনা বাছুর পেয়েছিলেন। যেটি লালন পালন করে এখন সেটি গাভী । তিনি এ প্রতিবেদকে জানান, আমার কোন গরু ছিল না। কেনার মত সামর্থ্যও ছিল না। কিন্তুু উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে ২ দিনের প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর একটি বকনা বাছুর দেন। এরপর বাছুরটি লালন পালন করতে অফিস থেকে দানাদার খাদ্য, চিকিৎসা সহ সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেন। পরে সেই বাছুরটি বড় হয়ে দুটি বাছুর জন্ম দিয়েছে। যার মূল্য ছিল প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা। গাভীটি আবারো বাচ্চা দিবে। গাভীটির মূল্যও এখন প্রায় লক্ষাধিক টাকা।
একই গ্রামের বিধবা বুদি রাণী মানুষের বাড়ীতে কাজ করে সংসার চালাতেন । তিনিও প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে একটি বকনা বাছুর পেয়ে সেটি লালন পালন করে একটি বাছুর ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। আর গাভীর দুধ বিক্রি করে নিজের সংসার চালান। এখন আর মানুষের বাড়ীতে কাজ করতে হয় না। গরু লালন পালনে ব্যস্ত থাকতে হয়।
উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের শ্যামলী রাণী জানান, উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে দুদিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে দুটি ভেড়া পেয়েছেন। এখন তার বাড়ীতে ৬টি ভেড়া রয়েছে। এরমধ্যে একটি ভেড়া বিক্রি করে ছোট্ট আকারে সেড তৈরি করেছেন। সেখানে তিনি ভেড়ার খামার করার স্বপ্ন দেখছেন । এ গ্রামে এমন আরো কয়েক জন ভেড়া পালন করছেন।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ নিয়ায কাযমির রহমান বলেন-ডিপিএলডি র আওতায় সমাজের পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবন মান ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এসব উপহার তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়।