বাসস
  ১৬ মে ২০২৪, ২১:০২

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে গুণগত অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রয়োজন : কোরীয় রাষ্ট্রদূত

চট্টগ্রাম, ১৬ মে, ২০২৪ (বাসস) : বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরীয় রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে গুণগত অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রয়োজন। এ জন্য ম্যানুফ্যাকচারিং খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈচিত্র আনতে হবে। 
কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত আজ বৃহস্পতিবার চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালকম-লীর সাথে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ চেম্বার কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ করবে- উল্লেখ করে পার্ক ইয়ং-সিক বলেন, কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিনের কৌশলগত সম্পর্ক। 
তিনি আরো বলেন, কোরিয়ার ৫ম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হচ্ছে বাংলাদেশ। এখানকার ম্যানুফ্যাকচার, অটোমোবাইল, মোবাইল ও হোম ইলেক্ট্রনিক্স খাতে বিনিয়োগ রয়েছে কোরিয়ান কোম্পানির। এছাড়াও বাংলাদেশের বড় বড় প্রকল্পে দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো। 
 কোরীয় রাষ্ট্রদূত বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বে পোশাক শিল্পের ৭৫ শতাংশ কটনবেইজড পোশাক রপ্তানি হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ম্যান মেইড ফাইবার পোশাকের কদর রয়েছে। 
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সমুদ্র অর্থনীতি, পর্যটন, এগ্রো ও ফুড প্রসেসিং সেক্টরে অনেক উন্নত আর কোরিয়ার রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি। একই সাথে তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের কোরিয়ান কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানির ওপর উচ্চ ট্যারিফ, ভিসা জটিলতা ও কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স বিলম্বজনিত সমস্যা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। বিনিয়োগের এসব বাধাসমূহ সুরাহার জন্য চেম্বারের মাধ্যমে সরকারের সহায়তা কামনা করেন তিনি। 
মত বিনিময় সভায় চেম্বার প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ, সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব, চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, মাহফুজুল হক শাহ, আখতার উদ্দিন মাহমুদ ও দূতাবাসের কনসুল কিম জেয়ং কি, চট্টগ্রামে কোরিয়ান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জিন হুক পিক, কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান তাইয়ং-এর প্রতিনিধিবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। 
এ সময় অন্যদের মধ্যে চেম্বার পরিচালকব জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), বেনাজির চৌধুরী নিশান, আলমগীর পারভেজ, মাহবুবুল হক মিয়া ও মো. রেজাউল করিম আজাদ উপস্থিত ছিলেন। 
চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, বাংলাদেশের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার ভৌগোলিক দূরত্ব সত্ত্বেও দু’দেশের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের আজকের এই অবস্থানের পেছনে কোরিয়ার অবদান রয়েছে । কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নেও রয়েছে কোরিয়ার অবদান। 
তিনি বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ৮০ শতাংশ হচ্ছে কোরিয়ার বিনিয়োগ। বর্তমানে বৈশ্বিক বাজারে ম্যান মেইড ফাইবার তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। তাই এই সেক্টরে কোরিয়ার বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি প্রত্যাশা করছি। তিনি বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমুদ্র অর্থনীতি, শিপ বিল্ডিং ও শিপিং খাতে কোরিয়ান বিনিয়োগের আহবান জানান। 
চেম্বার সভাপতি আরো বলেন, বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনকারী শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে বাংলাদেশে এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য অপচয় হচ্ছে। তাই আধুনিক এগ্রো প্রসেসিং সেক্টরে প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন তিনি। একই সাথে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে কোরিয়ার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন মেঘনা নদী থেকে পানি সরবরাহ লাইন চট্টগ্রামের সীতাকু- তথা চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত সম্প্রসারণের আহবান জানান। 
চেম্বার সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব বাংলাদেশে কোরিয়ান ফুডের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, কোরিয়ার কসমেটিক্স, প্রসাধন ও ফুটওয়্যারেরও কদর রয়েছে বাংলাদেশে। 
তাই বাংলাদেশের বাজার ও বৈদেশিক চাহিদা মাথায় রেখে বাংলাদেশের কোরিয়ান ব্যবসায়ীদের একক বা যৌথ বিনিয়োগের আহবান জানান তিনি।