শিরোনাম
ঢাকা, ১৫ জুন, ২০২৪ (বাসস): আগামী পরশু পবিত্র ঈদল আযহা। এই কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে টুং-টাং শব্দে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইল ও জয়পুরহাট জেলার কামার শিল্পীরা। চলছে হাঁপর টানা, পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। হাতুড়ি পিটিয়ে কামার তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম।
শহর ও গ্রাম-গঞ্জে সব জায়গায় কামাররা নতুন তৈরির সঙ্গে পুরনো দা-বটি, ছুরি ও চাপাতিতে সান দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার মোটর চালিত মেশিনে শান দেয়ার কাজও চলছে। তাই যেন দম ফেলারও সময় নেই কামারদের। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় তাদের কাজ বেড়েছে। দিনরাত পরিশ্রম করছেন তারা। তাদের এ ব্যস্ততা চলবে ঈদুল আযহার দিন পর্যন্ত।
বাসসের টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান- জেলার ১২টি উপজেলা ও ১১টি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার সরঞ্জাম। কামার পল্লীর কারিগররা বলেন, কয়লা ও লোহার দাম অনেক বেশি। তাই তৈরিকৃত সরঞ্জাম বিক্রি বেশি হলেও লাভ কম হয়। আর দু’দিন পর পবিত্র ঈদুল আযহা। তাই এ উৎসবকে কেন্দ্র কামারদের দম ফেলার সময় নেই তাদের। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছেন কামাররা। শহরের পার্ক বাজারের সত্য রঞ্জন দাস জানান, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ থেকে ২০০ টাকা, দা ২৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বঁটি ৩০০ থেকে ৫৫০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০ থেকে ১৫০০ হাজার টাকা, চাপাতি ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রভাত চন্দ্র দাস ও রুদ্র সরকার জয় বলেন, প্রতিবছর কোরবানি ঈদে আমরা বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরি করে থাকি। এবারও এসব উপকরণের চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে কয়লার দাম অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লোহার দামও। লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সেই তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। বঁটি বানাতে আসা কাদের হোসেন বলেন, আগের চেয়ে দাম অনেক বেশি। আগে যে বঁটি বানাতাম ২০০-৩০০ টাকা সেটি এখন বানাতে লাগছে ৪০০-৫০০ টাকা। চাপাতি বানাতে আসা হাকিম মিয়া বলেন, কোরবানির জন্য চাপাতি বানাতে কামারের দোকানে এসেছি। আগে যে চাপাতি কিনতাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় সেই চাপাতি এখন নিজের লোহা দিয়ে বানিয়ে নিলাম ৬৫০ টাকা করে। কেজি প্রতি লোহা নিচ্ছে ৭০০ টাকা। সামি মিয়া বলেন, আগের চেয়ে দাম বেশি চাচ্ছে। নিজে লোহা দিলাম তার পরও মজুরি চায় ৩০০-৪০০ টাকা। দাম বেশি হলেও প্রয়োজন তাই কিনতে বাধ্য হচ্ছি।
বাসসের জয়পুরহাট জেলা সংবাদদাতার পাঠানো সংবাদের চিত্রটাও অনুরূপ: জয়পুরহাট জেলা শহরের নতুনহাট সড়কের কামারী প্রদীপ কর্মকার জানান, কোরবানির ঈদের সময় আমাদের কাজ বেড়ে যায়। বছরের অন্য সময় গুলোতে কাজ খুবই কম থাকে। পুরানো চাকু, দা, বটি ধার দেয়ার জন্য প্রকার ভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা লাগছে। নতুন দা, বটি, ছুড়ি , চাকু ও হাসুয়া প্রকার ভেদে ৩৫০ থেকে ৭৫০ পর্যন্ত বিক্রি করতে হচ্ছে। লোহার দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় খুব সীমিত লাভে এ গুলো বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে শুধু কোরবানির ঈদের বেচা-বিক্রি করে এ ব্যবসা টিকে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান কামারী সন্তোষ মহন্ত। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার বেচা-বিক্রি কিছুটা কম বলে জানালেন- কামার সুদেব কর্মকার। মাংশ কাটার জন্য ছুরি কিনতে আসা বিশ্বাসপাড়া এলাকার আবু বক্কর জানান, গরু জবাই করার জন্য ছুরি কিনতে এসেছি। ছুরি, চাকু, হাসুয়ার পাশাপাশি বাজারে মাংশ কাটার কাঠের গুড়িও বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়।