শিরোনাম
কেরনীগঞ্জ (ঢাকা), ২ জুন, ২০২৪ (বাসস): কেরনীগঞ্জের খরস্রোতা সিংহ নদী এখন মরা খাল পরিণত হয়েছে। এক সময় এ নদীর গর্জন ছিল সিংহের মতো। যে কারণে এ নদীর নাম রাখা হয়েছে সিংহ নদী। দূষণ আর দখলে একেবারে মৃত খালে পরিণত হয়েছে নদটি। দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে নদী ছিল। গত ৫০ বছর ধরে নদী তীর দখল ও নানা রকম অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কারণে কেরানীগঞ্জের সিংহ নদী এখন ডোবায় পরিণত হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সিংহ নদ ভরাট করে গড়ে তুলেছে বহুতল ভবন ও মার্কেট। নদীটি ধলেশ্বরীর আকসাইল এলাকা দিয়ে রামেরকান্দা, অগ্রখোলা, শিকারীটোলা, খাড়াকান্দি হয়ে পুনরায় ধলেশ্বরীর সঙ্গে মিশেছে। এ নদের ওপর একটি শাখা রামেরকান্দা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে মিশেছে। নদের কলাতিয়া, আকসাইল, বেলনা, রামেরকান্দা ও রোহিতপুরের অধিকাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। দখলের কারণে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে এখন এ নদীটি মৃতপ্রায়।
জানা যায় , এক সময় লোকজন এ নদী দিয়ে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীতে যাতায়াত করত। তাছাড়া ব্যবসায়ীরা বিক্রমপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, খুলনার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এ নদীটি ব্যবহার করত।একসময় এ খরস্রোতা সিংহ নদী দিয়ে শত শত মণের ধান-পাট বোঝাই নৌকা পাল তুলে যাতায়াত করত। সিংহের মতো এ নদীর স্রোতের আওয়াজ ছিল। এ জন্য লোকেরা সিংহ নদী বলে আখ্যায়িত করেছে।
করের গাও গ্রামের ৮৫ বছর বয়সী হযরত আলী বলেন, সিংহ নদীর গর্জনে ঘুম ভাঙতো নদী পাড়ের মানুষের! অন্য সব নদীর তুলনায় প্রশস্ত কম হলেও খরস্রোতা গভীর নদীতে চলতো বিশাল বিশাল পালতোলা নৌকা। কেরানীগঞ্জের বুক চিরে বয়ে চলা সিংহ নদীকে ঘিরেই চলতো এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা। মাছ ধরা থেকে শুরু করে জমিতে সেচ ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহূত হতো এ নদীর পানি। কিন্তু এসব এখন ইতিহাস।
এছাড়াও বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা নদীবেষ্টিত কেরানীগঞ্জ উপজেলার বুক চিরে বইত প্রায় ৫২টি খাল। অবৈধ দখল ও দূষণের অস্তিত্ব সংকটে ৫২ খাল। এছাড়াও আবর্জনা ও ভরাটের ফলে ৬০ ফুট প্রশস্ত খালগুলো এখন বদ্ধ জলাশয় পরিণত হয়েছে।
হাশনাত করিম বলেন, নদীর পাড়ে প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। একটি মহল ময়লা ফেলে নদী ভরাট করছে। এসব ময়লা-আবর্জনার গন্ধে আর মশা-মাছিতে আমরা অতিষ্ট হয়ে পড়েছি। নদীটি অবৈধ উচ্ছেদ করা অতি প্রয়োজন। অবৈধ বাড়িঘর উচ্ছেদ মাধ্যমে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের।
শুভাঢ্যা ইউনিয়নের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, নদী ও খালগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় উপজেলার পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে যায় হাঁটু পানি। শুধু কি তাই? এ খাল ভরাট হওয়ায় উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়কে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু রিয়াদ বাসসকে বলেন, শীঘ্রই সিংহ নদীর অবৈধ দখলের জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে সিংহ নদী তার আগে রূপ ফিরে পায়। এছাড়াও ইতোমধ্যে খালগুলো খননের জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। খালের আশপাশে সব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হবে। অবৈধ স্থাপনাকারী যত শক্তিশালী হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এছাড়াও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ খাল গুলো উদ্ধার ও ভূমিদস্যুদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।