শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ৬ জুন ২০২৪ (বাসস) : সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে অঙ্গীকার নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে জনকল্যাণ ও বাস্তবমুখী হিসেবে অভিহিত করে একে স্বাগত জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।
অপরদিকে বাজেটকে সাহসী মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান।
তিনি বলেছেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ ধরনের বাজেট প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সময়ে যথোপযুক্ত এবং সাহসী পদক্ষেপ হলেও তা বাস্তবায়নে যথাযথ তদারকি ও নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে।
এদিকে মাতারবাড়ীতে দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের প্রক্রিয়াধীন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় চট্টগ্রামের রাজনীতিক ও ব্যবসায়ি সংগঠনের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন।
এক যৌথ বিবৃতিতে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের আকার প্রায় আট লাখ কোটি টাকা হলেও মোটেও তা উচ্চাভিলাসী নয়, বরং বিদ্যমান বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাস্তবমুখী একটি অর্থনৈতিক প্রস্তাবনা। এবারের বাজেট প্রণয়নে সরকারকে নানামুখী চাপ মোকাবেলা করতে হয়েছে।
তারা বলেন, একদিকে আইএমএফ-এর পরামর্শ, অন্যদিকে মুদ্রাস্ফীতির চাপ থাকা সত্ত্বেও আইএমএফ-এর দিক থেকে আগামী অর্থবছরে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের রাজস্ব বাড়ানোর শর্ত দেওয়া হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় এবং নানামুখী বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলা করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ বাজেটে নেওয়া হয়েছে।
এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ধনীদের আয়ের উপর কর আরোপ সম্প্রসারণ এবং সংসদ সদস্যদের বিনাশুল্কে গাড়ি আমদানির পরিবর্তে চল্লিশ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টি অন্যতম ইতিবাচক দিক। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আলুসহ নিত্যপণ্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে কর ছাড় ও শুল্ক হার কমানো প্রস্তাবনাও সাধারণ মানুষের জন্য শুভ বার্তা বয়ে আনবে এবং সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি সহনশীল আবহ সৃষ্টি হবে। সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে বাজেটের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের অনুকূলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াও জরুরি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের জন্য ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তার যথাযথ তদারকি এবং সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা না গেলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে। বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ বরাদ্দ কমানোর ফলে জনগণের জীবনাযাত্রার খরচ বাড়তে পারে।
নিয়মিত কর প্রদানকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর করের বোঝা না বাড়িয়ে নতুন করদাতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব প্রদানসহ পরিবহন ও যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান দেশের অন্যতম এ শিল্পপতি।
তিনি মনে করেন, করদাতাদের হয়রানি কমাতে আয়কর রিটার্ন অ্যাসেসমেন্টের বিধান বাতিল করায় ব্যক্তি ও কোম্পানি দুই শ্রেণির করদাতাই কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে।
এই বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ এ আনার যে প্রত্যাশা রাখা হয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা রক্ষায় দেশের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে দেশি শিল্প উৎপাদন প্রবৃদ্ধির প্রয়াসে বিশেষ করে টেক্সটাইল সেক্টরে যথা প্রয়োজনীয় সহায়তা আবশ্যক।
‘পাশাপাশি রপ্তানি শিল্প এবং দেশের যাবতীয় মেশিনারিজ/ প্ল্যান্টস আমদানিতে সব প্রতিবন্ধকতার অবসান করে শুধু প্যাকিং লিস্ট মতে মেশিনারি চালান ছাড় দিয়ে তার যাবতীয় কার্যক্রম প্রতিস্থাপন ইত্যাদির তদারকি ভ্যাট বিভাগের ওপর ন্যাস্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করি।’ যার ফলে চট্টগ্রাম কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের দ্বৈত আনুষ্ঠানিকতা পরিহার হবে। শুধু ভ্যাট বিভাগ শিল্প চালান মেশিনারিজ ইত্যাদি স্থাপন বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বাজেট প্রতিক্রিয়ায় চট্টগ্রাম-ঢাকা অর্থনৈতিক করিডোরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বে-টার্মিনাল, মেঘনা নদী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পানি সরবরাহ এবং চট্টগ্রাম নগরকে ব্যবসাবান্ধব করতে বাজেটে বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দ রাখার আহবান জানান।
তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগামী ৫ বছরের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১০ লাখ স্মার্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম অঙ্গীকার।
তৈরি পোশাকের পরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেটে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়নসহ স্মার্ট জনগোষ্ঠী তৈরির প্রয়াসের পাশাপাশি কারিগরি খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠাকে সাধুবাদ জানাই আমরা। এছাড়াও চট্টগ্রামসহ সারাদেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে ব্যবসা সহজীকরণের লক্ষ্যে আগামী ২০২৪-২৭ পর্যন্ত সময়ে ১১০টি সংস্কার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।